আগামী ৩০ অক্টোবর ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি তাদের প্রথম বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস এই বাজেট ঘোষণা করবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই বাজেটে কী কী ঘোষণা আসছে, তার বিস্তারিত তথ্য-
১. ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স বৃদ্ধি
ইনস্টিটিউট ফর ফিসকাল স্টাডিজ জানিয়েছে, ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ট্যাক্স আদায় করে। ২০২৪-২৫ সালে ১৭০ বিলিয়ন পাউন্ড আদায়ের টার্গেট নিয়েছে সরকার। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মী কিংবা সেল্ফ এমপ্লয়েড কর্মীদের আয়ের ওপর ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স প্রদান করতে হয়। এ ছাড়া নিয়োগকর্তাদের তাদের কর্মীদের উপার্জনের উপরেও এই অর্থ দিতে হয়। নির্বাচনে লেবার পার্টি শ্রমজীবী মানুষের ট্যাক্স না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ভ্যাট, ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স এবং ইনকাম ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়তে যাচ্ছে। নিয়োগকর্তারা বর্তমানে তাদের কর্মীদের আয়ের উপর ১৩.৮ শতাংশ রেটে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স প্রদান করে।
২. পেনশন পরিবর্তন
চ্যান্সেলর আরেকটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। আর সেটা হলো ট্যাক্স ফ্রি পেনশনের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া। বর্তমানে ৫৫ বছরের বেশি বয়সী বেশিরভাগ মানুষ তাদের পেনশন পট থেকে ২৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৫ পাউন্ড পর্যন্ত ট্যাক্স ফ্রি পেনশন সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু দ্য টেলিগ্রাফের মতে, সরকারি কর্মকর্তারা এই ক্যাপ কমিয়ে এক লাখ পাউন্ড করার বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
৩. ইনহেরিটেন্স ট্যাক্স
আগের টোরি সরকারের সবচেয়ে আলোচিত ট্যাক্স ছিল ইনহেরিটেন্স ট্যাক্স। বর্তমানে এই ট্যাক্সের রেট ৪০ শতাংশ এবং তিন লাখ ২৫ হাজার পাউন্ডের বেশি মূল্যের প্রপার্টিতে এই ট্যাক্স দিতে হয়। তবে এই ইনহেরিটেন্স ট্যাক্স বাড়ানো হচ্ছে। ফলে মানুষ উত্তরাধিকারসূত্রে যে প্রপার্টি পায়, তার চেয়ে কম ট্যাক্স দিতে হবে। এ ছাড়া কৃষি জমি এবং পারিবারিক ব্যবসাসহ বেশ কয়েকটি প্রপার্টির ক্ষেত্রে ইনহেরিটেন্স ট্যাক্স প্রত্যাহার করা যেতে পারে।
৪. ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স
ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স হলো একটি সম্পদ বিক্রির পর লাভের ওপর ধার্য করা ট্যাক্স। যার মধ্যে সেকেন্ড হোম, শেয়ার, বিজনেস প্রপার্টি এবং গাড়ি ছাড়াও ৬ হাজার পাউন্ড বা তার বেশি মূল্যের প্রাইভেট প্রপার্টির ক্ষেত্রে এই ট্যাক্স দিতে হয়। এখন ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। গার্ডিয়ানের মতে যারা উচ্চ হারে আয়কর প্রদান করেন তাদের জন্য ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ২০-২৮ শতাংশের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে এই ট্যাক্স এবার ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।
৫. কাউন্সিল ট্যাক্স
সরকার কাউন্সিল ট্যাক্স সিস্টেমে সংস্কার আনতে যাচ্ছে। বর্তমানে কাউন্সিল ট্যাক্স ১৯৯১ সালের বাড়ির মূল্যের ওপর সেট করা রয়েছে। অনেক দিন ধরে ১৯৯১ সালের এই ব্যান্ড সিস্টেম বাতিল করার দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে লেবার পার্টির সরকার ব্যান্ড পরিবর্তন করবে না। তবে সরকার প্রতি বছর একটি প্রপার্টির প্রাইসের উপর ০.৫ শতাংশ ট্যাক্স আরোপ করে ব্যান্ডিং সিস্টেম রিপ্লেস করতে পারে।
৬. স্ট্যাম্প ডিউটি
স্ট্যাম্প ডিউটি আড়াই লাখ পাউন্ডের বেশি মূল্যের প্রপার্টির উপর প্রদান করতে হয়। তবে সেকেন্ড হোম এবং নন ইউকে বাসিন্দাদের বেশি অর্থ প্রদান করতে হয়। লেবার পার্টি জানিয়েছে, আগামী এপ্রিল থেকে প্রথমবার ক্রেতাদের জন্য স্ট্যাম্প ডিউটির ক্যাপ কমিয়ে তিন লাখ পাউন্ড করা হবে। এর আগে ২০২২ সালে রিশি সুনাক এটিকে চার লাখ ২৫ হাজার পাউন্ডে উন্নীত করেছিলেন।
৭. গ্যামব্লিং ট্যাক্স
দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার অনলাইন ক্যাসিনো গেমের মতো উচ্চ ক্ষতির প্রোডাক্টের উপর ট্যাক্স বাড়ানোর বিষয়ে বিবেচনা করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সেক্টর থেকে ৩.৪ বিলিয়ন পাউন্ড আদায় করা হবে।
৮. ফুয়েল ডিউটি
২০২২ সালে মি. সুনাক আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত ফুয়েল ডিউটি ৫ পেন্স কমিয়ে দেন। তবে মার্চের পরে এটি বাতিল করা হতে পারে। এতে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ২ বিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করতে পারবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই