২২ মার্চ, ২০২৩ ১৩:৩১

বানোয়াট রিপোর্টে আমেরিকার ক্রেডিবিলিটি ক্ষুণ্ণ হয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

বানোয়াট রিপোর্টে আমেরিকার ক্রেডিবিলিটি ক্ষুণ্ণ হয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন এবং ইউএসবিসিআইয়ের নেতৃবৃন্দের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন। ছবি বাংলাদেশ প্রতিদিন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন বলেছেন, পুরোটা দেখার বা পড়ার সুযোগ হয়নি। সেটি অনেক দীর্ঘ। তবে যেটুকু দেখেছি সেখানে অনেক চমক আছে। যদি এগুলো ফ্যাক্ট বেসড বা কারেক্ট তথ্য থাকতো এবং অবজেক্টিভ হতো, তাহলে রিপোর্টটি আমাদের কাজে লাগতো। আমরা সংশোধনের পদক্ষেপ নিতে পারতাম। কিন্তু যদ্দুর দেখেছি তাতে মনে হলো এটি বাস্তবতার সাথে কোনই মিল নেই। পুরোটাই ব্যক্তিগত সাবজেক্টিভ জাজমেন্ট। সেখানে অনেকগুলো কন্ট্রোভার্সিয়্যাল ইস্যু আছে যেগুলোর কোনো অর্থ নেই। এ অবস্থায় ঐ রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু বলাও সমীচিন হবে না। 

মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, রিপোর্টটি স্বচ্ছ হয়নি। অবজেক্টিভ হয়নি। এরফলে এই রিপোর্ট আমাদের কোনো উপকারে আসবে না। এটি একতরফা, একপেশে রিপোর্ট হয়েছে বলে মনে করা হয়। 

এই রিপোর্টের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিবাদ কী বাংলাদেশ জানাচ্ছে? জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয়ই জানাবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজই একটি বক্তব্য দেবেন ঢাকা থেকে। তবে রিপোর্টটি খুবই দু:খজনক এজন্যে যে, এতবড় একটি প্রতিষ্ঠান (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) এটি তৈরী করলো যার ক্রেডিবিলিটি নিয়ে সন্দেহ হবে। 

আগের মতোই ঢালাও অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে কিছু লোকের মদদে যারা লাগাতার বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত-এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, আমি এটি গ্রহণ করতে পারি না। কিছু লোক হয়তো তাদের ভুল তথ্য দিতে পারে। তবে আমেরিকার সরকার অতো অপরিপক্ক নয় যে, ভুল তথ্যের ভিত্তিতেই তারা একটি রিপোর্ট তৈরী করবে। তারা যথেষ্ঠ পরিপক্ক সরকার। তারা বিষয়গুলো বিবেচনা করে তার পরিপ্রেক্ষিতেই তারা রিপোর্ট তৈরী করে। তবে হ্যাঁ, এটাও দু:খের বিষয় আমেরিকা অনেক সময় এমন রিপোর্ট দিয়েছে, যেগুলো আমরা বিশ্বাস করেছি, পরবর্তীতে সেসব নিয়ে বিস্তারিত তদন্তে উদঘাটিত হয় যে তা ডাহা মিথ্যা। 
 
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, আমি আশা করবো আগামীতে বাংলাদেশ সম্পর্কে যখন তারা কোন রিপোর্ট দেবে তখন তারা নিজেদের সোর্স সার্সিং করে এমন রিপোর্ট দেবে যাতে আমরা তা বিশ্বাস করতে পারি। যেমন মনে করেন ওরা আমাদের ডিএসএ সম্পর্কে একটি রিপোর্ট দিয়েছিল, এবং সেখানে বলেছিল যে কোন কোন ক্ষেত্রে তার এ্যাবিউজ হয়েছে। আমরা তা পরীক্ষা করে দেখেছি। কোন কোন ক্ষেত্রে কিছুটা এ্যাবিউজ হয়েছিল, আমরা তা সংশোধনের পদক্ষেপ নিয়েছি। তাই অবজেক্টিভ রিপোর্ট হলো তা সবসময়ই আমাদের জন্যে ভালো হয়। আর বানোয়াট রিপোর্ট হলে তা খুব দু:খজনক, এটি কোন কাজে লাগে না। আর আমেরিকার যে সম্মান, যে ক্রেডিবিলিটি তা ক্ষুণ্ণ হয়। আমরা আশা করবো তারা এই কাজটি করবেন না।

‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাক্টিসেস: বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটি সোমবার প্রকাশের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যন্থনী ব্লিংকেন গণমাধ্যমের মুখোমুখীও হন। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। তাদের দাবি, নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ভর্তি, বিরোধী দলের এজেন্ট এবং ভোটারদের ভয় দেখানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে পর্যবেক্ষকদের কাছে ওই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলে বিবেচিত হয়নি। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি বা নির্বিচারে হত্যা, গুম, নির্যাতন, কারাগারের অবস্থা, নির্বিচারে গ্রেফতার বা আটক, রাজনৈতিক বন্দি, কোনও ব্যক্তির অপরাধের জন্য পরিবারের সদস্যদের শাস্তি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, সাংবাদিকদের অযৌক্তিক ভাবে গ্রেফতার বা বিচার, মতপ্রকাশ সীমিত করার জন্য ফৌজদারি মানহানি আইন কার্যকর, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং মিডিয়ার ওপর বিধিনিষেধ, ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা; শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া ধর্মীয় স্বাধীনতা, ‘শরণার্থীদের’ চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ, যৌন সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা, শিশু-বাল্য-জোরপূর্বক বিবাহ এবং এই ধরনের সহিংসতার জন্য তদন্ত ও জবাবদিহিতার অভাব, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ওপর সরকারি বিধিনিষেধ বা হয়রানি, শিশুশ্রম, স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর নানা বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন বিষয় এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের ডালি মেলানো হয়েছে তার ভিত্তি হচ্ছে কিছু এনজিও। ঐসব এনজিওর কাছে পাওয়া তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঐ রিপোর্টে। 

যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা রয়েছে এবং এখানে অধিকাংশ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো পাঁচ বছরের মেয়াদে জয়লাভ করে।

এদিকে, নিউইয়র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সাথে মঙ্গলবার বিকেলে এক বৈঠকে মিলিত হন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখা এবং ইউএসবিসিসিআইয়ের নেতৃবৃন্দ। তারা সমসাময়িক নানা ইস্যুতে মতবিনিময় করেন। এ সময় আসছে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালে তিনদিনের একটি ট্রেড শো’ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন। নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া, কম্যুনিকেশন্স ডাইরেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, ভাইস প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার ভূইয়া, নির্বাহী সদস্য ইলিয়াস খান, ইউএসবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট লিটন আহমেদ, এক্সপো স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা সাগর, কো-চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান সুজন এবং আবু নাফে খান। 

 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর