শিরোনাম
সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ডিম তরকারি

তানভীর আহমেদ

ডিম তরকারি

নতুন মোবাইল সেটের স্ক্রিনের ওপর একটি পলিথিন লাগানো থাকে। নতুন নতুন এই পলিথিনও দিনে চল্লিশবার পরিষ্কার করা হয়। এটাকে বলে বাড়তি যত্ন নেওয়া। নতুন জামাইকে এভাবে যত্ন করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। জামাই আদর পেতে কদিন পর পরই শ্বশুরবাড়ি যেয়ে হাজির হই। গত সাত দিনে মোট ছয় দিন শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়েছি। এক দিন যেতে পারিনি কারণ শ্বশুরবাড়িতে কেউ ছিল না। কোথায় কার বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়েছিল কে জানে? তবুও গিয়েছিলাম। সেদিনের ঘটনাটা বলি। গত বুধবার, সময় সকাল দশটা। যেয়ে দেখি দরজায় মিনিমাম দশ কেজি ওজনের একটা তালা ঝুলছে। ভাবলাম এসেই যখন পড়েছি একটু অপেক্ষা করি। আমাকে অপেক্ষা করতে দেখে স্থানীয় কাজের বুয়া জানালেন, এই বাসার লোকজন বিয়ের দাওয়াত খেতে গেছে। আমিও তাকে জানালাম, সমস্যা নাই, একটু অপেক্ষা করি। বুয়া জানালেন, সমস্যা আছে। কারণ তারা আজকে তো আসবেনই না, আগামীকালও কখন আসে ঠিক নাই। আমিও বুয়াকে জানালাম, আসতেও তো পারে? পৃথিবীতে কত অসম্ভব কাজ সম্ভব হচ্ছে না? আজকে থেকে দুইশ বছর আগেও তো বিমান ছিল না। এখন আছে। বুয়া জানালেন, ঠিক আছে দুইশ বছর অপেক্ষা করেন তাইলে। বুয়ার সঙ্গে তর্কে জেতার পর মনটাই ভালো হয়ে গেল। তবে সে চলে যাওয়ার পর একা একা লাগতে লাগল। সময় কাটে না। অপেক্ষার সময় দীর্ঘ হয়। কিন্তু আমার অপেক্ষার সময় চুইংগামের মতো হয়ে যাচ্ছে। কখনো দীর্ঘ, কখনো খাট, কখনো বেলুনের মতো। একটু অপেক্ষা করতে করতে রাত আটটা বেজে গেল। এটা আমার কাছে বড় কোনো ব্যাপার না হলেও আমার পাকস্থলী ও মাথার বিভিন্ন অংশের কাছে বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। খিদের চোটে পেট থেকে নানারকম আওয়াজ আসতে লাগল। এমন আওয়াজের কোনো অর্থ থাকে না। আমি পেটের ভিতর থেকে আসা নানারকম শব্দ উপেক্ষা করে ভালোই ছিলাম। তবে পেটের ভিতর থেকে কে যেন লাজলজ্জা ভেঙে অবশেষে মুখ খুলল। রাত দশটার দিকে পেটের ভিতর থেকে স্পষ্ট আওয়াজ এলো, ‘ভাই, খাওন দেন। আপনার পায়ে পড়ি।’ নতুন বিয়ে হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ির খাবার ছাড়া বাইরের কোনো দানাপানি পেটে পড়েনি। আজ মনে হয় ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে রেস্টুরেন্টের খোঁজে বের হলাম। বেশিক্ষণ হাঁটতে হলো না। বাড়ির খুব কাছেই একটি রেস্টুরেন্ট পেয়ে গেলাম। ত্রিশ টাকা দামের হলুদ বাল্বের আলোয় সাজানো রেস্টুরেন্ট। সাধারণ ‘সেভেন স্টার’ হোটেলে এমন মায়াবি আলো দেখা যায়। আমার মনে হতে লাগল এটা ‘টেন স্টার’ মানের কোনো রেস্টুরেন্ট। কিন্তু খাবারের অর্ডার নিতে কেউ আসল না দেখে নিশ্চিত হলাম এটা আসলে সব স্টারের ওপরের কোনো হোটেল। অর্ডার ছাড়াই খাবার এসে হাজির। ঠান্ডা ভাত আর ডিম তরকারি। ঠান্ডা জিনিসের দাম হোটেলে সাধারণত বেশি হয়। যেমন হট কফির চেয়ে কোল্ড কফির দাম বেশি। আর দাম বেশি হলেই খাবার বেশি ভালো- এই থিউরি তো বোকারাও জানে। খাওয়া শুরুর প্রথম দশ সেকেন্ড ভালোই কাটল। তারপরই মনে হতে লাগল, আরে এই খাবার তো আগেও খেয়েছি! কোথায় খেয়েছি মনে করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগলাম। হ্যাঁ, মনে পড়েছে। এ তো আমার শাশুড়ির হাতে রান্নার মতো! একই স্বাদ, একই ঘ্রাণ। একই রকম ঠান্ডা। আহ! অনেক তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া শেষ করলাম। কাগজ দিয়ে হাত মুছতে মুছতে গেলাম বিল দিতে। একশ টাকার নতুন একটা নোট বাড়িয়ে দিতেই রেস্টুরেন্টের ক্যাশিয়ার বলল, ‘দুলাভাই, আমি আপনেরে চিনি। আপনের বিল দিতে হইব না। আপনের এক মাসের খাওনের অ্যাডভান্স অর্ডার দেওয়া আছে। আপনের শ্বশুর আমগো হোটেলতেই আপনের খাওন নিয়া যায়।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর