২৮ অক্টোবর, ২০২১ ২২:৩২

ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মান্ধ করার অপচেষ্টা এখনো অব্যাহত : হানিফ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মান্ধ করার অপচেষ্টা এখনো অব্যাহত : হানিফ

গোলটেবিল আলোচনা

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বাঙালি জাতির একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য ছিল, হাজার বছরের একটি অতীত আছে। গ্রাম  বাংলায় পল্লীগীতি, জারি সারি ও ভাটিয়ালি গান ছিল। কিন্তু বর্তমানে এসবের জায়গা দখল করে নিয়েছে ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল। এসব ধর্মীয় নেতাদের অধিকাংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিশেষ একটি মহলের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকে।

ভারতীয় উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির ইতিহাস তুলে ধরে এই নেতা বলেন, এই উপমহাদেশে যেমন হাজার বছরের হিন্দু-মুসলিমের সম্প্রীতির ইতিহাস আছে  তেমনি ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক সংঘাতেরই নজিরও আছে। অতীত থেকেই এসব ঘটনার পরেই সাম্প্রদায়িক শক্তি মূল ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা করে আসছে। ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মান্ধ করার অপচেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এসব অপচেষ্টা রুখে দিতেই শেখ হাসিনা সরকার শিক্ষার প্রসারের দিকে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। কারণ কেবল শিক্ষার আলোই পারে মানুষের মন থেকে কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সাম্প্রাদায়িক মনোভাব দূর করতে।    

বৃহস্পতিবার সকালে স্বাধীনতার সপক্ষের সংগঠন গৌরব’৭১ এর আয়োজনে ‘সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি এ কথা বলেন। 

ধর্মীয় নেতাদের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, ওয়াজ মাহফিলে স্রোতাদের আকৃষ্ট করার জন্য তারা নারীদের নিয়ে বিভিন্ন রকম সুড়সুড়িমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকে। এদের মূল লক্ষ্য কিন্তু সমাজের কোন উন্নতি সাধন করা নয়, মানুষের মেধা মননের উন্নয়নও তাদের উদ্দেশ্য নয়। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা। এরাই আমাদের সমাজের মানুষকে ধর্মান্ধতার বেড়াজালে আবদ্ধ করে রেখেছে। ধর্ম পালন নয়, উস্কানি দিয়ে ধর্মান্ধ একটি জাতি তৈরি করাই এদের মূল লক্ষ্য। মানুষের আবেগকে পুঁজি করে তারা রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করতে চায়। সরকারের এসব ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি আছে। এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ধর্মীয় শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িক ঘটনার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। তবে ইতিহাস কিন্তু তা বলে না। আমাদের দেশ তথা উপমহাদেশের এ ধরনের যত ইস্যু আছে, সবকিছুর মূলেই রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এমনকি ৭১ সালের পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীও বাঙালির স্বাধীনতা হরণ করতে শেষ অস্ত্র হিসেবে ধর্মকেই ব্যবহার করেছিল। সেই সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়েছে ৩০ লক্ষ তাজা প্রাণ, ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত সম্ভ্রম। 

হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেই সাম্প্রাদায়িকতা মোকাবেলা করেই আমরা স্বাধীন হয়েছি। জাতির পিতা আমাদের সেই চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও  ধর্ম নিরপেক্ষতার উপর ভিত্তি করেই স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পথে হাঁটছিলেন। ৭০ এর নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুই হয়েছিল এই চার মূলনীতির উপর ভিত্তি করে। কিন্তু ৭৫ এ সেই পরাজিত শক্তির হাতেই থেমে যায় বাঙালির সেই আগ্রযাত্রা।  

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘কুমিল্লার মন্দির হামলার দিনই আমি জানতাম এ কাজটি কোনো হিন্দু করেনি। কারণ বাস্তবের সাথে এটি মেলে না। তিনদিন পরে জানলাম ইকবাল নামে একজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যাকে এখন পাগল সাজানোর চেষ্টা হচ্ছে। সম্প্রতি জানলাম তাকে এ ঘটনা ঘটাবার জন্য যুক্তরাজ্য থেকে খুনি তারেক জিয়া নির্দেশ দিয়েছে। খুনি জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া। খুন তাদের রক্তের মধ্যে প্রবাহিত। দেশে ধর্মের নামে হাহাকার তৈরি করে এবং সেই সুযোগে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানকে বানাতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘যারা রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বলে দাবি করছে তারা সারারাত মদ পান করে। তারা কেউ ধর্মের ধারে কাছেও ছিলো না। এরশাদ, খুনি জিয়া ধর্মকে ব্যবহার করেছে। এরা একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি। তারা কেউ কোনোদিন স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। আজও চায় না। এখনও তাদের স্বপ্ন বাংলাদেশকে পাকিস্তানি রাষ্ট্র পরিণত করা। এই ব্যাপারে পাকিস্তান দূতাবাসও এক পায়ে খাড়া। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে পাকিস্তানের বেহায়া রাষ্ট্রদূত সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেছে। অথচ তারা একাত্তরের জন্য এখনো মাফ চায়নি, রাজাকার ফিরিয়ে দেয়নি ইমরান খানের লজ্জা হওয়া উচিত।’ এসময় তাদেরকে কঠোর নজরদারিতে রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘১৯৬৪ সালে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে শেখ মুজিব হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি সংখ্যালঘুদের বিপদে সবসময় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেসময়ে তিনি সারা ঢাকা শহর থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের ৩২ নম্বরে নিয়ে গেছেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব দিনের পর দিন রান্না করে তাদের খাইয়েছেন। নিরাপদ স্থানে রেখেছেন। সেই সাহস আওয়ামী লীগের কর্মীদের আছে কি-না? সে নৈতিক বল আওয়ামী লীগ পরিবারের আছে কি-না। এখন মানুষ সৎ না হয়ে স্বচ্ছল হচ্ছে। মানুষ আজ জ্ঞানী না হয়ে চালাক, ধূর্ত হচ্ছে। আজ মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। ধর্ম রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হলে সাম্প্রদায়িক পরিবেশ তৈরি হয়।  

তিনি আরও বলেন, ‘বিদায় হজে মহানবী (সা.) বলেছেন- তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি মদিনা সনদ ঘোষণা করেছেন, তার কাছে অন্য ধর্মের লোকজন বিচারের জন্য আসলো। তিনি তাদের বললেন- তোমরা তোমাদের ধর্মীয় আইনে বিচার করতে পারো। এর মাধ্যমে তিনি মদিনায় ধর্ম নিরপেক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন।’

গৌরব ৭১-এর সভাপতি মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় এই গোলটেবিল আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক উপসম্পাদক আমিনুল ইসলাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক নুজহাত চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতা জাহাঙ্গীর আলম, যুবলীগের সহসভাপতি কোহেলী কুদ্দুস, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম প্রমুখ।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর