আমার এক ছোটভাই বলল, জীবনে প্রচুর আয় করতে হবে। কারণ, সবখানেই আয়ের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং আয় করার বিষয়টাকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং ভারীভাবে নিতে হবে। মানে আয়ের বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আপনি চিন্তা করতে পারেন, আয়ের কথা গানে পর্যন্ত বলা হয়েছে। আমি অবাক হলাম। বললাম, আয়ের কথা গানে বলা হয়েছে মানে? কোন গানে আয়ের কথা বলা হয়েছে? ছোটভাই বলল- ওই যে, বিখ্যাত ওই গানে। ‘আয় খুকু আয়’। তার মানে খুকুকে বলা হয়েছে, খুকু যাতে আয়-ইনকাম ভালোভাবে করে। আমি এবার ধমক দিলাম। বললাম, আন্দাজে কথা বলবি না। ‘আয় খুকু আয়’ গানে আয়ের কথা বলা হয়েছে, তোকে কে বলল? গান বুঝিস? বোকা কোথাকার! ছোটভাই বলল, আমাকে আপনি, বোকা বলেন আর যা-ই বলেন, আমি কিন্তু আয়-রোজগারের বিষয়ে সিরিয়াস। আর এই যে গানের কথা বললাম, গান জিনিসটা আসলেই আমার প্রিয়। বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, যখন আমি শুনি আমার প্রিয় জিনিস অর্থাৎ গানেই আয়ের কথা বলা হয়েছে, তখন আমি আর স্থির থাকতে পারি না। অস্থির হয়ে যাই আয় বাড়ানোর জন্য। আমি এবার চরম বিরক্ত হয়ে বললাম, বারবার একই কথা বলবি না। কোনো গানেই আয়ের কথা বলা হয়নি। এই যে তুই বললি ‘আয় খুকু আয়’ গানে নাকি আয়ের কথা বলা হয়েছে, এটা কোনো কথা? ছোটভাই বলল, ধরে নিলাম এই গানে আয়ের কথা বলা হয়নি। কিন্তু এটা ঠিক, গানের মধ্যে আয় ঢুকে পড়েছে। যেমন ধরেন ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’। এই গানটাও কিন্তু ‘আয়’ দিয়ে শুরু। আমি এবার হাসলাম। তবে বিরক্তির হাসি। আর বললাম, তোর মাথায় কি আয়ের চিন্তা ছাড়া আর কোনো চিন্তা নেই? ছোটভাই বলল, কেন থাকবে?
আয়ের চিন্তাই তো বড় চিন্তা। কারণ আমার বউ বলে দিয়েছে, যেভাবেই হোক আয় বাড়াতে হবে। আর আমি আয় বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি জানতে চাইলাম, কী কী চেষ্টা করছিস? ছোটভাই বলল, আমি আমার অফিসের রুমের সামনে লিখে দিয়েছি, ‘কম্পিউটারের মেরামত কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত।’ এতে কিন্তু আমার আয়ের রাস্তা খুলে গেছে। আমি অবাক হলাম। বললাম, কীভাবে? ছোটভাই বলল, অফিসে একদিন কম্পিউটার বন্ধ থাকলে সবাই ভোগান্তিতে পড়ে। যাদের জরুরি কাজ থাকে, তাদের মধ্য থেকে অনেকেই আমাকে দুই-চার হাজার করে টাকা দিতে শুরু করেছে।
তাদের কথা হচ্ছে, যেভাবেই হোক, কম্পিউটারটা আগে মেরামত করেন। তার মানে কম্পিউটার মেরামত বাবদ প্রতিদিনই আমি কয়েক হাজার করে টাকা পাচ্ছি। আমি বললাম, তুই যেটাকে বাড়তি আয় বলছিস, এটা তো আসলে ঘুষ! ছোটভাই বলল, অন্যায় বলেন আর যাই বলেন, আয় বাড়াতে হবে। কারণ, আয়েই সুখ। কীভাবে সুখ জানেন? একটু খেয়াল করেন, ‘সুখ’ শব্দটার একটা প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দ আছে। সেটা হচ্ছে ‘আয়েশ’। এই যে আয়েশ শব্দটা, এটার মধ্যেই কিন্তু আয় লুকিয়ে আছে। আয়+এশ। তার মানে সুখ বা আয়েশ চাইলে আপনাকে আয় করতেই হবে। কথা ক্লিয়ার?