সারাদেশে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র স্মারক লিপি পেশ করা হয়েছে আজ রবিবার। স্মারকলিপিতে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও জনগণের দুর্ভোগ মোকাবিলায় ১২টি পরামর্শ দেওয়া হয় ।
স্মরকলিপিতে শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তা নয়, এই দুর্যোগ মোকাবিলায় অভিজ্ঞ গবেষক ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে ‘কোভিড-১৯ টাস্কফোর্স’ গঠন ও দেশীয় গবেষকদের এ সংক্রান্ত গবেষণায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা, করোনা শনাক্তের কিট উৎপাদন, প্রতিষেধক তৈরির গবেষণাকে উৎসাহ দেওয়া ও এজন্য বিশেষায়িত ল্যাবরেটরি তৈরির দাবি জানানো হয় । স্মারকলিপিতে বলা হয়, করোনা-সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় রোধে সরকারের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও মানবিক ব্যক্তিদের নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলায় কেন্দ্রে এবং তৃণমূলে ‘সমন্বয় কমিটি’ গঠন করে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা ও স্থানীয় উদ্যোগগুলো সমন্বয় করতে এবং সমগ্র দেশ ও দেশের মানুষের শক্তিকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে।
স্মারকলিপিতে করোনা সংক্রান্ত গুজব ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং হালনাগাদ বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করানো। করোনার সময় অন্যান্য রোগে আক্রান্ত জনগণও যাতে চিকিৎসা সেবা পায়, সেদিকে নজর দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
স্মারকলিপিতে, করোনা মহাবিপর্যয় থেকে দেশবাসীতে আপৎকালীন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, এই সব শক্তিকে নিয়ে পরামর্শ সভার আহ্বান, জাতীয় বাজেট পুনর্বিন্যস্ত করে করোনা-মহাবিপর্যয় মোকাবিলায় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ, এই বরাদ্দ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ, চিকিৎসকদের ও রোগীদের সুরক্ষা, সব উপজেলায় বিশেষায়িত ব্যবস্থা সম্পন্ন ‘টেস্টিং বুথ’ স্থাপন, দেশের প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে ‘বিশেষায়িত ল্যাব’ স্থাপন এবং এজন্য প্রশিক্ষিত জনবলের সংখ্যা বাড়ানো এবং শ্রমজীবী মানুষের জন্য বিনা খরচে করোনা পরীক্ষা, মৃত ব্যক্তির লাশ দ্রুত কবরস্থ /সৎকার করার উপযুক্ত ব্যবস্থার দাবি জানানো হয় ।
ক্ষুধার্ত ও অনাহারের আশঙ্কাসম্পন্ন পরিবারকে রেশনকার্ড প্রদান, আগামী ৩ মাস বিনামূল্যে তাদের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো, গার্মেন্টসহ সব শ্রমিক-কর্মচারীদের ১/২ মাসের ছুটি ও বেতন পৌঁছানোর দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে ।
স্মারকলিপিতে করোনা রোগী সম্পর্কে বিরূপ ধারণা দূর, সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা, কোভিড-১৯ রোগী ও অন্যান্য রোগীর চিকিৎসার জন্য আরও সুপরিকল্পিতভাবে হাসপাতালগুলোকে বিন্যস্ত করা, কোন রোগী কোথায় চিকিৎসা পাবেন তা জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার এবং কোভিড-১৯ রোগীর জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করার দাবি জানান হয়। এজন্য কম মৃত্যু হারের এবং দ্রুত নিয়ন্ত্রণকারী দেশগুলোতে প্রতিরোধের ও চিকিৎসার জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহ থেকে শিক্ষা নিয়ে তা প্রয়োগেরও আহ্বান জানানো হয় ।
সরকার ঘোষিত ‘প্রণোদনা’র সিংহভাগ অর্থ সরাসরি কৃষক, শ্রমজীবী, ক্ষুদ্র ও মধ্য বিনিয়োগকারীদের প্রদান, কৃষি ও কৃষক বাঁচানো, নির্ধারিত দামে খোদ কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়, প্রয়োজনে অস্থায়ী ফসল-সংরক্ষণাগার স্থাপন, ক্ষেতমজুরদের নিরাপত্তা, বীমা সুবিধা প্রদান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি সবজি চাষি, পোল্ট্রি, ডেইরি ও গবাদিপশু খামারীকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা সরাসরি সহায়তা প্রদান ও প্রকৃত কৃষক ও খামারীদের জন্য ২% সরল সুদে ঋণ এবং করোনা-মহাবিপর্যয়ে মানুষের বিপর্যস্ত পরিস্থিতির সুযোগে ফসল, গরু-ছাগল, জমি-জমা-সম্পত্তি স্বাভাবিক দামের চেয়ে কম দামে কিনে নেয়া (ডিসট্রেস সেইল) বেআইনি ঘোষণা ও তা কঠোরভাবে রোধের দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে ।
স্মারকলিপিতে, সম্মিলিত উদ্যোগে সারাদেশে প্রতিটি গ্রামে, এলাকায় ‘গ্রাম সুরক্ষা কমিটি’ গঠন, বরাদ্দের সবটুকু ‘উপযুক্ত পরিবার’এর প্রাপ্তি নিশ্চিত, আপৎকালীন মজুদ হিসেবে ‘জনভাণ্ডার’গড়ে তোলাসহ গ্রামের সব মানুষের সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান হয়। স্মারকলিপিতে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অসৎ ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাজার অস্থিতীশীল করে যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বৃদ্ধি করতে না পারে, তার জন্য কঠোর নজরদারী ও শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহনসহ টিসিবি’র কার্য়ক্রম সক্রিয় করার দাবি জানানো হয় ।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক