একাত্তরের ১ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে নিউইয়র্কে ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’র স্মরণে ৬ মে শুক্রবার একই অডিটরিয়ামে ‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্ট’-এ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া কোন গান থাকবে না। দু’ঘন্টাব্যাপী এ কনসার্টে জর্জ হ্যারিসন কিংবা পন্ডিত রবিশংকরের স্বজনেরাও আসছেন না। তবে এই কনসার্টে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী কাদেরী কিবরিয়ার কণ্ঠে।
কনসার্ট আয়োজনের সর্বশেষ পরিস্থিতির আলোকে গত ৪ মে বুধবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কনসার্টের আয়োজক ‘হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ’। এসময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, এই কনসার্টের জন্যে বাংলাদেশ সরকার বরাদ্ধ করেছে ১০ কোটি টাকা। এর বাইরে স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ওয়াল্টন, সিটি গ্রুপ, আবুল খায়ের স্টিল (একেএস), ইউনাইটেড গ্রুপ, বিকাশ, দারাজ এবং এডিএন। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে একমাত্র বিটিভি।
প্রতিমন্ত্রী পলক এ সময় বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, নিউইয়র্কের কোন টেলিভিশন অথবা পত্রিকা এ কনসার্টের মিডিয়া পার্টনার নয়। এতদসত্ত্বেও যারা প্রচারণা চালিয়েছেন কিংবা ঢাকার কোন মহল যদি ঐ প্রচারণায় জড়িত থাকেন তাহলে অবশ্যই তার বা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন, গরিব দেশসমূহের শিশুদের সাইবার নিরাপত্তায় সহায়তার তহবিল গঠনকল্পে এই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। টিকিট বিক্রির হিসাব পাওয়ার পর তহবিলের পরিমাণও জানানো হবে সংবাদ সম্মেলন করেই।
সংবাদ সম্মেলনের ভূমিকা বক্তব্যে এই কনসার্ট নিয়ে প্রবাসে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, সেজন্য প্রতিমন্ত্রী বিনয়ের সাথে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নানাবিধ জটিলতায় কনসার্ট হচ্ছে কি হচ্ছে না- এমন একটি পরিস্থিতিতে আমরা আবর্তিত হচ্ছিলাম। এমনকি ঢাকার শিল্পী গোষ্ঠি ‘চিরকুট’র সদস্যরাও দু’দিন আগে ভিসা পেয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিখ্যাত রকস্টার গ্রুপ জার্মানীর ‘স্কোরপিনোস’ বাংলাদেশ নিয়ে কোন গান গাইবে না। তাদেরকে আনা হয়েছে কনসার্টের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের অভিপ্রায়ে। তবে চিরকুট বাংলাদেশ ভিত্তিক সঙ্গীত পরিবেশন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, প্রবাসের বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিষ্ঠিত লেখক-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-বিশিষ্টজনকে ফ্রি টিকেট দেয়া হচ্ছে। দলীয় লোকজনও পাচ্ছেন। ৪ মে পর্যন্ত টিকিট বিক্রি ও বিতরণ হয়েছে মাত্র ৪ হাজারের মত। অথচ ঐ অডিটরিয়ামের আসন ১৪ হাজারের বেশি। সংবাদ সম্মেলন থেকে কনসার্ট নিয়ে সীমাহীন নিরবতা কিংবা গোপনীয়তা অবলম্বন করায় প্রবাসীরা আগে কিছুই জানতে পারেননি। শেষ মুহূর্তে কনসার্টের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করায় এমন নাজুক অবস্থা তৈরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, কনসার্টের জন্যে একাধিক মন্ত্রী, এমপি এবং বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এসেছেন, তবে সে সংখ্যা কোনভাবে ২০ জনের বেশি হবে না। আরো কয়েকজন এসেছেন নিজ খরচে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন কন্সাল জেনারেল ড. মুনিরুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চাঁদপুর-২ এর এমপি নুরুল আমিন, সংসদ সদস্য অপরাজিত হক, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের এমডি বিকর্ণ কুমার ঘোষ।
অদম্য গতিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার দূরদর্শিতাপূর্ণ নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ ধ্যান-ধারণার জন্যে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রশংসা করেন প্রতিমন্ত্রী। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের অবিস্মরণীয় সহযোগিতার কথাও অকপটে স্বীকার করেন তিনি।
পলক বলেন, এক সময়ে কৃষি নির্ভর অর্থনীতি এখন জ্ঞান-নির্ভর আর প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ায় বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের গন্ডি পেরিয়ে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত হবার স্বপ্ন দেখছে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক