মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তোনি ব্লিঙ্কেন বলেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নিষ্ঠুর আচরণে দেশটির প্রতি ৫ জনের একজন পুষ্টিহীনতার শিকার হয়েছে। একইকারণে বাস্তচ্যুত ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গারও নিজ ভূমিতে ফেরা সম্ভব হচ্ছে না। এসব রোহিঙ্গার জন্য বরাদ্দ কমাতে কমাতে দৈনিক মাথাপিছু মাত্র ২৭ সেন্টে (২৯ টাকা) এসেছে। অর্থাৎ তারাও বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে নিদারুণ এক পরিস্থিতিতে নিপতিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দফতরে নিরাপত্তা পরিষদের সভায় বক্তব্যকালে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, একদিকে ক্ষুধা, আরেকদিকে যুদ্ধজনিত পরিস্থিতি গোটা বিশ্বের শতাধিক দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা এবং সুদানে দাঙ্গা-হাঙ্গামার কারণে বিশ্বের ১১ কোটি ৭০ লক্ষাধিক মানুষ চরম দারিদ্র্যতে নিপতিত হয়েছে। রাশিয়া তার আগ্রাসী তৎপরতাকে ফলপ্রসূ করতে ইদানিং খাদ্যকে মারণাস্ত্রে পরিণত করেছে-যা যুদ্ধাপরাধের সামিল।যুদ্ধ ও নানাবিধ কারণে অস্থিরতায় নিপতিত বিশ্বের পরিস্থিতিতে বিচলিত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি করোনা মহামারির রেশ না কাটতেই ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট চরমে উঠেছে। এহেন পরিস্থিতিতে বিত্তশালীরা যদি সরব না হই তাহলে ইউক্রেন, সুদান, ইয়েমেন, বুর্কিনা ফাসো, সাউথ সুদান, সোমালিয়ায চরম দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখা দেবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভেবে দেখুন, খাদ্যাভাবে কত শিশু, কত নারী, কত পরিবারের অভিভাবক অকালে মারা যাবে। তারা হতে পারে আপনার পুত্র, আপনার কন্যা। তাই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করে সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এ যাবৎ খাদ্যাভাব এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় নিপতিত দেশসমূহে যুক্তরাষ্ট্র ১৭.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। ২০২১ এবং ২০২২ সালে এই নিরাপত্তা পরিষদকে আমরা ক্ষুধা ও সংঘাত নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছি। গত বছরের খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আমরা সভাপতিত্ব করেছি। সেখানে অংশগ্রহণকারী ৩ ডজনের অধিক রাষ্ট্রের সাথে আমরা খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে গ্লোবাল রোডম্যাপ ঘোষণার উদ্যোগ নেই। যারা অভাবে নিপতিত তাদের মধ্যে দ্রুত খাদ্য সরবরাহের অঙ্গীকারও করেছি। এবং ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তাকে সুসংহত করার অভিপ্রায়ে ঐক্যমত পোষণ করেছি। এ যাবৎ ওই ঐক্যমতের সাথে শতাধিক রাষ্ট্র সংহতি ঘোষণা করেছে। অনেকেই সত্যিকার অর্থে সেই অঙ্গীকারের পরিপূরক পদক্ষেপও গ্রহণের কথা ভাবছি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই কাউন্সিলের দায়িত্ব হচ্ছে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সুরক্ষার। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে আমরা শান্তি ও নিরাপত্তা সুরক্ষার দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবো না। তাই সকলকেই একযোগে মনোনিবেশ করতে হবে।
অ্যান্তোনি ব্লিঙ্কেন বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ৫ বছর আগে এই কাউন্সিলে ২৪১৭ নম্বরের একটি রেজ্যুলেশন পাশ হয়েছে। সে অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী চরম খাদ্যাভাব দেখা দেয়ার মত পরিস্থিতি কেউ তৈরি করলে তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। আজ সময় এসেছে সেই চেতনায় কাজ করার। যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় ৯০টি দেশ একটি প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছে যেখানে দুর্ভিক্ষাবস্থার অবসানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার রয়েছে। এবং যারা দুর্ভিক্ষ, ক্ষুধা এবং খাদ্যকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে তাদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ব্যাপারে সকলকে সোচ্চার হতে হবে। এই রেজ্যুলেশনের সাথে অবশিষ্ট রাষ্ট্রকেও একমত হবার আহ্বান জানাচ্ছি।
অ্যান্তোনি ব্লিঙ্কেন বলেন, গত বছর খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে গৃহীত কর্মসূচিতে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পরিকল্পনার অর্ধেকই অর্থাৎ ৭.২ বিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য গত বছর যে ধরনের দুর্ভিক্ষাবস্থার আশঙ্কা করা হয়েছিল তা থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এ বছর বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ১৭ কোটি ১০ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণের অভিপ্রায়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত মাত্র ৪.৫ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে সংস্থাটি। অর্থাৎ পরিকল্পনার মাত্র ১৮% পাওয়া গেছে। অর্থ না পেলে তার খেসারত দিতে হবে বড় একটি জনগোষ্ঠীকে। ক্ষুদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের সহযোগিতাকে আমরা স্বাগত জানালেও বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশসমূহকে বড় অংকের অর্থ নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছি।
যেসব সদস্য রাষ্ট্র নিজেদেরকে বিশ্বের নেতা মনে করছে, তারা এখন অধিক পরিমাণের অর্থ-সহায়তা দিয়ে তার প্রমাণ দিতে পারে। সকলের প্রতি এটা আমার উদাত্ত আহ্বান মানবিকতার স্বার্থে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত