তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এগুলো কোনটাই তাকে যেন স্পর্শ করে না। চলন-বলনে আবহমান বাংলার নারীর প্রতিচ্ছবি। একজন মমতাময়ী মা। অনন্য এক নেতা তিনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা যেখানেই যান, সেখানেই নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে এমন কিছু একটা করেন যা জাতির জন্য চমক। পায়ের জুতা খুলে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে অনায়াসে সাগরের সৈকতে নেমে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখেন। চলতে ফিরতে পথেঘাটে ছোট্ট শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করেন। অবনত মস্তকে বয়োবৃদ্ধদের জড়িয়ে ধরেন। শীতের সকালে গ্রামের মেঠোপথে ভ্যান গাড়িতে ঘুরে বেড়ান। আবার বিদেশের মাটিতে ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বরফখেলায় মেতে ওঠেন।
এসবের পর এবার আজ নেত্রকোনায় গিয়ে সাধারণ রিক্সায় চড়ে বেড়ালেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি খালিয়াজুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে হেলিপ্যাড পর্যন্ত রিকশায় আসেন। অল্প সময়ের জন্য হলেও হাওরাঞ্চলে শেখ হাসিনার এ রিকশা ভ্রমণ বেশ আগ্রহের সঙ্গে দেখেছে কয়েক হাজার জনতা। পরে তিনি সেখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এসব চমকে দেয়ার ঘটনার ছবি তো চেপে রাখা যায় না। তাই বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। সম্প্রতি কক্সবাজার সফরে প্রধানমন্ত্রীর সমুদ্রের তীরে পা ভেজানোর ছবি ভাইরাল হয়। এবার বন্যাকবলিত হাওর অঞ্চল নেত্রকোনা সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রিকশায় চড়া একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। অনেকেই তার পছন্দের এই ছবিগুলো শেয়ার করছেন। এ যেন এক অন্যরকম নেতা।
৪৫ বছরে দেশে অনেক নেতাই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এমন ব্যাতিক্রম নেতৃত্ব দেশবাসী দেখেনি। নেতৃত্বে দৃঢ়তা, রাজনৈতিক কৌশলে দূরদর্শিতা সিদ্ধান্তে দৃঢ়চেতা এক ব্যক্তিত্ব। দলের নেতাদের কর্মকান্ডের দায়ভার কাঁধে তুলে নেন; আবার দৃঢ়তার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের নিজের কঠোর বার্তা দেন। এই হলো আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনায় পরিচয়। নেতাকর্মীদের শাসন-সোহাগ করা মা-মাটি-মানুষের নেত্রী। তাঁর দৃঢ়তাপূর্ণ ক্যারিশমাটিক কর্মযজ্ঞে নিন্দুকেরাও মোহিত হন; প্রতিপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। যাপিত জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। এই না হলে বঙ্গবন্ধুর কন্যা! তাঁর যাপিত জীবনের পরতে পরতে দেখার-বোঝার-শেখার-অনুসরণ-অনুকরণীয় অনেক কিছুই আছে। যা অনেক প্রবীন নেতার মধ্যে দেখা যায় না।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানান, প্রধানমন্ত্রী খালিয়াজুরী হাসপাতালের সামনে থেকে উপজেলা ডাকবাংলা পর্যন্ত আধা কিলোমিটারের মতো পথ রিকশায় করে আসেন। ডাকবাংলায় পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী রিকশাচালককে বকশিসও দিয়েছেন। তবে কত টাকা বকশিস দিয়েছেন তা বলতে পারেননি আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ক্রিম কালারের এবং লাল পাড়ের শাড়ি, চোখে সানগ্লাস পরে রিকশায় বসে আছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যরা রিকশার সামনে পেছনে থাকলেও আশপাশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা গেছে। একটি ছবিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী রিকশার ঠিক পেছনে দাঁড়ানো দেখা গেছে। অন্যদিকে নেত্রকোনার এই রিকশাচালকেও বেশ পরিপাটি দেখা গেছে। তরুণ এই রিকশাচালককে দেখা গেছে টি-শার্ট পরা, পরনে ছিল সাদা পাজামা। অন্য আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী রিক্সায় যাচ্ছেন দুইপাশে দাড়িয়ে মানুষজন সালাম দিচ্ছেন।
গত ২৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর ভ্যানচালক ছিলেন ওই এলাকার যুবক ইমাম হোসেন। পরে গণমাধ্যমের কাছে তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের চাকরি কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু লজ্জায় বলতে পারেননি। এই খবর চাউর হলে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ থেকে তাকে চাকরির ব্যবস্থা করেন। তবে এবার নেত্রকোনার এই রিকশাচালকের পরিচয় এবং তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো কথাবার্তা হয়েছে কি না সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
নেত্রকোনায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি নিজের চোখে আপনাদের দেখতে এসেছি। আপনারা হাওরের মানুষ, আমরা গোপালগঞ্জের বাওরের মানুষ। বন্যায় যেন আপনারা ক্ষতিগ্রস্থ না হন, তার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষ ভালো থাকে। কারণ দেশের কামার-কুমার-জেলে-কৃষকের কল্যাণ করা আওয়ামী লীগের নীতি। আমরা সবার কল্যাণের নীতি নিয়ে কাজ করছি বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, টুঙ্গিপাড়া যেতে ২৪ ঘণ্টা লাগতো। আমরা ধীরে ধীরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করছি। লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেকটা মানুষ যাতে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। সেদিক বিবেচনা করে শ্রমিক-কৃষক সবার কথাই ভাবছি। আর এ জন্যই বিশ্ব আজ আমাদের অভিনন্দন জানায়। শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশের কোনও উন্নতি করেনি। প্রতি রাতে ক্যু (সামরিক অভ্যুত্থান) হতো।
তিনি আরও বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। নৌকায় ভোট দিলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষ ভালো থাকে। এলাকার ছেলে-মেয়েরা যাতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্ত না হয় সেদিকে নজর দিতে সবাইকে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ডিজিটাল সেন্টার ও কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিচ্ছি। এরপরও তারা কেন এসব কাজে জড়াবে।
তিনি আরও বলেন, সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখুন। তারা যেন আমার মতো প্রধানমন্ত্রী হতে পারে। সেইভাবেই ছেলেমেয়েদের গড়ে তুলতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন