২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৩:৩৪

শেখ হাসিনার দর্শন অনুধাবনে সীমাবদ্ধতা: পরিণত নেতৃত্ব, অপরিণত জনগণ!

মোহাম্মদ এ. আরাফাত

শেখ হাসিনার দর্শন অনুধাবনে সীমাবদ্ধতা: পরিণত নেতৃত্ব, অপরিণত জনগণ!

চলমান সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের প্রেক্ষিতে জনমনে যে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে আমি মনে করি তা খুব স্বাভাবিক হলেও অপরিণত। আমার মতে, এসব ঠুনকো প্রতিক্রিয়া। চটকদার কিছু কথাবার্তা শুনে আমরা অস্থির হয়ে যাই। অথচ কতকিছু যে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে, গণমাধ্যমে না এলে তা বুঝেই না মানুষ। দুর্নীতি দমনের জন্য ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ যেভাবে দেশের কোণায় কোণায় গিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এসব তো গণমাধ্যমে আসে না। এলেও পত্রিকার এক কোণার মধ্যে ছোট্ট একটা নিউজ থাকে, তা নিয়ে আলোচনা নেই। আমরা আলোচনায় ঝড় তুলি বালিশ-পর্দার দুর্নীতি নিয়ে। অথচ এই দুর্নীতিগুলো নিয়ে সরকারের যে আ্যকশন হয় সেগুলো নিয়ে কোন খবর নাই, আলোচনাও নাই। লক্ষ লক্ষ উন্নয়ন কাজে ২ শতাংশ দুর্নীতি হলে মানুষ এটাকে শতভাগ কাজে দুর্নীতি হচ্ছে বলে মনে করে! আশ্চর্য নয় কি বিষয়টা? এখন যুবলীগের নেতাকে গ্রেফতার করা নিয়ে বিরাট আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। অথচ, আমরা যদি শেখ হাসিনাকে বুঝতাম তাহলে আমরা আগে থেকেই অনুমান করতে পারতাম কি হতে যাচ্ছে। এগুলো সব শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন বুঝতে না পারার ফসল। 

যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মতোই প্রতিটি সরকারের ব্যবস্থাপনার একটা সামর্থ্য বা ক্যাপাসিটি থাকে। এই সামর্থ্য বা ক্যাপাসিটি কখনও অসীম বা আনলিমিটেড হয় না। সামর্থ্য বা ক্যাপাসিটির বাইরে গিয়ে সব কাজ এক সাথে শুরু করলে কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হয় না বরং সরকার বিপাকে পড়ে এবং দেশে আরও সমস্যার সৃষ্টি হয়। 

আওয়ামী লীগ সরকার  ২০০৯ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গত দশ-এগারো বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ সরকার সব কাজই কিন্তু প্রথম দিন থেকেই শুরু করতে পারেনি। ধাপে ধাপে এগিয়েছে। এই দীর্ঘ ১০/১১ বছরে আওয়ামী লীগ কিন্তু বসে ছিল না। 

গত দশ বছরে আওয়ামী লীগ একটির পর একটি বড় বড় অতীতের সমস্যার সমাধান করেই চলেছে। শুরুতেই আওয়ামী লীগ সরকারকে বিশাল বিপদে ফেলানো হলো পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। সরকারের যখন মাত্র দুই মাস বয়স তখনই ঘটলো বিডিআর হত্যাজজ্ঞ। পরবর্তিতে, যুদ্ধাপরাধের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার, জঙ্গি দমন, বিদ্যুৎ খাতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নেয়া এরকম বহুবিধ সমস্যার সমাধান একের পর এক আওয়ামী লীগ সরকার করেই চলেছে। এখন আমরা এগুলো সব ভুলেই গেছি। আর ভুলে গেছি বলেই প্রতিটি বিষয়ের সমাধানই গত ১০ বছরেই হয়ে গেল না কেন, এমন বোকার মতো প্রশ্ন তুলি। ভাবটা এমন যে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা এবং সামর্থ্য বা ক্যাপাসিটি অসীম, সবকিছুর সমাধানই যেন একই সাথে করে ফেলবে এই সরকার। অথচ আমরা নিজের জীবনেও কি তা করতে পারি? কথা বলার আগে মাথা টা একটু খাটিয়ে দেখি না আমরা। 

শেখ হাসিনার দর্শনটা বুঝতে হবে আমাদের। তার দর্শন একটা ঘটনাকেন্দ্রিক দর্শন নয়, এটা একটা পূর্ণাঙ্গ ‘প্যাকেজ’।  তিনি দেশকে একটা রূপান্তর তথা ট্রান্সফরমেশনের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এটা যে তিনি করছেন, তা আমরা বুঝতে পারছি না। হুট করে একটা ঘটনা ঘটলে আমরা লাফালাফি শুরু করে দেই। না জানি কী হয়ে গেল। এদেশে বিভিন্ন রকমের সমস্যা ছিল। সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, আইনের শাসনের অভাব ছিল। তা থেকে শেখ হাসিনা একটু একটু করে বের করে নিয়ে আসছেন দেশকে। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এখন যে কার্যক্রম দেখছেন, ভবিষ্যতে আরও দেখতে থাকবেন। কী দেখা যাবে ভবিষ্যতে? ভবিষ্যতেই তা আমরা দেখতে পাবো।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা 

সর্বশেষ খবর