শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সমরেশ মজুমদার

একুল নেই ওকুল নেই

পর্ব - ২

একুল নেই ওকুল নেই

[পূর্বে প্রকাশের পর]

আই অ্যাম নিউ কামার হিয়ার। ক্যান ইউ টেল মি হোয়্যার ইজ ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট।’

বৃদ্ধা তরুণীর দিকে তাকালেন। তরুণী কোনো কথা না বলে আঙ্গুল তুলে ইশারায় রাস্তার উল্টো দিকটা দেখিয়ে দিল। সেদিকে তাকাতেই রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ড দেখতে পেল কমল। এতক্ষণ সে রাস্তার এই ফুটপাথের বাড়িগুলোই ঘুরে দেখে হতাশ হচ্ছিল। কমল বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ।’

বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইউ আর ফ্রম।’

‘ইন্ডিয়া’, জবাব দিল কমল।

পরস্পরের দিকে তাকালেন ওঁরা। বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করলেন, এবার পরিষ্কার বাংলায়, ‘তোমার নাম কী?’

‘কমল, কমল চক্রবর্তী। কিন্তু আমি যে বাঙালি তা আপনি বুঝলেন কী করে। আপনাদের দেখে মনে হলেও সাহস করে বলতে পারিনি।’

‘তুমি কোথায় আছ?’ বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করলেন।

‘আজই দেশ থেকে এসেছি। কোম্পানি আমাকে ওই বাড়ির একটা গেস্টরুমে থাকতে দিয়েছে। আমেরিকায় আমার পরিচিত কেউ নেই। আমাকে বলা হয়েছে কাছেই যে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে গিয়ে খেয়ে নিতে। তাই বেরিয়েছিলাম।’ টানা কথাগুলো বলে শ্বাস নিয়ে বলল, ‘আপনারা কি কাছেই থাকেন?’

বৃদ্ধা মাথা নাড়লেন, ‘হ্যাঁ। আচ্ছা চলি। নিশ্চয়ই আবার দেখা হবে।’

ওঁদের চলে যেতে দেখল কমল। সে খেয়াল করেছিল এতক্ষণ বৃদ্ধাই তার সঙ্গে কথা বললেন কিন্তু তার পাশে যে মেয়েটি দাঁড়িয়ে ছিল একটিও কথা বলেনি। কমল দেখে ওঁরা খানিকটা এগিয়ে ডান দিকের রাস্তায় চলে গেলেন।

খুশি হলো সে, চব্বিশ ঘণ্টা ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করতে হবে না। এ শহরে অবশ্যই আরও অনেক বাঙালি বাস করছেন। তাই বাংলায় কথা বলার সুযোগ হবেই। প্রথম দিনেই অকস্মাৎ হয়ে গেল, তাতে খুশিই হলো কমল।

রাস্তা সে পার হয়ে এলো নির্দিষ্ট পথ দিয়ে। এ ধারে বেশ সাজানো-গোছানো সুন্দর চেহারার দোকান রয়েছে। কিন্তু কমল অবাক হচ্ছিল তাদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়। এত সাজানো দোকান অথচ কোনো ভিড় নেই। ভিড় দূরের কথা, দোকানগুলো একেবারেই জনশূন্য। খদ্দেরদের দেখাই যাচ্ছে না। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে দোকানগুলো চলে কী করে।

ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে ঢুকে সে অবাক হলো। বেশ বড় খাওয়ার জায়গা কিন্তু দুজনের বেশি খদ্দের নেই। ফাঁকা টেবিলগুলোর একটায় বসে ওঁরা খাওয়া-দাওয়া করছেন। পেছন দিকের কাউন্টারের ভিতরে বেশ কয়েকজন কর্মচারী রয়েছেন। মহিলা কর্মীর সদস্যই বেশি। কাউন্টারের এক কোণে বসা মহিলা মাথা নাড়লেন, ‘ইয়েস।’

পেছনের দেয়ালে খাবারের নামগুলো পড়তে পড়তে কমল বুঝল কোনো ভারতীয় খাবার নেই। সে দেখল একটা জাম্বো কিচেন স্যান্ডউইচের দাম দুই ডলার : ভারতীয় টাকায় দামটা ভাবতেই মনে হলো, এটা উচিত হচ্ছে না তার খিদে লেগেছে এবং সে বিদেশে আছে। অতএব এখন কলকাতার ভাবনা রেখে মেলানো যাবে না। দাম দিয়ে খাবার নিয়ে খালি টেবিলের একটায় গিয়ে বসল কমল। খেতে খেতে সে বুঝল এ রকম একটা স্যান্ডউইচেই তার পেট অনেকক্ষণ ভরে থাকবে। তার মানে সে যদি খাওয়ার জন্য মোট আট ডলার খরচ করে তাহলে একটা সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

খাওয়া শেষ করে কমলের খেয়াল হলো, অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে কলকাতা থেকে আসার পরে বাবা নিশ্চয়ই এখন উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন তার খবরের জন্য। কিন্তু কীভাবে বাবাকে ফোন করবে! বাইরে বেরিয়ে এসে চারপাশে তাকিয়ে সে কোনো টেলিফোন বুথ দেখতে পেল না। রাস্তা পেরিয়ে যে বাড়িতে সে উঠেছিল তার সামনে এসে চারপাশে তাকাল। না, কোথাও টেলিফোন বুথ নেই।

এ সময় একটি বালককে কানে তার লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে ওপাশ থেকে আসতে দেখল সে। বালকটির দিকে হাত তুলে থামতে ইশারা করতেই সে থেমে গেল। কান থেকে তার খুলে জিজ্ঞাসা করল, ‘ইয়া!’

কমল বাংলায় জিজ্ঞাসা করল, ‘এখানে টেলিফোন করার বুথ কোথায় আছে খোকা?’

বালক জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি ফোন করতে চাও?’

‘হ্যাঁ’, মাথা নাড়ল কমল।

সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে ফোনের যন্ত্র বের করে এগিয়ে ধরল বালক।

 

আমেরিকার বিষয়ে অনেক গল্প কমল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শুনেছে। ওই দেশের বেশির ভাগ মানুষই বিদেশি হিসেবে কাজের সন্ধানে এসে এক সময় আমেরিকার নাগরিক হয়ে গেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে আমেরিকা সম্পর্কে বিরূপ ভাবনার প্রকাশ পেতে তেমন দেখা যায় না।
সাতসকালে তৈরি হয়ে নিয়েছিল কমল। যে ভদ্রলোক তাকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি ঠিক সময়ে পৌঁছে গেলেন। কমলকে দেখে হাসিমুখে বললেন, ‘বাহঃ আপনি তো ঠিক সময়ে তৈরি হয়ে গিয়েছেন। চলুন যাওয়া যাক।’

 

অস্বস্তিতে পড়ল কমল। এটা কি খেলনা ফোন? বালক কি তার সঙ্গে মজা করছে? আবার হাত নেড়ে মোবাইল ফোন নেওয়ার জন্য ইঙ্গিত করল বালক।

ওটা হাতে নিয়ে দেখল কমল। এটা যে খেলনা ফোন নয় তা বুঝতে আর অসুবিধে হলো না। সে শুনেছে সব মোবাইল টেলিফোন থেকে আন্তর্জাতিক কল করা যায় না, দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এ ফোন থেকে কি আন্তর্জাতিক কল করা সম্ভব হবে? ওইটুকু বালকের কাছে ওর অভিভাবকরা এত দামি ফোন কেন দেবেন। তবু, নিতান্ত কৌতূহলী হয়ে সে প্রথমে দেশের কোড নম্বর পরে বাবার নম্বর ডায়াল করতে রিং কানে এলো। পরিচিত শব্দ। চারবার বাজার পরে বাবার গলা কানে এলো ‘হ্যালো।’

সঙ্গে সঙ্গে মুখ থেকে শব্দগুলো যেন ছিটকে বের হলো, ‘বাবা, আমি ভালোভাবে পৌঁছে গেছি, তুমি চিন্তা করো না।’ বাবার গলা কানে এলো। ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে।’

সঙ্গে সঙ্গে ফোন বন্ধ করে দিয়ে বালককে ফেরত দিল কমল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ’। বালক নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ফোনটা নিয়ে পকেটে রেখে গান শুনতে শুনতে চলে গেল। পেছন থেকে বালকের দিকে তাকিয়ে অন্যায় বোধে আক্রান্ত হলো কমল। সে শুনেছে এক মিনিটের আন্তর্জাতিক টেলিফোন কলের ভালো খরচ হয়। ডলারে সেটা কত সে জানে না। যাই হোক, এই বালক জানল না, ওর অভিভাবকদের সেই দাম মেটাতে হবে।

ঘরে ঢুকে পোশাক বদলে শুয়ে পড়ল কমল।

শোয়ার পরও ঘুম আসছিল না তার। প্রথমে মনে হলো, এতটা দূরে প্লেনে আসতে আসতে সে বুঝতে পারেনি, এখন শরীরে অন্যরকম ক্লান্তি ছড়িয়ে পড়ল। এ ক্লান্তির জন্য নাকি তার ঘুম আসছে না। কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করার পর কমল উঠে বসল। না, তার ঘুম আসছে না।

চেয়ারে এসে বসল সে। বড় বড় শ্বাস নিল। তার পরই মনে হলো আচ্ছা, এভাবে আমেরিকায় আসা কি খুব জরুরি ছিল? এখানে যত টাকা মাইনে ডলারে পাবে তা ভারতীয় টাকায় কোনো চাকরিতে দেশে পাওয়া যেত না। কিন্তু তার বিনিময়ে তাকে কী কী ত্যাগ করতে হবে? এত দিন পরে কবিতা আবৃত্তি, নাটকের দলে নেশার মতো অংশ নেওয়া, সব ছেড়ে বন্ধুবিহীন এই আমেরিকার শহরে মুখ বুজে জীবন কাটাতে হবে। এ কথা সে এখানে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেন একবারও ভাবল না? ক্লান্তি যতই থাক, একসময় ঘুম শরীরে আসে, কমলেরও এলো।

আমেরিকার বিষয়ে অনেক গল্প কমল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শুনেছে। ওই দেশের বেশির ভাগ মানুষই বিদেশি হিসেবে কাজের সন্ধানে এসে একসময় আমেরিকার নাগরিক হয়ে গেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে আমেরিকা সম্পর্কে বিরূপ ভাবনার প্রকাশ পেতে তেমন দেখা যায় না।

সাতসকালে তৈরি হয়ে নিয়েছিল কমল। যে ভদ্রলোক তাকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি ঠিক সময়ে পৌঁছে গেলেন। কমলকে দেখে হাসিমুখে বললেন, ‘বাহঃ আপনি তো ঠিক সময়ে তৈরি হয়ে গেছেন। চলুন যাওয়া যাক।’

যেতে যেতে কমল জিজ্ঞাসা করল, ‘এখান থেকে অফিসে কীভাবে যেতে হবে?’

‘স্রেফ পায়ে হেঁটে। বড়জোড় ১০ মিনিট। অফিসের কাছাকাছি ওই গেস্টরুম দুটো এ কারণে নেওয়া হয়েছে যাতে যারা থাকবে তাদের যাতায়াত করতে বেশি সময় না লাগে। রাতে ঘুম হয়েছিল?’

আচমকা প্রশ্নটা কানে যেতে একটু অবাক হয়ে জবাব দিয়েছিল কমল, ‘হ্যাঁ।’

‘এখানে এসে প্রথম রাতে বেশির ভাগ মানুষের চট করে ঘুম আসে না। তাই জিজ্ঞাসা করলাম। আসুন, এখান দিয়ে রাস্তাটা পেরিয়ে যাই।’ ভদ্রলোক ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তায় নামলেন।

কমল এখন রাস্তায় বেশ কিছু মানুষকে দ্রুত হেঁটে যেতে দেখল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল খুব ব্যস্ত তারা। শুধু পুরুষ নয়, মহিলারাও প্রায় দৌড়ে যাচ্ছেন। একটু দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে তাদের দেখছিল।

এগিয়ে যাওয়া ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে গেলেন, ‘কী ব্যাপার? কোনো সমস্যা!’

‘না না।’ কাছে এসে কমল জিজ্ঞাসা করল, ‘এই এত মানুষ ওই রকম দ্রুত হাঁটছে কেন? কোথায় যাচ্ছে?’

ভদ্রলোক হাসলেন, ‘দৃশ্যটা আপনার কাছে নতুন, তাই তো? ওরা সবাই অফিসে যাচ্ছে। এ দেশে দেরিতে অফিসে গেলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই চাকরি বাঁচাবার জন্য সবাইকে প্রয়োজনে ওভাবে দৌড়াতে হয়। আপনি প্রথম দিন অফিসে যাচ্ছেন বলে কোনো চাপ নেই। কিন্তু কাল থেকে একটু দেরি হয়ে গেলে আপনাকে নিশ্চয়ই ওভাবে হাঁটতে হবে।’

কমলের মনে পড়ল তার পাশের বাড়ির শ্যামল বাবুর কথা। তার কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি শুরু হয় সকাল ১০টায় কিন্তু তিনি বাড়ি থেকে হেলতে দুলতে বের হন ১১টা নাগাদ। তার অর্থ হলো, অফিসে যেতে অন্তত সাড়ে ১১টা বেজে যায়। এই শ্যামল বাবুরা যদি এ দেশে চাকরি করতে আসতেন তাহলে কি ১১টার সময় বাড়ি থেকে বেরুতে পারতেন?

লিফটে উঠে তাকে নিয়ে পনেরো তলায় চলে এলেন তার এসকট। বাঁ-দিকের দরজা দিয়ে ঢুকে কার্ড পাঞ্চ করে কমলকে নিয়ে একটা ঘরের সামনে রাখা সোফায় বসিয়ে ভিতরে চলে গেলেন। মিনিট পাঁচেক পর ভদ্রলোক বেরিয়ে এসে কমলকে ভিতরে নিয়ে গেলেন।

তিন দিনের মধ্যেই অফিসের কাজে মোটামুটি সড়গড় হয়ে গেল কমল। যে ভদ্রলোক তাকে প্রথম দিন সাহায্য করেছিল তার সঙ্গে রোজই এক আঙিনায় কথা হয়। কিন্তু ওটা ওপর ওপর, ঘনিষ্ঠতা করার কোনো প্রবণতা ভদ্রলোকের নেই। কমল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখল, তার অফিসের বেশির ভাগ ভারতীয় কেরালার মানুষ। ভালো ইংরেজি বলেন সবাই, হিন্দি ওদের মুখে শোনা যায় না। দুজন মহিলা আছেন যারা ইউরোপের কোনো দেশ থেকে এসেছেন, কাজের বাইরে কথা বলেন না।

তার খুব কাছে বসা যে লোকটি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে কাজ করে সে শুক্রবার লাঞ্চের সময় তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাকে তো অফিস এক মাসের জন্য হসপিটালিটি দিয়েছে। এর মধ্যে কাছাকাছি থাকার জায়গা খুঁজে নাও।’

‘নিশ্চয়ই কিন্তু কীভাবে খুঁজব তার আইডিয়া দিতে পার?’ কমল জিজ্ঞাসা করল।

‘খুব সোজা। ঠিক আছে, আজ ছুটির সময় আমি তোমাকে তিন-চারটে সিঙ্গল রুম অ্যাপার্টমেন্টের ফোন নম্বর বের করে দিয়ে দেব। কিন্তু তুমি যদি নিজে রান্না করে খেতে পার তাহলেই ওখানে গেলে তোমার সুবিধে হবে। হোটেলে খেলে অনেক বেশি খরচ হয়ে যাবে।’

‘রান্না! কখনো রান্না করিনি আমি। তবে চেষ্টা করলে ঠিক পারব।’

‘অবশ্য ঘর রেন্টে না নিয়ে তুমি কোনো পরিবারে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতে পার। শুধু বাড়ির নিয়ম-কানুন মেনে চলতে পারলে কোনো সমস্যা থাকবে না।’

মাথা নাড়ল কমল, ‘না, না, অচেনা একটা পরিবারের সঙ্গে তাদের বাড়ির নিয়ম মেনে থাকতে আমার খুব অসুবিধে হবে।’

‘তাহলে রেন্টে রুম নেওয়াই ভালো।’

ভদ্রলোকের নাম শিবকুমার। মাদ্রাজের মানুষ। আমেরিকায় আছে চার বছর। বিবাহিত কিন্তু স্ত্রীকে এখনো নিয়ে আসতে পারেনি। কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলল, ‘আর বলো না। স্ত্রীর পাসপোর্ট ছিল না। সেটা করিয়ে ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করালাম। ট্যুরিস্ট ভিসা হলে হয়তো পেতে অসুবিধে হতো না। কিন্তু আমার স্ত্রী হিসেবে এখানে থাকার জন্য যে আবেদন করা হয়েছিল তার ভিত্তিতে ভিসা দিয়ে ইউএসএ অ্যাম্বাসি আজ নয় কাল বলে এতটা দেরি করছে। তবে খবর পেয়েছি আর মাস খানেকের মধ্যে আমার স্ত্রী ভিসা পেয়ে যাবে। তখন তো আমাকে ফ্ল্যাট ভাড়া করতেই হবে।’

‘এখন কোথায় আছেন আপনি।’

‘আমরা চারজন ঘর ভাড়া করে একসঙ্গে থাকি। নিজেরাই রান্না করে খাই। অনেক কম খরচে হয়ে যায়। আমরা রুমমেটরা সবাই মাদ্রাজের মানুষ।’

মানুষটিকে ভালো লাগল কমলের। এ কদিন পাশে বসে কাজ করার সময় দেখেছে লোকটি গম্ভীর মুখে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আলাপ হওয়ার পর বুঝতে পারল বেশ মিশুকে। যাওয়ার সময় শিবকুমার বলে গেল, ‘কোনো চিন্তা করবে না। সামনের রবিবারের মধ্যেই ঘর পেয়ে যাবে।’

শুক্রবার বিকালে শিবকুমার অফিস থেকে হাঁটাপথে মিনিট বারো দূরের বাড়িতে নিয়ে গেল। ল্যান্ডলেডি কমলের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার পর ফ্ল্যাট দেখালেন। বেশ পছন্দ হলো কমলের। সবকিছু ঠিকঠাক, খাটে তোশক-গদি পাতা আছে, বেডকভার পেতে নিলেই হলো। কথা বলে ভাড়ার ব্যাপারটা ঠিক করে দিল শিবকুমার। আর কয়েক দিন পর নতুন মাস শুরু হবে। তার প্রথম দিন রবিবার। সে দিন দুপুরে চলে আসবে কমল। ঠিক করে বেরিয়ে এলো ওরা। শিবকুমার ল্যান্ডলেডিকে জানিয়ে দিল আগামীকাল কমল এসে অগ্রিম এবং চলতি মাসের ভাড়া দিয়ে যাবে।

হাঁটতে হাঁটতে শিবকুমার বলল, ‘যাক, তোমার সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। কিন্তু তুমি কি রেস্টুরেন্টেই দুই বেলা খাবে?’

‘নিজে রান্না করার যে অনেক সমস্যা।’ কমল বলল।

‘যেমন?’

‘প্রথমত, রান্নার ব্যাপারে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। দ্বিতীয়ত, রান্না করার কোনো সরঞ্জাম আমার নেই।’                 [চলবে]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর