জর্জিয়ার দুই সিনেট আসনের ফলাফলের ওপর অভিবাসী তথা খেঁটে খাওয়া আমেরিকানদের ভাগ্য নির্ভর করছে। ৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিশেষ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইউএস সিনেটে বর্তমানে রিপাবলিকান-৫০ এবং ডেমক্র্যাট-৪৮ আসনে অধিষ্ঠিত। এই দুটিতে ডেমক্র্যাটরা জয় পেলেই কংগ্রেসের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে যেহেতু ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসের ভোটও গণ্য হবে এবং জো বাইডেনের পক্ষে নির্বাচনী অঙ্গিকার (যদি আন্তরিক অর্থে তা করতে চান) পূরণ করা সহজ হবে।
বিশেষ করে অ-আমেরিকান তথা অভিবাসী-বিরোধী যেসব পদক্ষেপ ডোনাল্ড ট্রাম্প নিয়েছেন, সেগুলো পাল্টে দিতে সক্ষম হবেন। উল্লেখ্য, জর্জিয়া স্টেটের দুটি আসনই রিপাবলিকানদের ছিল। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে কেউই ৫০% এর বেশী পাননি। এজন্যে ‘রানঅফ’ নির্বাচন হচ্ছে দুই পার্টির চার প্রার্থীর মধ্যে। এরা হলেন রিপাবলিকান ডেভিড পারড্যু এবং কেলি লোয়েফলার। অপরদিকে ডেমক্র্যাট জন অসোফ এবং ড. রাফায়েল ওয়ারনক। চারজনই ভোটারের দ্বারে দ্বারে গেছেন করোনা সত্বেও। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মত বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেঞ্চেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সমাবেশ করেছেন।
৩ নভেম্বরের নির্বাচনের মত ইউএস সিনেটে এই দুই আসনের নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম এবং তা ভোটারের মধ্যেও সাড়া জাগিয়েছে। সাধারণ নির্বাচনের মত এই নির্বাচনেও আগাম ভোটে রেকর্ডসংখ্যক ভোটার ব্যালটে অংশ নিয়েছেন। তরুণ ভোটারের সিংহভাগ ডেমক্র্যাট এবং এশিয়ান-আমেরিকানের ৮৫% এরও অধিক হলেন ডেমক্র্যাট। এসব পর্যালোচনার ভিত্তিতে ওয়াশিংটন পোস্টের পর নিউইয়র্ক টাইমস গত সপ্তাহে বিশাল এক প্রতিবেদনে ‘প্রেসিডেন্ট পদে জো বাইডেনের বিজয়ের পথ-পরিক্রমায় ইউএস সিনেটে এ দুটি আসনেও ডেমক্র্যাটদের বিজয়ে বিশেষ ভ’মিকা রাখবে এশিয়ানরা’-এমন অভিমত পোষণ করেছে। কৃষ্ণাঙ্গ এবং এশিয়ান-আমেরিকানদের ভোটের রাজনীতিতে বিশেষভাবে উজ্জীবিত করার ক্রেডিট দেয়া হয়েছে কমলা হ্যারিসকে। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তাকে মনোনীত করার পরই ট্রাম্পের পরাজয়ের ব্যাপারটি বাইডেন নিশ্চিত করতে সক্ষম হন বলেও মন্তব্য রয়েছে প্রতিবেদনদ্বয়ে। কমলা হ্যারিস ডেমক্র্যাটিক পার্টির ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবার মধ্যদিয়ে যে ইতিহাস তৈরী করেছিলেন, তার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত গড়েছেন জয়ের মুকুট ছিনিয়ে নিয়ে। কারণ, তিনিই হবেন প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম ইন্ডিয়ান ও কৃষ্ণাঙ্গ।
জর্জিয়া স্টেট পার্লামেন্টে প্রথম মুসলমান সিনেটর শেখ রহমান মঙ্গলবারের নির্বাচনে ডেমক্র্যাটদের বিজয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদি। তিনিও শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকায় ভোট প্রার্থনা করছেন।
রবিবার রাতে প্রত্যন্ত একটি এলাকা থেকে ফেরার সময় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার যদি ভোটারের উপস্থিতি বেশী না ঘটে, তবে আমাদের বিজয় নিশ্চিত। কারণ, আগাম ভোট এবং ডাকযোগে প্রেরিত ভোটে ডেমক্র্যাটরা এগিয়ে রয়েছি।’
বাংলাদেশী-আমেরিকান শেখ রহমান আরো উল্লেখ করলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবেই রিপাবলিকানরা ভোটের দিন অধিক সোচ্চার হচ্ছেন। সেটি ডেমক্র্যাটদের জন্যে ভয়ের একটি কারণ। তবে তরুণ ভোটারের সংখ্যা বাড়ায় আগের চেয়ে আমরা অনেক বেশী স্বাচ্ছন্দবোধ করছি। সেটি আমাদের মূল শক্তি।’
‘কমলা হ্যারিসের কারণে দক্ষিণ এশিয়ানরা যেভাবে সোচ্চার রয়েছেন, সেই ঢেউয়ে বাংলাদেশী-আমেরিকানরা একেবারেই চলতে সক্ষম হচ্ছেন না। তারা জুম মিটিং আর টেবিল-টকে ব্যস্ত। এমনকি নতুন ভোটার রেজিস্ট্রেশনেও বাংলাদেশীরা তেমন ভূমিকা রাখতে সক্ষম হননি। এটি খুবই হতাশার ব্যাপার। আমি প্রবাসীদের প্রতি আকুল আহবান রাখছি যারা ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তারা যেন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন। যাকে যোগ্য মনে হয় তাকে দিতে আহবান জানানোর সময় শুধু উল্লেখ করতে চাই যে, জো বাইডেনের কাছে থেকে অভিবাসীদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে ডেমক্র্যাটদের বিজয় দিন’-বলেছেন সিনেটর রহমান।
উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের ১৪ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত আগাম ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে অংশ নেন ২০ লাখ ৭২ হাজার ৯৪৮ জন ভোটার। এ সময়ে ডাকযোগে প্রেরণ করা হয় আরো ৯ লাখ ২৮ হাজার ৬৯টি ব্যালট। অর্থাৎ মোট ৩০ লাখ এক হাজার ১৭ জন ভোটাধিকার প্রদান করেছেন। আগাম ভোটের ক্ষেত্রে এটি রেকর্ড বলে জর্জিয়া প্রশাসন উল্লেখ করেছে।
এ প্রসঙ্গে সিনেটর শেখ রহমান জানান, ডাকযোগে আরো ১৫ হাজারের মত ব্যালট পথে রয়েছে। যেগুলো ৫ জানুয়ারির মধ্যে ( ক্ষেত্রবিশেষে ৮ জানুয়ারি ) নির্বাচন কর্মকর্তাগণের হাতে পৌঁছবে। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে মোট ৪৯ লাখ ভোটার অংশ নিয়েছিলেন। মনে করা হচ্ছে এই বিশেষ নির্বাচনে সে সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে। তবে রিপাবলিকান পার্টির বিবেকসম্পন্ন ভোটারের একটি অংশ নির্জীব হয়ে পড়েছেন ট্রাম্পের উল্টা-পাল্টা কথাবার্তা এবং সর্বশেষ ৩ নভেম্বরের ভোটের হিসাব পাল্টাতে জর্জিয়া স্টেট-সেক্রেটারির সাথে টেলিফোন-সংলাপ ফাঁস হবার পরিপ্রেক্ষিতে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ জানুয়ারি জর্জিয়ার সেক্রেটারি ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে ফোন করেন। তাঁদের দীর্ঘ ফোনালাপের অডিও প্রথমে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এবং পরে সিএনএন প্রকাশ করলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ১১৭৮০ ভোট কোনোভাবে খুঁজে বের করার জন্য বারবার বলছেন বলে ফোনালাপে শোনা যায়। উল্লেখ্য, নানা অজুহাতে তিনবার ভোট গণনা করা হয়েছে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর। সবগুলোতেই জো বাইডেনের জয় এসেছে। সে অনুযায়ী রিপাবলিকান স্টেট গভর্ণর, স্টেট সেক্রেটারি এবং নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভোটের আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেটও দিয়েছেন। ইলেক্টরাল কলেজের ভোটের রেজাল্টও কংগ্রেসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনি অবস্থায় দলীয় স্টেট সেক্রেটারিকে ভোটের ফলাফল পাল্টে ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণার ‘আবদার’-এ সকলেই হতভম্ব। এর জের পড়তে পারে মঙ্গলবারের ব্যালট-যুদ্ধেও।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল