আবদুস (২৪), রাহিনুল (১৪) এবং শোহরাব (৮)। প্রত্যেকেই বাংলাদেশি নাগরিক এবং তিন জনেই মাসকিউলার ডিসট্রফি (যথোপযুক্ত পুষ্টির অভাব)-এর মতো কঠিন রোগে ভুগছেন। এই তিন রোগীর প্রতি মানবিকতার নিদর্শন দেখালো ভারতের বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া। তিন বাংলাদেশি রোগীকেই চিকিৎসার জন্য বিনা খরচে কলকাতা থেকে মুম্বাই পৌঁছে দিল ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিমান সংস্থাটি। এমনকি তিন রোগীর দেখভালের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত আরও তিন জনকে বিনা ভাড়ায় মুম্বাই নিয়ে যাওয়া হয়। একইসঙ্গে চিকিৎসা শেষে মুম্বাই থেকে কলকাতা ফেরার সময়েও ওই ছয়জনকে ভাড়া বাবদ একটি অর্থও বহন করতে হবে না বলে জানিয়েছে বিমান সংস্থাটি।
রবিবার বিমান সংস্থার তরফে এক বিবৃতি দিয়ে এই কথা জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এয়ার ইন্ডিয়ার ৭৭৩ ফ্লাইট। বিমানটিতে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে ছিলেন ওই ছয় বাংলাদেশি নাগরিকও। বিমান বন্দরের লাউঞ্জ থেকে বিশেষ হুইল চেয়ারে করে বিমানের দরজা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয় তিন বাংলাদেশি রোগীকে। তাদের যাতে কোনরকম অসুবিধা না হয় তা দেখার জন্য প্রত্যেকের সঙ্গেই ছিলেন বিমান সংস্থার কর্মীরা। এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মকর্তারাই ওই রোগীর পরিজনদের হাতে বোর্ডিং পাশ তুলে দেন।
জন্মের পর থেকেই আবদুস, রাহিনুল ও শোহরাব- এই তিন জনের চিকিৎসা চলতে থাকে। কিন্তু একটা সময় চিকিৎসা করাতে গিয়ে অর্থ সঙ্কটে পড়ে ওই তিনজনের পরিবার। এরপর নিজের সন্তানদের দূরারোগ্য রোগের হাত থেকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মার্সি কিলিং (নিষ্কৃতি মৃত্যু)-এর জন্য আর্জি জানান তাদের পরিজনেরা। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস! তিন সন্তানের এই করুণ কাহিনীর কথা জানতে পেরেই তাদের সহায়তা করতে এগিয়ে আসে মুম্বাই ভিত্তিক সংগঠন ‘মেডিটুরজ’। যারা এই ধরনের চিকিৎসা পরিসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। সঙ্গে পেয়ে যায় নবি মুম্বাই ভিত্তিক ব্রেন ও স্পাইন ইনস্টিটিউট ‘নিউরো জেন’। পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয় বিনামূল্যে চিকিৎসা করানোর কথা। যে রোগীরা একটা সময় বেঁচে থাকার সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়েছিল, তারাই যেন নতুন করে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পেল। খুশি তাদের পরিবারের লোকেরাও। এরপরই মুম্বাইয়ে এসে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেয় ওই তিন রোগীর পরিবার। সেইমতো দুই একদিন আগেই বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছায় তারা। এরপর আজ সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে মুম্বাই উড়ে যান।
বিশিষ্ট নিউরোসার্জেন অলোক শর্মা নিজেই তার হাসপাতাল নিউরো জেন- এ ওই তিন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করার আশ্বাস দেন। এরপর ওই তিন রোগীসহ তাদের পরিবারের লোকদের কলকাতা থেকে মুম্বাইয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার কাছেও একটি আর্জি পৌঁছায়। অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এয়ার ইন্ডিয়ার সিএমডি অশ্বিনী লোহানিও একমুহূর্ত দেরি না করে কলকাতা থেকে মুম্বাই পর্যন্ত নিখরচায় যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করেন।
নিউরো জেন’এর কর্মকর্তা ডা: অলোক শর্মা জানান ‘ওই তিন বাংলাদেশি রোগী ও তাদের পরিবারের লোকদের মুম্বাইয়ের নিউরোজেন-এ পৌঁছে দেওয়া এবং প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করার বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার এই মহানুভবতার জন্য আমি সত্যিই তাদের শুভেচ্ছা জানাই।
ভারতে চিকিৎসা করাতে আসার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের তরফেও ভিসা, ট্রাভেল ডকুমেন্টসহ বিভিন্ন নথি পেতে সহায়তা করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ