ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম মাসের শেষ শুক্রবার যথারীতি অনুষ্ঠিত হলো 'সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক 'র মাসিক ৯৮ তম সাহিত্য আসর। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। আসর শরু হয় গোলাম মোস্তফার আবৃত্তির মাধ্যমে। এছাড়া আরো আবৃত্তি করেন আবীর আলমগীর, জুঁই ইসলাম ও মমতাজ সুমি।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি তমিজ উদ্দীন লোদী, কবি কাজী আতীক, ঠিকানা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোঃ ফজলুর রহমান, কবি হুসাইন কবির, সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ, কবি শামস আল মমীন, অধ্যাপিকা হুসনে আরা, লেখক আদনান সৈয়দ, ও বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের।
কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, নারী-নদী-আকাশ-চাঁদ নিয়ে শুধু কবিতা নয়, কবিতা হয় দ্রোহ নিয়েও। নিরীহ কবিতা রাজানুগ্রহ লাভ করেছে যেমন তেমনি দ্রোহের কবিতা পড়েছে রাজরোষে। রাজস্তুতির আনুকূল্যে একসময় রাজকবিও নিয়োগ হতো।
তিনি এ প্রসঙ্গে টেড হিউজ ও সিলভিয়া প্লাথের কথা উল্লেখ করেন। তিনি লুইজি পিরানদেল্লো ও মুসোলিনির সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কবিতায় দ্রোহ যখন আসে তখন রাজরোষে পড়ে নিগ্রহ এমনকি হত্যারও শিকার হয়েছেন কবিরা। সুতরাং কবিতা নিরীহ থাকলো কই?
তিনি ফেদেরিকো লোরকা, মলোয়সি সহ নেরুদা , নাজিম হিকমত ,মাহমুদ দারবিশ , নজরুল , সুকান্ত ,সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ কবিদের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিদ্রোহ, বিপ্লব এসেছে তাদের কবিতায়। তিনি হেলাল হাফিজ ও রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের কবিতায়ও বিদ্রোহ পাওয়া যায়।
কবি কাজী আতীক তার নিজের কবিতা পাঠ করার আগে বলেন, আজ যাদের কবিতা শুনেছি সবাই নিজের গঠন থেকে বের হতে চেয়েছেন, যা সত্যি প্রশংসনীয়। এটি নিয়মিত ও আন্তরিক চর্চার ফসল।
কবি হুসাইন কবির বলেন, অনেকের লেখার চমৎকার উত্তরণ হয়েছে। ভীষণ ভাল লাগছে। এই আয়োজনের ভেতর দিয়ে দেখা হবে বাংলা সাহিত্যের কোন উজ্জ্বল নক্ষত্রের।
কবি শামস আল মমীন বলেন, কবিকে উপদেশ দেওয়া ঠিক না। কবি সৃজনের মানুষ। লেখালেখির জন্য নিজের মধ্যে উপলব্ধি তৈরি করতে হবে এবং পড়তে হবে।
সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ বলেন, কবি-সাহিত্যেকদের আমি প্রাণ খুলে ভালবাসি। প্রবাস থেকে কেউ বই বের করবে আগে তা ভাবাই যেত না। এখানে কবি-সাহিত্যিকদের চোখেই পড়তো না। নিউইয়র্কে বাঙালি কবি সাহিত্যিকদের দীর্ঘদিন ধরে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে সাহিত্য একাডেমি। এর জন্য সাহিত্য একাডেমিকে ধন্যবাদ।
এ বছর যাঁদের নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে তাদের সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখক আদনান সৈয়দ বলেন, বই সাধারণত আর্থিক মূল্যে দামী কোন পণ্য নয়। বই কিনতে কাউকে হিমশিম খেতে হয় না। বই পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। লিখতে হলে পড়ার কোন বিকল্প নেই।
এবারের আসরে স্বরচিত ছড়া, কবিতা, হাইকু পাঠ করে শুনান দলিলুর রহমান, বেনজির শিকদার, ইশতিয়াক রুপু, লুৎফা শাহানা, মনিজা রহমান, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, শাম্মী আক্তার হ্যাপি, মিশুক সেলিম, আহমদ হোসেন বাবু, মামুন জামিল, শাহ আলম দুলাল, সবিতা দাস, মাসুম আহমাদ, আনোয়ার সেলিম, মাকসুদা আহম্মেদ, আবদুস শহীদ, কামরুন নাহার রীতা এবং পলি শাহীনা।
কবি শামসুর রহমানের উপর কবি শহীদ কাদরীর লেখা একটি লেখা পাঠ করে শুনান কবি পত্নী নীরা কাদরী।
বিডি প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ