শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৫টায় আবারো বেজে ওঠে মলিনার ফোন। এবারে মেলেনি লাট্টুর কন্ঠ। সফিক নাকে একজন বললেন,‘গাড়ি এক্সিডেন্টে লাট্টু নিহত হয়েছেন’। স্বামীর মৃত্যু সংবাদ শুনে গগণ বিদারি চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারান মলিনা। কিছুক্ষণ পরে ফোন বেজে ওঠে লাট্টুর মায়ের। জানানো হয় একই সংবাদ। আজ শনিবার ভোরে এই খবর পাওয়ার পর থেকে লাট্টুর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। লাট্টুর সংসারে কোন সন্তান নেই। স্ত্রী, মা ও এক ভাই রয়েছে তার।
আবুল হাসান ওরফে লাট্টু ফকির(৫০)। পিতা মৃত আব্দুল আজিজ ফকির। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বাদুরতলা গ্রামের বাসিন্দা। সংসারে খুব একটা অভাব না থাকলেও বিভিন্ন কারণে কয়েক লাখ টাকার দেনা হয়ে যান তিনি। দায়-দেনা মেটাতে এক সময় বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পাওরাদারকে কিছু বুঝতে না দিয়ে গত ২৩ মার্চ সৌদি আরবে চলে যান। লক্ষ্য ছিলো বিদেশে ভালো আয় করে দায় মেটানোর। কিন্তু তা আর কপালে সয়নি। মাত্র ২১দিনের মাথায় প্রাণ গেল সড়ক দুর্ঘটনায়।
এই দু:সংবাদের মাত্র ৫ঘন্টা পূর্বে (১৪এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টায়) স্ত্রী মলিনা খানমের সাথে শেষ কথা হয় লাট্টুর। বলেছিলেন, ‘আমি নতুন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। ওখানে ৩ মাস কাজ করবো। আমার জন্য দোয়া করো’।
বিষয়টি জানার জন্য শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় ০০৯৬৬৫৭৭২৭১৫৮৫ নম্বরে ফোন করা হলে লাট্টুর সহকর্মী পরিচয়দানকারী কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার সফিক বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় ওই গাড়িতে আমিও ছিলাম। আমরা ৬জন নতুন একটি কাজে যোগদানের জন্য আল কাছিম জেলা থেকে জেদ্দা যাবার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত লাট্টুর মৃতদেহ এখন আলরাজ হাসপাতালে রয়েছে। সৌদি পুলিশ বিষয়টি তদারকী করছে’। সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোন তথ্য জানা যায়নি।
আবুল হাসান ওরফে লাট্টুর স্বজনেরা জানান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নিকট থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে দায়গ্রস্থ হয়ে পড়েন লাট্টু। এই দায় থেকে মুক্তি পেতে মোটা বেতনে চাকরির আশায় মাত্র ২১দিন পূর্বে প্রায় ৬লাখ টাকা ব্যয় করে সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ