গোপনে একাধিক বিয়ে করে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধর ও বটি দিয়ে কুপিয়ে জখমের অভিযোগের মামলায় এক পুলিশ সদস্যকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য হলেন, ডিএমপির পরিবহন বিভাগের কনস্টেবল মো. মনিরো হোসেন। তিনি রাজধানীর কদমতলী থানার মেরাজনগরের আব্দুর রহমানের ছেলে। দুই বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তাকে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেন দেওয়া হয়।
আজ রবিবার আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) মোছাম্মৎ রোকশানা বেগম হেপী। রায় ঘোষণা শেষে আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী মোসা. শিল্পী আক্তার। তিনি বলেন, মনিরো দীর্ঘদিন ধরে আমাকে নির্যাতন করেছে, যৌতুক দাবি করেছে। এছাড়া, গোপনে অন্যত্র বিয়ে করে আমার সংসার শেষ করেছে। আজ তার সাজা হওয়ায় আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৮ সালের ১৫ মার্চ এক লাখ টাকা মোহরানা ধার্য করে আসামি পুলিশ কনস্টেবল মনিরো হোসেনের সঙ্গে বাদী শিল্পী আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় মনিরো হোসেন তার স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে মারধর করেন। পরে বাদী তার মানসম্মানের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ স্বামী মনিরোকে ফেরত দেওয়ার শর্তে এক লাখ টাকা দেন। এ টাকা দিয়ে মনিরো তার ভাড়া বাসা থেকে অদূরে একটি রিকশা গ্যারেজ নির্মাণ করেন। এরপর বাদী ধার দেওয়া এক লাখ টাকা ফেরত চাইলে আসামি মনিরো আবারও মারধর করেন। এরপর প্রায়ই স্ত্রী শিল্পী আক্তারকে রেখে অন্যত্র রাত্রিযাপন করেন মনিরো হোসেন। এতে সন্দেহ সৃষ্টি হলে, শিল্পী আক্তার খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন যে, তার স্বামী মনিরো হোসেন শিউলি বেগম নামে এক নারীকে গোপনে বিয়ে করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর দ্বিতীয় বিয়ের কারণ জানতে চাইলে আসামি মনিরো তার স্ত্রী শিল্পীকে মারধর করে। পরে সেই বছরের ১৩ নভেম্বর মনিরো ও অন্যান্য আসামি তার পরিবারের সদস্যরা শিল্পী আক্তারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তবে বাদী যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে মনিরো তার স্ত্রী শিল্পীকে সেচ্ছায় তালাক দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলেন। কিন্তু স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে আসামি মনিরো বেধড়ক মারধর করেন শিল্পী আক্তারকে। একপর্যায়ে মনিরো হোসেন তার স্ত্রী শিল্পী আক্তারের মাথায় বটি দিয়ে কোপ মেরে জখম করেন। পরে রাজধানীর কদমতলী থানা পুলিশ এসে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিল্পী আক্তার বাদী হয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ)/৩০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। মামলার আসামিরা হলেন, ভুক্তভোগীর স্বামী মো. মনিরো হোসেন, শ্বশুর মো. আব্দুর রহমান, ননদ তানিয়া আক্তার ও ভাসুর নাসির হোসেন।
মামলার বিষয়ে তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম শাহীন। পরে ২০২০ সালের ৪ মার্চ আসামি মনিরোর বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন আদালত। এ সময় বাকি আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলার বিচার চলাকালে সাতজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।
বিডি প্রতিদিন/কেএ