শিরোনাম
সোমবার, ২৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

কাঁচামরিচ কিনতে গিয়ে

মনজুর সা’দ

গতকাল সন্ধ্যায় ডিম ভাজা খেতে ইচ্ছে করল। ঘরে ডিম, কাঁচামরিচ, পিঁয়াজ কিছু নেই। বাসার পাশের গলির মোড়েই দোকান। এই দোকানে সবকিছুই পাওয়া যায়। এ জন্য দোকানের নাম রেখেছে ‘একের ভিতর সব।’ বাইরে যাওয়ার জন্য আয়োজন করছি। ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলে দেখি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমার বন্ধু মুহিব দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে কিছুক্ষণ বসতে বললাম। সে বসল না। আমার সঙ্গে দোকানে যেতে চাচ্ছে। তাকে সঙ্গে নিয়েই রওনা হলাম। সে দোকানিকে বলল, ‘এক হালি ডিম দেন তো।’ দোকানি ব্যাগে ডিম ভরতে লাগল। মুহিব ব্যাগ থেকে একটা করে ডিম বের করে আর বলে, ‘ডিম এত ছোটো ক্যান? বড় বড় দেইখা দিতে পারেন না? এটা তো আরও ছোট। ওর পাশেরটা দেন। উফ, এটা তো ভাঙা ডিম। ওই যে ওইটা দেন। এটাও তো ছোটো। আরেকটু বড় দেইখা দেন না!’ দোকানি সব ব্যাগ থেকে নামিয়ে গজগজ করে বলল, ‘আপনার ডিম কেনা লাগবে না। নিজে বড় সাইজের ডিম পেড়ে খেয়ে নেন!’ ডিম আর কেনা হলো না। মুহিব বলল, ‘ডিম কেনা হয়নি তো কী হয়েছে? আমি ভালো করে কাঁচামরিচের তরকারি রাঁধতে পারি। একবার খেলে তোর বারবার খেতে ইচ্ছে করবে।’ ওর কথা শুনে কাঁচামরিচের তরকারি চোখের সামনে ভেসে উঠল। ঝিরঝির বৃষ্টিতে হাঁটতে লাগলাম। রাস্তার পাশে ভ্যানওয়ালা সবজি বিক্রি করছে। সবজিতে পানি ছিটাচ্ছে। বৃষ্টি পড়ছে তার পরও সবজিতে পানি ছিটাচ্ছে কেন, ব্যাপারটা বুঝলাম না। সবজির জ্বরটর এসেছে নাকি? মুহিব বলল, ‘কাঁচামরিচ আছে?’ দোকানদার, আমি ও মুহিব তিনজনের চোখ গেল ভ্যানের ওপর। কমপক্ষে ১০ কেজি কাঁচামরিচের স্তূপ সেখানে। মুহিব সামলে নিয়ে বলল, ‘এক কেজির দাম কত?’ দোকানদার বলল, ‘এক শ বিশ টেকা।’

মুহিব : আধা কেজির দাম কত?

দোকানদার : ষাইট টেকা।

মুহিব : এক পোয়ার দাম কত?

দোকানদার : তিরিশ টেকা।

মুহিব : আধা পোয়ার দাম কত?

দোকানদার : পনের টেকা।

মুহিব : আমারে ভালো দেইখা, মোটাতাজা দেইখা, তরতাজা দেইখা ৫ টাকার কাঁচা মরিচ দেন তো।

দোকানদার ভ্যানয়ালা এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটু দূরে সরে এলাম। মুহিবের সঙ্গে বাজার সদাই করতে এলে নিশ্চিত মার খেতে হবে। ভ্যানয়ালা দোকানদার বলল, ‘আপনে কি মরিচ নিতে আইছেন না আমার সঙ্গে ফাজলামি করতে আইছেন?’ মুহিব ডাবল খেপে গিয়ে বলল, ‘ওই মিয়া, আমি কি আপনের দুলাভাই লাগি যে ফাজলামি করমু? মরিচ নিতে আইছি, দিলে দেন, না দিলে বইসা বইসা বৃষ্টিতে বিড়ি টানেন।’ ভ্যানয়ালা দোকানদার পকেট থেকে বিড়ি বের করে, আগুন জ্বালাল। তারপর নির্বিকারভাবে বিড়ি ফুঁকতে লাগল। মুহিব না বুঝলেও, আমি যা বোঝার বুঝে নিলাম।

                -শেরপুর

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর