১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৯:৫২
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মোহিত

'প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে অভাবনীয় উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার বিষয়ে আলোকপাত করবেন'

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

'প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে অভাবনীয় উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার বিষয়ে আলোকপাত করবেন'

জাতিসংঘের চলতি ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন সুদৃঢ় করবে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরো প্রসারিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এম এ মুহিত। 

বরাবরের মত এবারও বাংলায় প্রদত্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যখাতে সাফল্য ইত্যাদি বিষয়ের উপর আলোকপাত করবেন। পাশাপাশি, বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক সংকট, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

৬ দিনের সফরে ১৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত ১১টায় নিউইয়র্কে আসার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এ উপলক্ষে ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতর সংলগ্ন বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মুহিত আরও জানান, এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি। বিশেষ করে, যুদ্ধ-বিগ্রহ পরিহার করে চলমান খাদ্য ও জ্বালানি সংকট নিরসন, আর্থিক অনিশ্চয়তা মোকাবেলা করার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা, বিশ্বশান্তি, বহুপাক্ষিকতাবাদ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর বৈশ্বিক উদ্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট  লক্ষ্যসমূহ অর্জন প্রভৃতি বিষয়ে সাধারণ অধিবেশনে গুরুত্বের সাথে আলোচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং এর স্থায়ী ও টেকসই সমাধানের বিষয়টিও ব্যাপকভাবে আলোচিত হবে, যা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে সহায়ক হবে।  

১৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে শুরু হওয়া সাধারণ পরিষদের ৭৮তম  অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের প্রায় দেড় শতাধিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান যোগদান করবেন বলে রাষ্ট্রদূত এম এ মুহিত উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে মিশনের ডেপুটি প্রধান তৌফিক ইসলাম শাতিল উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এমপি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী,বীর বিক্রম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হবেন। রাষ্ট্রদূত এ সময় বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, সফরসঙ্গিগণের মধ্যে বিশিস্ট নাগরিক, সম্পাদক, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আছেন কিনা তা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে ব্যবসায়ীগণের বড় কোন টিম সফরসঙ্গি তালিকায় নেই। 
রাষ্ট্রদূত মোহিত জানান, এবছরের থিম হচ্ছে ‘আস্থা পুনর্গঠন এবং বিশ্বব্যাপী সংহতি পুনরুজ্জীবিত করা: ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের টার্গেট পূরণকল্পে সকলের জন্যে শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিতের পথ সুগম করা’। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস পুনর্গঠন এবং বিশ্বব্যাপী সংহতি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয় এবারের অধিবেশনে বিশেষ গুরত্ব পাবে। 
রাষ্ট্রদূত মোহিত জানান, এছাড়া অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ পরিষদের সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় বক্তব্য প্রদান করবেন। জাতিসংঘের সর্বশেষ শিডিউল অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী আগামি ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরের আগেই বক্তব্য প্রদান করতে পারেন। 
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসঘের ৫টি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। প্রথমত, আগামি ১৮-১৯ সেপ্টেম্বন এসডিজি সামিট অনুষ্ঠিত হবে। দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সভায় জাতিসংঘ উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনের অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং এই  প্রতিবন্ধকতাসমূহের উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে কিভাবে লক্ষ্যসমূহ অর্জন করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এই সামিটের অধীনে বিভিন্ন থিমের ওপর ৪ টা লিডার্স ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী ১৮ সেপ্টেম্বও লিডাস ডায়ালগে বক্তব্য রাখবেন। এর বিষয় হল ‘এসডিজি অর্জনের জন্যে সমন্বিত নীতি ও সরকারী প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা’। 
দ্বিতীয়ত, আগামী ২০ সেপ্টেম্বরে High-level meeting on pandemic prevention, preparedness and response অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সভার প্লেনারি সেশনে বক্তব্য দেবেন। তৃতীয়ত, ২০ সেপ্টেম্বর Annual Meeting of the UNGA Platform For Women Leaders অনুষ্ঠিত হবে। এই সভাটি প্রতিবছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি বিশ্বের নারী নেতৃবৃন্দের সম্মানে আহবান করে থাকেন এবং প্রধানমন্ত্রী এতে অংশগ্রহণ করবেন।
চতুর্থ, ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিবের আহবানে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত Climate Ambition Summit অনুষ্ঠিত হবে। এই সামিটের High Level Thematic Session Delivering climate justice: Accelerating ambition and implementation on adaptation and early warnings for all-এ বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পঞ্চমত, ২১ সেপ্টেম্বর  High-level Event on Universal Health Coverage অনুষ্ঠিত হবে। এই সভার প্লেনারি সেশনেও বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন স্বাস্থ্যবান্ধব নীতি এবং জনগনের স্বাস্থ্য উন্নয়নে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসমূহ তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই ৫ টি সভার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানদের আহবানে ৪ টি উচ্চ-সভায় অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্যে জলবায়ু সুংক্রান্ত ২টি বৈঠক রয়েছে।  
সাধারণ পরিষদে বিভিন্ন দেশ তাদের নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সভা আহবান করে থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় বাংলাদেশও এ বছর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ২টি High-level Side Event আয়োজন করেছে এবং এই ইভেন্ট দুইটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।
আগামি ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে Rohigya Crisis সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই সভাটির  সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে Canada, Gambia, Malaysia, Türkiye, United Kingdom, Unites States of America। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যার ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিকভাবে গৃহীত পদক্ষেপ আশানুরূপ কোন সমাধান দিতে পারেনি। বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন এক নম্বর priority ইস্যু। এই বক্তব্যই আবারও বিশ্ববাসীর কাছে পৌছে দিতে এই সাইড ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে।  

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর