দেড় বছরেরও বেশি সময় হলো করোনা ভাইরাস গ্রাস করেছে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বকে। সময় যত গড়াচ্ছে সংকট ততই প্রকট আকার ধারন করছে। শনাক্ত ও মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। একটা সময় শহর কেন্দ্রীক এই ভাইরাসের ভয়াবহতা থাকলেও এখনও গ্রামেও ছড়িয়েছে ভয়াবহ এই ভাইরাস। বাড়ি বাড়ি জ্বর সর্দি কাশি। বুঝতে দেরী হওয়ায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাম্য চিকিৎসকের পারমর্শে চিকিৎসা করাতে গিয়ে মৃত্যু বাড়ছে উপসর্গ নিয়ে।
করোনার প্রাদুর্ভাব কমাতে চলছে সরকারের দেয়া নানা বিধিনিষেধ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, প্রতিদিনের আয়ের উপড় নির্ভরশীল শ্রমজীবী মানুষের আয় বন্ধ হয়ে বেকার। মধ্যবিত্তরা ঘরবন্দি হয়ে সহায়তাও চাইতে পারছে না।
সরকার নিম্নআয়ের মানুষদের সহায়তা করছে। তবে পরিবারের সদস্যদের কথা বিবেচনায় সেই সহায়তায় কয়দিন পেট ভরে খেতে পারবেন সেটি সবারই জানা। এছাড়াও রয়েছে পরিবারের সদস্যদের নানা রকম চাহিদা। বাড়ির সামনের মোড়ে মুচির কাজ করা নরেশ মিয়ার দুই মেয়ে, এক ছেলে, স্ত্রী, মাসহ সদস্য ৬ জন। প্রতিদিনের আয়ে তার সংসার চলে। ৭ দিনের লকডাউনে কোন আয় নেই। সরকারি সহায়তার তালিকায় নাম বসেনি। যা জমা ছিলো সেটি শেষ হয়ে এখন কোন রকম ধার করে চলছেন। তার মতো শ্রমজীবী মানুষেরা এখন চরম দুর্বিষহ সময় পার করছেন। করোনার এই সংকট থেকে বের হতে গেলে, লকডাউনের সুফল আনতে হলে সবার আগে দেশের সাধারন শ্রমজীবী মানুষের একটি তালিকা প্রণয়ন করা জরুরী। পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে লকডাউন ভাঙ্গার যে প্রবণতা সেটি কমে আসবে। লকডাউনের সুফল পাওয়া যাবে। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর কথা বাদ দিয়ে লকডাউন কিংবা বিধিনিষেধ সফল করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে দেশের একটি বিশাল অংশ রয়েছে মধ্যবিত্ত। যারা করোনার থাবায় সহায় সম্বল হারিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেও ভয় পাচ্ছেন। মধ্যবিত্তদের নিয়ে সরকারের একটি মাষ্টার পরিকল্পনা দরকার। দেশে কি পরিমাণ মধ্যবিত্ত পরিবার রয়েছে তাদের সরকারি ডাটাবেজের আওতায় আনতে হবে। তাদের এমন ভাবে সহায়তার আওতায় আনতে হবে যাতে কোনভাবেই তারা মানহানিকর পরিস্থিতির মধ্যে না পরেন। সেক্ষেত্রে জেলার ডিসি, উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওরা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। 
ঢাকা শহর থেকে প্রচুর মানুষ নিজ গ্রামে ফিরে গেছেন কর্মসংস্থান হারিয়ে। এখন গ্রামে গিয়েও বেকার। পূজি নেই, কাজ নেই। এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। যেসকল মানুষ কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরেছেন তাদের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা নিতে হবে। যাতে গ্রামেই তারা কর্মসংস্থানের সুযোগ পান। গ্রামে ফিরে যাওয়া মানুষের মধ্যে মধ্য বিত্তের সংখ্যাও কম নয়। 
করোনায় দারিদ্রতা বেড়েছে। পুঁজি হারিয়ে মানুষ গরিব হয়ে গেছে। রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, দীনাজপুরসহ যে সব এলাকার দারিদ্রতার হার বেশি সেসব এলাকার মানুষ আরও বেশি দরিদ্র হয়েছেন। এর একটাই কারণ সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব।
করোনার দেড় বছরে কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা পুঁজি সংকটে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এখন এই পরিবারগুলোও সংকটে। তাদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে আবারও তাদের ব্যবসা চালুর উদ্যোগ নিতে হবে এবং এই দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। মনে রাখতে হবে এই উদ্যোক্তাদের দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা ছিলো।
করোনা সংক্রমণের লাগাম ধরতে, মানুষকে ঘরে রাখতে আগে সরকারকেই একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে। তবেই আসবে লকডাউনের সফলতা।
লেখক: ভাইস চেয়ারম্যান, সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        