যশোর রেলস্টেশনটা তখন ব্যস্ত। আমার গন্তব্য রাজশাহী, উদ্দেশ্য একটি চাকরির ইন্টারভিউ। আমার পাশের সিটে উঠলেন এক ভদ্রলোক। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলেন। আমিও সৌজন্যবশত হেসে তার জবাব দিলাম। আমি কথা শুরু করলাম।
: কোথায় যাচ্ছেন, স্যার?
: রাজশাহী। সরকারি স্কুলে পোস্টিং। আপনি?
: একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি।
এরপর আমাদের গল্প জমে উঠল।
আমাদের সারির উল্টো দিকের সারিতে বসেছেন মা ও মেয়ে। মেয়েটিকে একবার দেখেই হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। এ যেন আকাশের পরী নেমে এসে বসেছে ট্রেনে! টের পেলাম, প্রেম নামক মানসিক রোগের প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিচ্ছে বুকের ভিতর।
আমি মুখ ফিরিয়ে পাশের ভদ্রলোককে বললাম, ‘মেয়েটি খুব সুন্দর, তাই না?’
ভদ্রলোক মাথা নাড়িয়ে হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ।’ এক পর্যায়ে বললাম, ‘এ মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হলে প্রথমে প্রেম তারপর বিয়ে, তারপর সংসার হলে কেমন হতো ভাবছি।’ এবার ভদ্রলোক হেসে উত্তর দিলেন, ‘প্রস্তাব পাঠিয়ে দেখুন মেয়েটি কি বলে।’ আমি বললাম, ‘নাহ স্যার, আমি বেকার। প্রেম তো দূরে থাক, মেয়েটির বাবার সামনে দাঁড়াতেই লজ্জা পাব।’
এদিকে আমি কল্পনা সমুদ্রে সাঁতার কাটছি। একেবারে বিয়ের প্রস্তুতি অবধি পৌঁছে গেলাম। মেয়েটির নাম হতে পারে শ্রুতি কিংবা সৃষ্টি এমন মিষ্টি কিছু। আমাদের সংসারে রবীন্দ্রসংগীত চলবে, ছুটিতে দুজনে মিলে পাহাড়ে ঘুরতে যাব, ফেসবুকে জোড়া প্রোফাইল পিকচার... ভাবনাগুলো একেকটা সিনেমার দৃশ্য হয়ে মাথায় ঘুরতে লাগল।
এভাবে গল্প, কল্পনা আর হাস্যরসের মাঝেই ট্রেন রাজশাহী পৌঁছে গেল। বিদায় নেওয়ার সময় ভদ্রলোক পকেট থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে দিলেন। বললেন, ‘সময় পেলে বেড়াতে আসবেন। এখানে আমার বাড়ির ঠিকানা আছে।’ আমি বললাম, ‘অবশ্যই স্যার।’ এরপর তিনি একটু থেমে হেসে বললেন, ‘আচ্ছা, আপনার সঙ্গে আমার মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দেই।’ তিনি সেই মেয়েটিকেই ডাক দিলেন, ‘সৃষ্টি মা, এদিকে এসো...।’ মেয়েটি এদিকে আসছে দেখে মাথাটা কেমন চক্কর দিল। তারপর আর কিছু মনে নেই।
-জগন্নাথদী, মধুখালী, ফরিদপুর।