২ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:১৭

কঠোর হুঁশিয়ারির পরও বিদ্রোহীর ছড়াছড়ি

প্রথম ধাপে ২৫ পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রের নির্দেশ মানছেন না অনেকে

রফিকুল ইসলাম রনি

কঠোর হুঁশিয়ারির পরও বিদ্রোহীর ছড়াছড়ি

ফাইল ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের এমপি হাসিবুর রহমান স্বপনের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন বিএনপি নেতা ও শাহজাদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম। নজরুলের আশা ছিল আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ‘এমপির কাছের লোক’ হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। শাহজাদপুর পৌরসভায় দলের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মনির আক্তার খান তরু লোদী। এতে মনোক্ষুণ হয়েছেন ক্ষমতার ‘স্বাদ’ নিতে আসা নজরুল ইসলাম। তাই দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে গতকাল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিজেকে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। শুধু শাহজাদপুরেই নয়, প্রথম ধাপে বেশ কয়েকটিতেই একই চিত্র। প্রথম ধাপের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন অন্য দল থেকে আসা ‘মৌসুমি পাখিরা’। তারা সরকারি দলের সুবিধা কিংবা ক্ষমতার স্বাদ নিতে আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও এবার মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। আবার কোথাও কোথাও মনোনয়নে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও আছে। আর্থিক সুবিধার কারণে তৃণমূল থেকে পাঠানো যোগ্য নেতাও মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। এমন নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়ার খোকসা, নেত্রকোনার মদনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। ২৫টি পৌরসভার মধ্যে কমপক্ষে ১৮টিতে অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি মহিববুর রহমান নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে মহিপুর থানায় প্রথম সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই দিন এমপির হাত ধরে মহিপুর থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি আনোয়ার হোসেন হাওলাদার আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পৌর নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালান। প্রত্যাশায় ছিলেন নৌকার মাঝি হয়ে পৌর মেয়র হবেন। কিন্তু এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান পৌর মেয়র ও কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল বারেক মোল্লা। হতাশা ও ক্ষোভ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হন জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে দল থেকে বহিষ্কারের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েও ঠেকানো যায়নি তাদের। তৃণমূলের মতামত, বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট আর কেন্দ্রীয় নেতাদের চুলচেরা বিশ্লেষণের পরও ক্ষমতাসীন দলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। দলীয় টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। প্রায় ১৮টি পৌরসভায় অর্ধশত বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে দলের পক্ষে কাজ করবেন বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আগেই ঘোষণা দিয়েছি, যারাই বিদ্রোহী প্রার্থী হবে, তাদেরকে দলের কোনো জায়গায় রাখা হবে না। আগামীতে কোনো নির্বাচনে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। সাংগঠনিক পদ-পদবিতে থাকলে বহিষ্কার করা হবে-এটাই চূড়ান্ত’।
একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বেলায় তূণমূলের মতামত উপেক্ষার অভিযোগ এনে মনোনয়নবঞ্চিত অনেক প্রার্থীই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন।

এই ক্ষোভ-অসন্তোষের জের ধরে কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি, তৃণমূল পর্যায়ে বিশাল সংগঠন ও ক্ষমতাসীন দল হিসেবে এমনিতেই দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীর সংখ্যাও ছিল বেশি। ফলে একক প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। অনেক জায়গায় গোপন ব্যালটের মাধ্যমে একক প্রার্থী বাছাই করতে হয়েছে। অবশ্য কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে চুলচেরা বিশ্লেষণের পর পৌরসভায় যোগ্য ও জয়লাভের সম্ভাবনা আছে- এমন প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক জনমত জরিপকে প্রাধান্য দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

পাবনার চাটমোহর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন সাখোকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা রেজাউল করিম দুলাল। রাজশাহীর পুটিয়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল রবি। রবিকে ঠেকাতে দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন, যুবলীগের নেতা গোলাম আজম নয়ন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম টিটু। কাটাখালী পৌরসভায় স্বস্তিতে নেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্বাস আলী। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দুজন। তারা হলেন পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সামা, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মোতালেব।

চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে প্রথমে মনোনয়ন পান এমপি সোলায়মান জোয়াদ্দারের ভাই রিয়াজুল কবির জোয়াদ্দার। পরে প্রার্থী পরিবর্তন করে মনোনয়ন দেওয়া হয় জাহাঙ্গীর আলম মালিককে। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরীফ হোসেন। কুড়িগ্রাম পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মো. কাজিউল ইসলাম। দলের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী হয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাজু। বরগুনার বেতাগী পৌরসভায় নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র এবিএম গোলাম কবির। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল হাসান মহসিন। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায়। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র খালেক মিয়া।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর