২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১০:১৯

কঠিন পরীক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

কঠিন পরীক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল

যুক্তরাষ্ট্রের ২৩২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফা ইমপিচমেন্টের ট্রায়াল শুরু হলো। এ নিয়ে মোট চারবার ইউএস সিনেটে ইমপিচের বিচারের ঘটনা ঘটছে। আর এক মেয়াদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই এটি দ্বিতীয় ট্রায়াল। অফিস থেকে বিদায়ের পর আর কোন প্রেডিন্টের বিরুদ্ধে এমন ট্রায়াল হয়নি। প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া ইমপিচমেন্টের আর্টিক্যালের কপি (ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উসকানি দেয়া) সোমবার সন্ধ্যায় সিনেটে পেশ করেন প্রতিনিধি পরিষদের ৯ সদস্য (ইমপিচমেন্ট ম্যানেজার)। এ সময় স্পিকার ন্যান্সি পেলসীর স্বাক্ষরিত কপিটি উপস্থাপন করেন ইমপিচমেন্ট ম্যানেজার কংগ্রেসম্যান (ম্যারিল্যান্ড-ডেমক্র্যাট) জেমী রাসকিন। ৯ ফেব্রুয়ারি বিচার শুরুর আগে অভিযুক্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পাঠানো হবে সেই কপি। এরপর ট্রাম্প তার মতামত জানাবেন সিনেটে। একইসাথে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে আইনজীবী নিযুুক্তির তথ্য জানাবেন ট্রাম্প। সেই আইনজীবীরাও অভিযোগের কপি পড়বেন এবং ট্রায়ালে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দেবেন। এই বিচারে সিনেটের ১০০ সদস্যই থাকবেন জুরি হিসেবে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস’র সভাপতিত্ব করার কথা। কিন্তু আরো জরুরী কাজে ব্যস্ত থাকায় সিনেটর (ভারমন্ট-ডেমক্র্যাট)প্যাটিক লিহাই সভাপতিত্ব করবেন বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে।  

উল্লেখ্য, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার জন্যে ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের উভয়কক্ষের অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্পের লেলিয়ে দেয়া জঙ্গিরা ক্যাপিটল হিলে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে একজন পুলিশ অফিসারসহ ৫ জন নিহত হন। জঙ্গিরা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ফাঁসিতে ঝুলানোর স্লোগান দেয় এবং স্পিকার পেলসীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। নির্বাচনে বাইডেনের বিজয়ের ফলাফল পাল্টে দেয়ার দাবিতে ঐ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। 

এই বিচার নিয়ে আশংকা প্রকাশকালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবারই সিএনএনকে বলেছেন যে, রিপাবলিকান পার্টির ১৭ সিনেটরের সমর্থন পাওয়া কঠিন হবে। তাই ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার ব্যাপারটি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে ক্যাপিটল হিলের হামলার ভিকটিম রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটররাও ছিলেন। সে কারণে শেষ মুহূর্তে ১৭ জনের বেশী সিনেটরও ডেমক্র্যাটদের পাশে আসতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। অর্থাৎ ৫০ ডেমক্র্যাট আর ১৭ রিপাবলিকান হলেই দুই তৃতীয়াংশ ভোটে ট্রাম্প ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। রক্ষা পাবে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানটি। হুমকিতে থাকবে না সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ব্যাপারটি। কারণ, ট্রাম্পকে ভবিষ্যতের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা সম্ভব হবে দোষী সাব্যস্ত হলেই। অন্যথায় সে ২০২৪ সালের নির্বাচনে মাঠে নামলে তাকে ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে বলেও অনেকের ধারণা।  

সিনেটের লিডার চাক শ্যুমার এবং সংখ্যালঘিষ্ট দল রিপাবলিকান লিডার মিচ ম্যাককনেল ঠিক করবেন বিচারের রোডম্যাপ। সাক্ষী গ্রহণ করতে কতসময়, সাক্ষীদের জিজ্ঞাবাদের জন্যে কত সময় ধার্য করা হবে সেটিও তারাই নির্ধারণ করবেন। ঐ জঙ্গি হামলার ভিকটিম যেহেতু কংগ্রেসম্যান ও সিনেটররাই, তাই বাইরের সাক্ষীর আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা সেটিও আলোচনায় রয়েছে। টিভি ফুটেজ এবং আইফোনের ভিডিও হচ্ছে সাক্ষীগণের প্রধান অবলম্বন। বিচারের সময় ট্রাম্পকে উপস্থিত থাকার নোটিশ নিয়েও কথা বলবেন সিনেটে দুই পার্টির দুই নেতা। ৮ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত ইমপিচমেন্ট ম্যানেজার এবং ট্রাম্পের আইনজীবীরাও পরস্পরের সাথে কথা বলবেন। 

উল্লেখ্য, ১৩ মাস আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম ইমপিচমেন্টের ট্রায়াল সমাপ্ত হয় তিন সপ্তাহের মধ্যে। এ ট্রায়ালের জুরিরা শপথ নিচ্ছেন মঙ্গলবার। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে উদ্বোধনী যুক্তি-তর্ক। ট্রাম্পের সমর্থকরা যুক্তির অবতারণা করবেন যে, হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায় নেয়া কোন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এধরনের বিচারের অবকাশ নেই। অতীতের নজির প্রদর্শন করবেন ডেমক্র্যাটরা। এই বিচারের মধ্যদিয়ে রিপাবলিকান পার্টিতে ট্রাম্পের অবস্থান জানা যাবে। ট্রাম্পের মত একজন মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান একটি রাজনৈতিক দল কীভাবে বিবেচনা করছে-তাও বিবেকসম্পন্ন আমেরিকানসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব অবলোকনে সক্ষম হবে। অর্থাৎ এই বিচারের মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিও ব্যাপারটি উদ্ভাসিত হবে। এ বিচারের সময় ট্রাম্পের জঙ্গিরা যাতে আবারো কোন হাঙ্গামার সুযোগ না পায়, সেজন্যে ন্যাশনাল গার্ডের ৭ হাজার সদস্যকে মার্চ পর্যন্ত ক্যাপিটল হিলের নিরাপত্তায় রাখা হচ্ছে। 

৫৭% আমেরিকানই ট্রাম্পকে চান না

পুনরায় যাতে ফেডারেল কোন পদে অধিষ্ঠিত হবার সুযোগ ট্রাম্প না পায় সে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছেন ৫৭% আমেরিকান। ইমপিচমেন্টের বিচার প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপ হিসেবে প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া রেজুলেশনের কপি সোমবার সন্ধ্যায় সিনেটে পেশ করার প্রাক্কালে মনমাউথ ইউনিভার্সিটি পরিচালিত জরিপে এই মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। সিনেটের বিচারে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেই ভবিষ্যতে তিনি আর প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারবেন না। এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেক সুযোগ-সুবিধা হারাবেন। এই জরিপে অংশ নেয়াদের ৪১% ট্রাম্পকে অভিশংসনের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। ২% কোন মতামত দেননি। জরিপে অংশ নেয়া রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকের মধ্যে মাত্র ১৯% ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। পক্ষান্তরে ডেমক্র্যাটিক পার্টির ৯০% চেয়েছেন ট্রাম্পকে চিরতরে রাজনীতি-প্রশাসনে নিষিদ্ধ করতে। ৭৮% রিপাবলিকান এমন ইমপিচের বিপক্ষে মত দিয়েছেন।  

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর