২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৯:৪৭

অমর একুশের চেতনা বাঙালি জাতির কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ

অমর একুশের চেতনা বাঙালি জাতির কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ

একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান ভাষাশহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতি হিসেবে আমাদের আত্মপরিচয় ও স্বাতন্ত্র্যের দাবি ঊর্ধ্বে তুলে ধরার ঐতিহাসিক দিন। মাতৃভাষার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ জাগ্রত তারুণ্যের প্রতিনিধিরা ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে কূপমন্ডক শাসকদের লেলিয়ে দেয়া পুলিশের গুলিতে আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। তাদের সেই আত্মত্যাগের বিনিময়ে তৎকালীন শাসকরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়েছিল। অন্যদিকে ভাষার জন্য জীবন দেয়ার বিরল ইতিহাস রচনার সুবাদে একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। হাজার বছরের লালিত স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও আত্মমর্যাদার দাবিকে অগ্রাহ্য করার বিরুদ্ধে বায়ান্নতে রুখে দাঁড়ানোর শাণিত চেতনার পথ বেয়ে দেশের মানুষ পরবর্তী প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, স্বাধিকার সংগ্রাম এবং একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনার মধ্যে মহান ভাষাশহীদদের আত্মদান এবং এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ফল্গুধারার মতো প্রবাহমান ছিল।

মানুষের আবেগ-অনুভূতি সব কিছুই ব্যক্ত হয় মাতৃভাষায়। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, গর্বের ভাষা। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও এ ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের স্বাধীন দেশ আছে, আছে অতিসমৃদ্ধ এক ভাষা। তবে এ ভাষার জন্য অনেক রক্ত ঝরাতে হয়েছে।
অমর একুশের চেতনা বাঙালি জাতির কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বুকের রক্ত দিয়ে গেছেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেকে। বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বাংলা ভাষা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে আমাদের মাতৃভাষাকে সমুন্নত করেন। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ছে, বিশ্বময় বাংলা ভাষা ছড়িয়ে পড়ছে।
আন্তর্জাতিকভাবে আজ এই ভাষা স্বীকৃত। আজ আমাদের ভাষা দিবস বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়, যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপিত হয়। এর চেয়ে গৌরবের আর কী থাকতে পারে।  
আমরা জানি, দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ বাংলা ভাষাতেই কথা ও কাজ চালিয়ে থাকে। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও বাংলা সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু দাফতরিক যোগাযোগ এবং বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের লৈখিক তৎপরতায় ইংরেজিরই প্রাধান্য। এর একটি কারণ সম্ভবত ঔপনিবেশিক আমলের ভিত্তিমূলে গড়ে ওঠা আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মানসিকতা। আমরা দেখি, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানির মতো প্রভাবশালী দেশ তো বটেই, বুলগেরিয়া, তুরস্কের মতো অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবশালী দেশও নেহাত প্রয়োজন ছাড়া ইংরেজি ব্যবহার করে না।
ভাষার জন্য জীবন দেওয়া এবং বিদেশি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রক্তস্নাত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে তা সম্ভব হবে না কেন? বাংলা ভাষার গৌরব, বিজ্ঞানসম্মত কাঠামো এবং বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতিও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক। সব পক্ষ উদ্যোগী ও আন্তরিক হলে বাংলা ভাষার মর্যাদা ও ব্যবহার বাড়ানো অবশ্যই সম্ভব।
১৯৯৯ সালে সরকারি জোর প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা আমাদের ভাষাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারছি না। সাইনবোর্ড লেখা হয় ইংরেজিতে। বাংলা লেখা হলে বানানে থাকে ভুল। বাংলা একাডেমিও এ ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু সফলতা আসেনি। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, বাংলা ভাষা সংরক্ষণে আরো জোরদার ভূমিকা রাখতে হবে। এ দেশে এখনো অনেক ভাষাসৈনিক জীবিত আছেন, যাঁরা অতিকষ্টে জীবন যাপন করছেন। তাঁদের পাশে সবাইকে দাঁড়াতে হবে। 

লেখক: অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সভাপতি সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন 

সর্বশেষ খবর