বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) বর্তমানে ২১১টি ফসল নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১৩১টি ফসলের হাইব্রিডসহ ৫৮৫টি উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিরোধী জাত এবং ৫৫১টি অন্যান্য উৎপাদন প্রযুক্তিসহ মোট ১ হাজার ১৩৬টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বারি’র বিজ্ঞানীরা। এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশে তেলবীজ, ডালশস্য, আলু, গম, সবজি, মসলা এবং ফল ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বুধবার বারি’র কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালা-২০২০’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠাণে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গাজীপুর মহানগরীতে বারি’র কাজী বদরুদ্দোজা মিলনায়তনে ৫ দিন ব্যাপী এ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক প্রধান অতিথি হিসেবে জুম প্লাটফর্ম অনলাইনে উপস্থিত থেকে কর্মশালাটির উদ্বোধন করেন।
এ বছর কর্মশালার মূল প্রতিপাদ্য ‘কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবেলায় পরিবেশ সুরক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন’। গত অর্থবছর যে সকল গবেষণা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল সেগুলোর মূল্যায়ন এবং এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী বছরের গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালার কারিগরি অধিবেশন ১৭-২১ অক্টোবর দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই বাছাই ও দেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কর্মসূচি গ্রহণ করাই এ কর্মশালার প্রধান উদ্দেশ্য।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক দিক-নির্দেশনায় কৃষিক্ষেত্রে আজ সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কৃষিতে আজ আর আগের মতো হাহাকার নেই। কৃষক ফসল উৎপাদনের জন্য তার প্রয়োজনীয় সব উপকরণ সময়মতো হাতে পেয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, কৃষির উন্নয়ন হলেই দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। আর এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি গত এক যুগ ধরে সরকার পরিচালনা করে যাচ্ছেন। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা কৃষিতে নতুন নতুন জাতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে চলেছে। তারই ফলশ্রুতিতে আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য আজ দৃশ্যমান। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সকলেই এর প্রশংসা করছে।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, দানা জাতীয় শস্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা। আর এটি করতে হলে কৃষির আধুনিকায়ন করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। বর্তমান সরকার কৃষি যান্ত্রিকরণের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ৫০% থেকে ৭০% ভর্তুকিতে কৃষকদেরকে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে। তিনি বারি উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন পিয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি পণ্যের আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
বারি’র মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জুম প্লাটফরম অনলাইনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)’র চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের এপিএ পুলের ড. মো. হামিদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বারি’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক (অব.) ও এমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম, সাফল্য ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার উপর সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন বারি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. মিয়ারুদ্দীন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) মো. হাবিবুর রহমান শেখ।
বারি’র মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম জানান, এই গবেষণা পর্যালোচনা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। আঞ্চলিক গবেষণা পর্যালোচনা, অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা ও কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা। প্রথমে আঞ্চলিক পরে অভ্যন্তরীণ ও সবশেষে কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালার মাধ্যমে গত বছরের গবেষণা কার্যাবলীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরবর্তী বছরের গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে যে কারণে এই কর্মশালার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন পর্যায়ের এই কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষক প্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আঞ্চলিক কৃষির সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং সেই আলোকে গবেষণা কার্যক্রম প্রণীত হয়। আঞ্চলিক গবেষণা পর্যালোচনা অঞ্চলভিত্তিক অনুষ্ঠিত হয়। অভ্যন্তরীণ ও কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা বারি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এপিএ পুলের সদস্যবৃন্দ, বারি’র অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালকবৃন্দ, পরিচালকবৃন্দ, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের স্টেকহোল্ডার তথা পলিসিমেকার, জনপ্রতিনিধি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নার্সভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিএডিসি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও কৃষিসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বারি’র বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞানী/কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা