ভারতের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন হলো- পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর কত দিন? শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, গোটা দেশের চায়ের টেবিল থেকে হেঁশেলের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘দিদি গেট’, ‘চিট গেট’, ‘সারদা গেট’- কেলেঙ্কারির মতো বিষয়গুলো। শুধু সাড়ে তিন বছরের ক্ষমতায়ই নয়, যিনি সর্বদা নিজেকে সততার প্রতীক বলে জাহির করে আসছেন তার দলের সাংসদ (রাজ্যসভা) কুনাল ঘোষ সিবিআই কোর্টে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন, দেশের প্রায় ৪০ লাখ আমানতকারীর টাকা লুট করেছে সারদা অ্যান্ড কোম্পানি। আর এই সারদা কোম্পানির মালিক সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতা ২০০৮ সাল থেকে। মমতা সর্বদা নিজেকে সততার প্রতীক বলে জাহির করলেও দেখা যাচ্ছে, তার মতো দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা-উত্তর পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতবর্ষে আসেনি। মাত্র দুই দিন আগে তার দলের সাংসদ কুনাল ঘোষ এই বোমাটি ফাটানোর পর তিনি ভুল বকতে শুরু করেছেন। শুধু ভুলই বকছেন না, রীতিমতো আক্রমণ করছেন মিডিয়াকে। অথচ, পশ্চিমবঙ্গের এই মিডিয়ার জন্যই তার উত্থান। কারণ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ধরার মধ্যে পড়ে না। তিনি প্রচার করেছিলেন আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেছেন। এখানেও তিনি শঠতার আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা গেছে, ওই নামে আমেরিকায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই নেই। তার জন্য পশ্চিমবঙ্গে সারদার আমানতকারী প্রায় দেড়শ লোক আত্মহত্যা করেছেন। আর এই মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়ে সারদা লাভবান হয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি রুপি। বিগত লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী সভায় এসে বলেছিলেন, ক্ষমতায় এসে তার প্রথম কাজ হবে মমতার আত্মদাম্ভিকতা ভেঙে দেওয়া। যদিও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে দিয়ে এই আর্থিক কেলেঙ্কারি তদন্ত করানোর জন্য শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সারা ভারতবর্ষে দাবি উঠেছিল। তখন মমতা ক্ষমতার জোরে সেই দাবি বার বার নস্যাৎ করেছিলেন। কিন্তু ভারতের শীর্ষ আদালত সিবিআই তদন্তের আদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, এতবড় আর্থিক কেলেঙ্কারির হোতা সে যত বড় নেতাই হোক, তাকে খুঁজে বের করতেই হবে। এই সিবিআই তদন্ত আটকানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি কোষাগার থেকে আইনজীবী নিয়োগ করে প্রায় ১৮ কোটি টাকা খরচ করেছেন। সিবিআই শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, ত্রিপুরা, আসাম, উড়িষ্যার মতো যেসব রাজ্যে সারদার চিট ফান্ডের ব্যবসা ছিল সেইসব এলাকায়ও তদন্ত চালিয়েছে। আর তদন্ত করতে গিয়ে তাদের হাতে এমন সব নথি এসেছে যা প্রকাশিত হলে গোটা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে মোদি যখন পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসেছিলেন তখন তিনি মমতাকে আক্রমণ করলে মমতা জবাবে তাকে ‘খুনি’ বলে পাল্টা আক্রমণ করেন। গলা চড়িয়ে বলেন, আমি ওকে দেখে নেব। মোদি জবাবে বলেছিলেন, দিদি আপনি তো আমাকে দেখতে হলে দড়ি দিয়ে বাঁধবেন। সেজন্য দড়ি কিনতে টেন্ডার ডাকবেন। সেই টেন্ডার দেবে সারদার সুদীপ্ত সেন। অফিসাররা সেই টেন্ডারে প্রশ্ন তুলবে। তখন আবার রিটেন্ডার ডাকবেন। এতসবের কী দরকার? আমি পশ্চিমবঙ্গে এসেছি। এখনই আমাকে ধরে জেলে পুরে দিন। ইতিমধ্যে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ কুনাল ঘোষ গ্রেফতার হয়েছেন। তৃণমূল সাংসদ ইমরান খান, মিঠুন চক্রবর্তী, অর্পিতা ঘোষ, সিনজয় বসুকে (টুম্পাই) সিবিআই ডেকে জেরা করেছে। তাদের থেকেও বেরিয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক গোপন তথ্য। তবে এক্ষেত্রে তদন্তে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে সিবিআই। ইতিমধ্যে সংস্থাটি সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছে, এই তদন্তের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সহযোগিতা করছে না। এদিকে কুনাল যে বোমা ফাটিয়েছেন তাতে তিনি বলেছেন, সুদীপ্ত সেনের সব ব্যবসার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। শুধু ওয়াকিবহালই নন, ২০০৯ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সুদীপ্ত মমতাকে কালিম্পং রেস্টহাউসে বসে বলেছিলেন, দিদি আপনাকে প্রধানমন্ত্রী বানাবোই। টাকার জন্য ভাববেন না। ওটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। কত কোটি রুপি লাগবে? ১০ হাজার কোটি? তা-ই তুলে দেব। কুনালের বিস্ফোরণ আর সিবিআই তদন্তের পরে মনে হচ্ছে দিদির বোধ হয় আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হলো না। অনেকেই বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। কিন্তু জনগণও দুর্নীতি মেনে নেয় না। ইউপিএ’র ১০ বছরের শাসনামলে তিনটি- কোলগেট, কমনওয়েলথ গেমস, টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির কথা উঠেছিল। এই তিনটি এখনো প্রমাণিত হয়নি কিন্তু জনগণ ইউপিএ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচনে জনমত পক্ষে টানতে বিরোধীরা এই তিনটি বিষয় বেশি প্রচার করেছিল। সেটা কাজেও লেগেছিল। এখন সেই দুর্নীতির ঢেউ গিয়ে লেগেছে তৃণমূল শিবিরে। পশ্চিমবঙ্গে খুব মজার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস বা বামপন্থিরা বিজেপিকে আটকাবে নাকি মমতার দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় নামবে। এখন শুধু বন্ধুবান্ধবই নয়, বাসে, ট্রামে উঠলে সবার একটাই প্রশ্ন- দিদি কবে ক্ষমতাচ্যুত হবেন। দিদিকে কবে গ্রেফতার করা হবে? ট্যাক্সি ড্রাইভাররা বলেন, ‘দিদি এতনা বড় চোর হ্যায়, উনকো কাব জেলমে ভেজেগা?’ গত সাড়ে তিন বছরে নিজের প্রচার ছাড়া রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কোনো কাজই করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সুদীপ্তর টাকায় পাঁচটি টিভি চ্যানেল আর ছয়টি কাগজ বের করেছেন। ছয়টির মধ্যে একটি হিন্দি, একটি উর্দু আর চারটি বাংলা। অসংখ্য ম্যাগাজিনও তিনি বের করেছেন।
যাক, সিবিআই এখন হিসাব গুটিয়ে নিচ্ছে। সিবিআই দিল্লি থেকে ৪০ জনের এক জবরদস্ত বাহিনী পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়েছে। তারা জবাবদিহি করবে সুপ্রিমকোর্টের কাছে। তাদের নিয়োগও করেছেন সুপ্রিমকোর্ট। কুনালের বিস্ফোরণের পর দিদির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য- ‘এটা ছোটখাটো ব্যাপার’। যখন চিট ফান্ড নিয়ে মিডিয়া প্রচার শুরু করে তখন দিদি একদিন প্রকাশ্য জনসভায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, কুনাল চোর? টুম্পাই চোর? মুকুল চোর? আমি চোর? এখন তো দেখা যাচ্ছে দিদির সেই ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যাচ্ছে। তিনি তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কুনালকে আটক করিয়েছিলেন তার মুখ আটকানোর জন্য। গত তিন-চার দিনে যেভাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য রাজনীতিতে একটার পর একটা মমতা সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসছে তা দেখে হতাশাগ্রস্ত বাঙালিরা প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে কি দুর্গাপূজার আগে দিদি যাবেন? সম্প্রতি কলকাতা এসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত সাহ। তিনি কলকাতায় এক বিশাল জনসভায় ঘোষণা করে গেছেন, ‘দিদি আপনাকে আর ছাড়া হবে না। এবার আপনাকে হাতের মুঠোয় পেয়েছি।’ অমিত সাহ সাধারণ রাজনীতিবিদ নন। তিনি মোদির খুব ঘনিষ্ঠ। তিনিও গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি যা বলবেন মোদি তা ফেলতে পারবেন না। মমতা এখনো বুঝতে পারছেন না তিনি কত বড় পাপ করে চলেছেন। তার পরিণামই বা কি? বাংলায় একটা কথা আছে- পাপ বাপকেও ছাড়ে না। যার জন্য শতাধিক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন তাদের জন্য মমতার কি একটুও মমতা নেই? শেষটা দেখতে আমাদের এ মাসের বাকি কটা দিন অন্তত অপেক্ষা করতে হবে। সিবিআই এ মাসের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টে প্রাথমিক রিপোর্ট দেবে। তারপর গঙ্গা দিয়ে কত জল গড়াবে তা হয়তো মমতার পশ্চিমী দোসররা ঠাহর করতে পারছেন না। তবে সেটা যে নেহাত কম হবে না তা হলফ করে বলা যায়।
শিরোনাম
- প্রাক-প্রাথমিকে ১৫০০ বিদ্যালয়ে স্মার্ট টিভি-ল্যাপটপ দেবে সরকার
- জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ
- দাবানলে জ্বলছে ইসরায়েল, হন্য হয়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা
- দেশব্যাপী শব্দদূষণবিরোধী অভিযানে ২৬৫ হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ
- তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
- পুঁজিবাজারে সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে
- গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই, হাসপাতালে ভর্তি ২৯
- দেশের রিজার্ভ বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার
- মুহুর্মুহু রকেট হামলায় বিপর্যস্ত মার্কিন রণতরী, বাধ্য হলো পিছু হটতে
- ছাত্রলীগের নির্যাতনের সহযোগী শিক্ষক-কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে ঢাবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ
- মিরাজের ঘূর্ণিতে তিনদিনেই জিতল বাংলাদেশ
- প্রিপেইড গ্যাস মিটার নিয়ে প্রতারণা এড়াতে তিতাসের সতর্কবার্তা
- শিল্পীদের মেধাসম্পদ সংরক্ষণে কাজ করছে সরকার : শিল্প উপদেষ্টা
- সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
- ১১৯তম প্রাইজ বন্ডের ড্র, প্রথম বিজয়ী নম্বর ০২৬৪২৫৫
- রাজধানীর উত্তরায় ঢাবির বাসে হামলা, গ্রেফতার ৫
- প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মামলার আবেদনকারীকে হুমকির অভিযোগ
- এক ঠিকানায় মিলবে সব ‘নাগরিক সেবা’
- এনসিপি কোনো নির্বাচনি জোটে যাবে না : নাহিদ
- দেশে শ্রমিক সমাজ সবচেয়ে অবহেলিত : রিজভী
কলকাতার চিঠি
পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে প্রশ্ন, মমতা আর কত দিন
সুখরঞ্জন দাশ গুপ্ত
অনলাইন ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর

সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিন ইসলাম তুহিনের মুক্তির দাবিতে নীলফামারীতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ
১৫ মিনিট আগে | দেশগ্রাম

গোবিপ্রবির এএসভিএম বিভাগের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি
১ ঘণ্টা আগে | দেশগ্রাম