গভীর শোক, শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার মধ্যদিয়ে নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাৎবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন এবং জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শুরুতেই বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণীসমূহ পাঠ করা হয়। এসময় বঙ্গবন্ধুর উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং জাতির পিতার জীবন ও কর্মের উপর উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ পরিক্রমায় সংঘটিত বিভিন্ন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণ নেতৃত্বের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “চারিত্রিক গুণাবলীর সাথে রাজনৈতিক ধী-শক্তির সংমিশ্রণে একদিকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন ‘রাজনীতির কবি’।”
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সহস্র বছরের পুরনো একটি নৃগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়ে তাদের সংঘবদ্ধ করেছেন এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে শোষিত একটি জাতিকে স্বাধীন জাতিতে রূপান্তরিত করেছেন।”
হাইকমিশনার জাতির পিতার মহান আদর্শ অনুস্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে সকলকে তাদের প্রয়াস অব্যাহত রাখতে বলেন।
সন্ধ্যায় ‘বঙ্গবন্ধুঃ মানবাধিকার ও স্বাধীনতার অগ্রদূত’ শীর্ষক একটি বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শুরুতেই হাইকমিশনার রহমান বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের উপর আলোকপাত করে সূচনা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এসময় বিশেষ আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেন, “সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, আজকের বাংলাদেশের ঈর্ষনীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সেই সাক্ষ্যই বহন করে।”
অনুষ্ঠানের আরেক আলোচক ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব স্মিতা পান্ড বলেন, “বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মূল ভিত্তি স্থাপন করেন এবং সেই ভিতের উপর দাঁড়িয়েই বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক ‘সোনালী অধ্যায়’ সূচিত হয়েছে।”
দিবসটি উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু আলোকচিত্র নিয়ে একটি বিশেষ প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
পরিশেষে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকবৃন্দ, স্বাগতিক দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকবৃন্দ, মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত