২৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০

বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স, রাজা তৃতীয় চার্লসের ফ্রান্স সফর স্থগিত

গ্রেফতার ৪৫৭ জন, প্যারিসের রাস্তাতে ৯০৩টি অগ্নিসংযোগ, বোর্দো টাউন হলে আগুন

মোসাদ্দেক হোসেন সাইফুল, ফ্রান্স

বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স, রাজা তৃতীয় চার্লসের ফ্রান্স সফর স্থগিত

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধে ফ্রান্সে নিরাপত্তা বাহিনী সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। দেশজুড়ে লাগাতার প্রতিবাদ ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে ফ্রান্স।এদিকে পেনশনের বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অনড় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। প্রতিবাদে ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ, ধর্মঘট, রাস্তা অবরোধ অব্যাহত রেখেছে বিক্ষোভকারীরা।

অন্যদিকে, চলমান বিক্ষোভের কারণে রাষ্ট্রীয় সফর স্থগিত করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। শুক্রবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আগামী রবিবার (২৬ মার্চ) প্যারিস এবং বোর্দোতে যাওয়ার কথা ছিল ব্রিটিশ রাজার। এ দুটি শহরেই অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আগামী মঙ্গলবার আবারও রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। আর এ বিষয়টি বিবেচনা করে রাজা তৃতীয় চার্লসের সফর স্থগিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ফ্রান্সজুড়ে ধর্মঘট পালন করেছে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো। অধিকাংশ বড় বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু প্যারিসসহ বেশ কিছু শহরে প্রতিবাদ সহিংস হয়ে ওঠে। ৯ম দিনের এ বিক্ষোভে ১০ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ট্রেড ইউনিয়নগুলো বলছে, প্রতিবাদে সামিল হয়েছে ৩৫ লাখ মানুষ। সরকারের প্রস্তাবিত অবসর নীতির বিরুদ্ধে তিন মাসের বিক্ষোভের মধ্যে এটি সহিংসতার সবচেয়ে বড় ঘটনা।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ পার্লামেন্টে বলেছেন, পেনশন সংস্কার জরুরি এবং দেশের স্বার্থে তা করা হচ্ছে। ইউরোপের অনেক দেশেই অবসরের বয়স ৬৫। ওই দেশগুলো আবার অবসরের বয়স আরও বাড়াতে চাইছে।

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৪৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ৪৪১ জন সদস্য আহত হয়েছে। বেশকিছু শহরে দাঙ্গা পুলিশের ছোঁড়া স্টান গ্রেনেডে আহত হয়েছে বেশ কিছু বিক্ষোভকারীও।

রাজধানী প্যারিসের রাস্তাতেই ৯০৩টি অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন।
প্যারিসে পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রতিবাদকারীরা পাথর ছোঁড়ে। পুলিশও লাঠি চালায় এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে।

এদিন বিক্ষোভের সময় বহু জায়গায় অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বোর্দো শহরের বিক্ষোভকারীরা ঐতিহাসিক অষ্টাদশ শতাব্দীর  সিটি হলের প্রবেশপথে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাতে ঐতিহাসিক হেরিটেজ ভবনের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।

তবে দমকল বাহিনী কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের মাত্র কয়েক মিনিট আগে টাউন হল থেকে বের হয়েছিলেন শহরের মেয়র। তিনি বলেন, ‘পুরো বোর্দো শহরের প্রাণকেন্দ্র এই টাউন হলে যে কেউ হামলা চালাতে পারে সেটা দেখে আমি গভীরভাবে মর্মাহত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।’

প্রধানমন্ত্রী এলিসাবেথ বর্ন এক টুইটে লিখেছেন, ‘বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং ভিন্ন মত পোষণ নাগরিকের অধিকার। কিন্তু যেসব সহিংসতা এবং জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি আমরা প্রত্যক্ষ করছি তা গ্রহণযোগ্য ন। পুলিশ এবং উদ্ধারকারী বাহিনী যাদের মোতায়েন করা হয়েছে তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই।’

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর