রাজাকারদের আস্ফালন দেখার জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।
তিনি বলেন, রাজাকারদের কথায়, রাজাকারদের আস্ফালন সহ্য করে বাংলাদেশ চলবে ভাবার সুযোগ নেই। আমরা একাত্তরে রাজাকারদের পরাজিত করেছি। আগামীতে যদি একাত্তরের রাজাকার, প্রেতাত্মারা আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় তাদেরকে প্রতিহত করবো।
শনিবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রামের সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ মাঠে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, যারা বিএনপির নেতৃত্বে আছেন তাদের বেশিরভাগ রাজাকার পরিবারের সন্তান। এরা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে অথচ এদের বাপ-চাচার অনেকেই ছিলেন রাজাকার। রক্তে অর্জিত এই দেশকে আমরা পাকিস্তানের ইশারায় ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দিতে পারি না। সেটা এই দেশে হবে না। দেশকে পাকিস্তান বানানোর সেই স্বপ্ন বিএনপির দুঃস্বপ্ন হিসেবেই থাকবে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচন সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এর ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ নেই। জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। রাজাকারদের কথায় চলার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। রাজাকারদের ধমকে দেশ চলবে ভাবার সুযোগ নেই।
বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপি সরকারে পতনের ডাক দিচ্ছে। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে আমাদের বাঁধা নেই। আন্দোলন করেন কিন্তু আন্দোলনের নামে সহিংসতা, সংঘাত করে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইলে সরকার ছাড় দিবে না, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ছাড় দেবে না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজপথে যেকোনো অপরাজনীতি, সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করবে।
টানা ১৩ বছরে আওয়ামী লীগের হাত ধরে যে উন্নয়ন হয়েছে অতীতের কোনো সরকার তা করতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অথচ বিএনপি আজ কথায় কথায় সরকারের সমালোচনা করে। বাজেট পেশ করলেই বলে গরিব মারার বাজেট। প্রতি বছর দেশ নতুন লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার থেকে ২৯০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে বাংলাদেশ উন্নয়শীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত আয়ের বাংলাদেশ হবে।
সরকার মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে উন্নত রাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছে। এসব বিএনপি ভালো লাগে না এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) চায় বাংলাদেশের অর্থনীতি যাতে পাকিস্তানের চেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকে। অথচ সকল সূচকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। যে পাকিস্তান আমাদের শোষণ করেছিল তাদের রিজার্ভ মাত্র ১৬ বিলিয়ন ডলার। আর এতো দুর্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার।
বিএনপি-জামায়াত দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে এমন অভিযোগ করে হানিফ বলেন, ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত হত্যা, হরতালের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রায় বারবার আঘাত করেছে। তারা এখন আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মিথ্যাচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
দলের নেতা-কর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়া ও তার ছেলে খুনী, সন্ত্রাসী তারেক রহমানকে দেশ অস্থিতিশীল করার সুযোগ দেয়া যাবে না। জাতির পিতা ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহম্মদ, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত