জাতীয় বাজেটে আন্তর্জাতিক বাজার প্রসারে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা এবং বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতি সঞ্চার করতে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালুর তাগিদও দিয়েছেন তিনি।
কেমন বাজেট চান?- এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (সিসিসিআই) সভাপতি আগামী বাজেটে অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি তা যথাসময়ে বাস্তবায়নে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান। মাহবুবুল আলম সিসিসিআই সভাপতির দায়িত্বের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের সভাপতিও। এরই মধ্যে প্রাচ্যের ডান্ডি-খ্যাত খাতুনগঞ্জ বণিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। ছিলেন সিসিসিআইর একাধিক দফায় পরিচালক ও সহসভাপতি। তিনি বলেন, লোকাল এলসির ক্ষেত্রে ৫% উৎসে কর বাতিল করা, দ্বৈবচয়নের ক্ষেত্রে করদাতাদের হয়রানি লাঘব করা, একই পণ্যের ওপর একাধিকবার ভ্যাট আদায় বন্ধ করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত ট্যাঙ্ বা করাদি আরোপ না করা এবং আমদানিকৃত খুচরা যন্ত্রাংশের ওপর আরোপিত করাদি সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা এবং বাংলাদেশি জাহাজ মালিকদের বিদেশে সেবাপ্রদান করে ভাড়া, ফ্রেইট ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত আয় প্রপার চ্যানেলে দেশে আনার ক্ষেত্রে ৩% উৎসে কর প্রত্যাহারের তাগিদও দেন তিনি। মাহবুবুল আলম আসন্ন বাজেটে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের চার লেনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, মহেশখালীতে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদানের দাবি জানান। এ ছাড়াও তিনি চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্দেশিত কম্প্রেসার স্থাপন, মিরসরাইয়ে প্রায় ৬ হাজার ৬১৫ একর এবং আনোয়ারায় ৬১১ একর জায়গায় স্পেশাল ইকোনমিক জোন তৈরির কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করার বিষয়ে বাজেটে বিশেষ নির্দেশনা ও বরাদ্দ চান। মাহবুবুল আলম আগামী বাজেটে অর্থমন্ত্রী কর্তৃক মানবসম্পদ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণাকে 'সময়োপযোগী' এবং 'জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অর্থবহ' উল্লেখ করে বলেন, প্রতি বছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও কর্মসংস্থান হয় মাত্র ৭ লাখ মানুষের। ফলে ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বেকারের পরিমাণ ৬ কোটি হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ অবস্থায় আরএমজি, শিপিং, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং, টেঙ্টাইল, বায়িং হাউস ইত্যাদি সেক্টরে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশের এঙ্পার্টরা কাজ করছেন যাদের বেতন-ভাতা বাবদ বিশাল অঙ্কের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে বিদেশে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকের প্রচুর চাহিদা থাকলেও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও কার্যকর নীতিমালার অভাবে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে এবং কোনো কোনো দেশে শ্রমিক প্রেরণ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ও দেশীয় শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে সেক্টরওয়াইজ এঙ্পার্টাইজ তৈরি এবং বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন জরুরি। আগামী বাজেটে এর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ও আসন্ন বাজেটে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় বাজেট সম্পর্কে চিটাগাং চেম্বারের প্রস্তাবনা ও দাবিসমূহ যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হলে একটি সময়োপযোগী, ব্যবসাবান্ধব, অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনামূলক ও সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করেন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি। রপ্তানি বৃদ্ধিতে আসন্ন বাজেটে করণীয় সম্পর্কে চেম্বার সভাপতি বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ করতে হলে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের সম্ভাবনাময় শিল্প যেমন- সিরামিকস, চামড়া ও পাটজাত পণ্য, ওষুধ ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার প্রসারে সুনির্দিষ্ট মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।