গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কলাগাছের শহীদ মিনার এখনো তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে নামে মাত্র। যদিও আগের মতো এখন আর কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানাতে অভ্যস্ত নয় বর্তমান তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা। ডিজিটাল এন্ড্রয়েড ভার্সন এর যুগে নামে মাত্র জানে এখনকার শিক্ষার্থীরা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানানোর কথা। এক যুগ আগেও বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জের স্কুলগুলোতে কলাগাছ দিয়ে তৈরি করা হত শহীদ মিনার।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পরবর্তীতে সিমেন্ট, রড, কংক্রিটের ঢালাইকৃত তৈরি হয় শহীদ মিনার। ঠিকই পরিবর্তন এসেছে কিন্তু আগের যে ঐতিহ্য উৎসাহ নিয়ে কাজ করতো সেটি কিছুটা প্রবাহিত হয়েছে। যেমন আগে ২১ ফেব্রুয়ারির কদিন আগেই পরিকল্পনা থাকতো কিভাবে একুশের অনুষ্ঠানকে সুন্দর করা যায় এবং কিভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে আরো আকর্ষণ করা যায়। আর এটি বাস্তবায়ন করতেই ২০ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার বড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যেবিরতি বা টিফিন টাইমে শহীদ মিনার তৈরির জন্য যা যা সরঞ্জাম লাগতো তা বাড়ি থেকে নিয়ে আসতাম যেমন আঞ্চলিক ভাষায় কোদাল, পাতি, বল, কাছি। আর স্কুলের পাশে বাড়ি হওয়ার সুবাদে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হতো আমাকে। অনেক স্টুডেন্ট দূর-দূরান্ত থেকে আসার ফলে তাদের সবকিছু আনা সম্ভব হত না।
স্কুল ছুটি শেষ হলে নেমে পড়তাম কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরির কাজে। এর আগে শহীদ মিনার আশপাশ পরিষ্কার-পরিছন্ন করা হত এবং কলাগাছের শহীদ মিনার আশপাশ মাটি দিয়ে ভরাট করে এক ফুট সমান উঁচু করা হত। এই কাজের জন্য শুধু ছেলে বন্ধুরা নয় মেয়েরাও আমাদেরকে সহযোগিতা করতো।বিদ্যালয়ের অন্যপাশ থেকে মাটি কেটে এনে মিনারের অংশ রাখতাম আর মেয়ে বন্ধুরা সেগুলো মাড়াই করে সমান করে দিতো। পরবর্তীতে আমরা কলসি দিয়ে পানি এনে দিতাম মিনার অংশে আর সে গুলোকে মিনারের আশপাশে অংশে ছিটিয়ে পরিবেশ সুন্দর করে গুছিয়ে দিতো মেয়ে বন্ধুরা। এই কাজ সাময়িকভাবে শেষ হলেও পরবর্তীতে চিন্তা থাকতো কলাগাছ কিভাবে সংগ্রহ করা যায়। সন্ধ্যার আগেই মেয়েরা তাদের বাড়িতে চলে যেত কিন্তু আমাদের ছেলেদের চিন্তা থাকতো কিভাবে কোন জায়গা থেকে কলাগাছ সংগ্রহ করা যায়।
তারপর আমরা ছেলে বন্ধুরা রাতে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যেতাম একদল স্কুলের সীমানায়, আর অন্যরা কলাগাছের খোঁজে বাড়ি বাড়ি সন্ধান করতাম। এর মধ্যে কিছু শিক্ষার্থীর বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা হতো কলাগাছ গুলোকে। পরে সেগুলো কেটে এনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রেখে শহীদ মিনারে অংশে এনে নির্দিষ্ট অংশ কেটে অবশিষ্ট অংশে ফেলে দিতাম। তারপর নির্দিষ্ট অংশে রেখে তিনটি কলাগাছ স্থাপন করে উপরের অংশটির নিচের বাঁকা করে দিতাম। তারপর ঝিলমিল কাগজ দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে আঠা দিয়ে লাগিয়ে প্রতীকী শহীদ মিনার তৈরি করা হত। এভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হতো, যদিও বর্তমান সময়ে এটি আসলে অনুভূতি বা অনুভব করা বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কিছু। পরবর্তীতে সকাল বেলা কলাগাছ দিয়ে তৈরি করা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতো শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্তরে নেতৃবৃন্দ।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ