‘দু’চোখ ভেজা জলে, দু’চোখে আগুন জ্বলে।’ আগুন ও জলের সুনিপুণ কারুকাজের একনিষ্ঠ কারিগর তিনি, আগুনজলে ধুয়েছেন দুর্বিণীত যৌবন। আবেগের বেনোজলে নিজেকে ভাসিয়ে গেয়েছেন যৌবনের জয়গান- ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ এ যৌবন কেবল প্রতিবাদ-প্রতিরোধের নয়, এ যৌবন শাশ্বত প্রেমের, নতুন সৃষ্টির। এ দুর্বিণীত যৌবনের সলতেতে যিনি আগুন জ্বেলেছেন এবং জল ঢেলেছেন, তিনি প্রেমিক ও প্রতিবাদী, কবি হেলাল হাফিজ। গত বছর (২০২৪) ১৩ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ না করলে এ বছর ৭ অক্টোবর তিনি পা রাখতেন ছিয়াত্তরে। ভক্তরা তারই কবিতা দিয়ে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেন হয়তো এভাবে- ‘তোমার জন্যে সকাল, দুপুর/ তোমার জন্যে সন্ধ্যা,/তোমার জন্যে সকল গোলাপ/ এবং রজনীগন্ধা।’
ছোটবেলা থেকে শান্ত স্বভাবের কম কথা বলা হেলাল হাফিজ হতে চেয়েছিলেন চিকিৎসক, হয়েছেন কবি। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতার কালোত্তীর্ণ দুটি পঙ্ক্তি (‘এখন যৌবন যার...) হেলাল হাফিজকে এনে দেয় তারকা কবির খ্যাতি। এ পঙ্ক্তি দুটি এখনো তরুণ সমাজের কাছে অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অনুপ্রেরণা। কিন্তু এমন উদ্দীপক কবিতার স্রষ্টা হলেও কবি হেলাল হাফিজ কেবলই একজন ‘পরিপুষ্ট প্রেমিক’। জল ও আগুনের বৈপরীত্যের মধ্যেও যে সম্মিলন, তার আরেক রূপই তো প্রেম। প্রেম ও স্বপ্নকে সুঁই-সুতো বানিয়ে কবিতার পরতে অমোঘ শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছেন হেলাল হাফিজ। তিনি নিজেকে নিভৃতে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন আলস্যজাত নীরবতায়। তাই তো স্বল্পপ্রজ, নিভৃতচারী হেলাল হাফিজ আমৃত্যু ছিলেন এক ধ্রুপদী অস্পষ্টতা, এক লাজুক প্রাণ। যে প্রাণ নিজেকে ভেজাতে পোড়াতে ভালোবাসতো শরীরী ঝরনার জলে, জলের অনলে। যে প্রাণ দ্বিধাহীন বলেছে- ‘যদি যেতে চাও, যাও/ আমি পথ হবো চরণের তলে,/ না ছুঁয়ে তোমাকে ছোঁব/ ফেরাবো না, পোড়াবোই হিমেল অনলে।’
কবি হেলাল হাফিজের কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ (১৯৮৬) ও ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ (২০১৯)-এর কিছু কবিতা, বিশেষ করে ‘কবিতা একাত্তর’ (২০১২)-এর ‘অচল প্রেমের পদ্য’ অনুশিরোনামে প্রেম-বিরহের হƒদয়গ্রাহী খুদে কবিতাগুলো দারুণভাবে বিমোহিত করে পাঠককে। তার ‘অচল প্রেমের পদ্য’-এর ভিতর পাঠক খুঁজে পান আপাত প্রতিবাদীর আড়ালে একজন পরিপূর্ণ প্রেমিককে। পদ্যগুচ্ছের অন্তরাত্মা যেন কবির নিজের জীবনের মতো ধ্রুপদী প্রেম ও রহস্যময়তায় পরিপূর্ণ।
কবিতা, প্রেম, আলস্য, আত্মপীড়ন, নিভৃতবাস এবং সময়ের অপচয় নিয়েই হেলাল হাফিজ। তরুণেরা তাঁকে ভালোবাসতেন। তরুণীরা বেশি পছন্দ করতেন। তারা হেলালের কবিতায় খুঁজে পেয়েছেন নিজেদের ব্যক্তিগত গল্প। অল্প লিখে নামজাদা হেলাল হাফিজ নিজেকে কেবল ঠকিয়েই গেছেন, আর ঠকতে ঠকতে কবি হয়ে উঠেছেন কবিতার সংসারে এক দরদি বন্ধু। যে বন্ধু কাব্যের রৌদ্রকরোজ্জ্বল উঠোনে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন- ‘কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালোবাসি।’ দীর্ঘতর বেদনায় মোড়া এ কবিজীবন যখন শুদ্ধ উচ্চারণে বলেছে- ‘হয়তো তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি/ নয় তো গিয়েছি হেরে,/ থাক না ধ্রুপদী অস্পষ্টতা/ কে কাকে গেলাম ছেড়ে।’ তখন কার না মন ছুঁয়ে যায় মুগ্ধতায়। এসব পঙ্্ক্তি ভালো লাগার কী কোনো বয়স আছে! ভালো লাগার বয়স নেই বলে ভালো লাগে শুনতে- ‘আমাকে উস্টা মেরে দিব্যি যাচ্ছো চলে,/ দেখি দেখি/ বাঁ পায়ের চারু নখে চোট লাগেনি তো?/ ইস! করেছো কি? বসো না লক্ষ্মীটি,/ ক্ষমার রুমালে মুছে সজীব ক্ষতেই/ এন্টিসেপটিক দুটো চুমো দিয়ে দেই।’ কিংবা ‘নখের নিচে রেখেছিলাম/ তোমার জন্য প্রেম,/ কাটতে কাটতে সব খোয়ালাম/ বললে না তো,-‘শ্যাম’/’ অথবা- ‘আছি।/ বড্ড জানান দিতে ইচ্ছে করে,/ আছি,/ মনে ও মগজে/ গুন্ গুন্ করে / প্রণয়ের মৌমাছি।’
নেত্রকোনার আটপাড়ার (উপজেলা) বড়তলীর (গ্রাম) তালুকদার বাড়ির পুত হেলালের বাবা খোরশেদ আলী তালুকদার; মা কোকিলা বেগম। তাঁর কবি হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান নারীর। তিনি এক জীবনে খণ্ড খণ্ড ভালোবাসা পেয়েছেন আর সেই ভালোবাসা বেদনা হয়ে তাঁকে দিয়ে কবিতা লিখিয়ে নিয়েছে। আর কবি দিনের পর দিন উপভোগ করে গেছেন ভক্তের ভালোবাসা। দুঃখ ও বেদনাকে সবাই উপভোগ করতে পারে না। কিন্তু কবি হেলাল হাফিজ সেটা ভালো করেই রপ্ত করেছিলেন। তিন বছর বয়সে মাকে হারান। দ্বিতীয় মা পেয়েছেন শিশুকালে। কিন্তু বড় হয়ে বুঝেছেন গর্ভধারিণীই প্রকৃত মা।
হেলাল হাফিজ দেশের কবিতাঙ্গনে পা রেখেছিলেন ষাট দশকের মাঝামাঝি এবং সাংবাদিকতা (সাহিত্য) পেশায় যোগ দেন বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে। কাজ করেছেন পূর্বদেশ, দেশ ও যুগান্তর- এই তিন দৈনিকে। হেলাল হাফিজ ছিলেন বড় দুঃখপ্রিয় মানুষ। দুঃখ-বেদনা তাঁকে কবি করে তুলেছে। মাতৃহীনতার বেদনা, একাকিত্বের বেদনা, অপ্রাপ্তির বেদনা আর ভালোবাসাজাত মিহি বেদনার মিশিলে তিনি হেলাল হাফিজ। এই বেদনাময় ভালোবাসা তাঁকে বোহিমিয়ান করেছে আর অভিমানী। তাঁর কবি হয়ে ওঠার কাহিনির বেশির ভাগই তাঁর ভালোবাসা আর নিজস্ব বেদনার গল্প। যেখানে কবিপ্রাণ ‘এতো ভালোবাসা পেয়ে, ভিতরে ভীষণ লাজে বেদনারা লাল হয়ে গেছে।’ ব্যক্তিগত জীবনে কবি ছিলেন নিজের কবিতার মতোই নারীর দারুণ ভক্ত। ডিজিটাল জামানার আগে মেয়েদের কাছ থেকে গাদা গাদা প্রেমপত্র পেয়েছেন। আর শেষ জীবনে ফেসবুক কন্যাদের কাছ থেকে নিয়মিত পেয়েছেন ‘ভার্চুয়াল লাভ’। শৈশবে প্রায়ই কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে হঠাৎ হাওয়া হয়ে যেতেন। এ যেন- ‘কোনোদিন, আচমকা, একদিন/ ভালোবাসা এসে যদি হুট করে বলে বসে,/ ‘চলো’, যেদিকে দু’চোখ যায় চলে যাই,/ যাবে?’
স্কুল-কলেজের জীবন কেটেছে মফস্বল শহর নেত্রকোনায় দিনভর মাঠে-ময়দানে আর রাতভর কাব্যকাননে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর কবির মগজে পাকাপাকি বাসা বাঁধে বোহিমিয়ানতা। সোজা বাংলায় যাকে বলা যেতে পারে ছন্নছাড়া ভবঘুরে স্বভাব। একটা সময় একঘেয়েমি কাটাতে চাকরি ও লেখালেখি ছেড়ে দিবানিশি তাস খেলেছেন। আবার কখনো বা অর্থের বিনিময়ে জিগোলো হয়ে বিত্তশালী নারীদের সঙ্গ দিয়েছেন। যখন ধূমপান, মদ্যপান, জুয়াখেলা ছেড়ে ফেসবুকের নতুন নেশায় মাতোয়ারা হয়ে সাতসকাল থেকে মধ্যরাত অবধি অফুরান সময় কাটিয়েছেন ভার্চুয়াল আলাপচারিতায়। এই বয়সি তরুণের ফেসবুক বন্ধুদের গরিষ্ঠসংখ্যকই ছিলেন রমণীকুল। একসময় মাত্রাতিরিক্ত ফেসবুক আসক্তি তাঁর স্বাস্থ্যকে ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। স্ক্রিনের উজ্জ্বল আলোয় চোখে বাসা বাঁধে গ্লুকোমা। কমে আসে দৃষ্টিশক্তি। ডায়াবেটিস বাধাগ্রস্ত করে কিডনির কার্যক্রম। স্নায়ুরোগ ক্রমেই দুর্বল করে ফেলে প্রেম ও দ্রোহের কবিকে।
কবিতায় নিজের ‘নিরাশ্রয় পাঁচটি আঙুল’ নির্দ্বিধায় অলংকার করে নিতে বলেছিলেন হেলাল হাফিজ তাঁর বাল্যপ্রেমিকা হেলেনকে। হেলালের প্রথম প্রেম হেলেনের অজানা থাকেনি তাঁর কবির আঙুল অ্যান্ড্রয়েডের উজ্জ্বল স্ক্রিনে ভেসে ওঠা কত ভার্চুয়াল মুখ স্পর্শ করেছে সকাল-সন্ধ্যা। নেটদুনিয়ার তরুণ বান্ধবীদের সঙ্গে মেসেঞ্জারের ইনবক্সে খুনসুটির মাঝে হাতড়ে বেড়িয়েছেন বন্ধুর ছোটবোন হেলেনকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিময় ক্যাম্পাসের সেই সোনালি দিনগুলো। স্মৃতি রোমন্থন করেছেন সবিতাদির স্নেহের আঁচলের নিচে ক্ষণিকের এক টুকরো আশ্রয়। বয়সে বড় জ্ঞাতিবোন রেণু সে-সময় কবির অন্যতম কাব্যলক্ষ্মী। রেণু আপা একা নন, কবিকে আরও প্রভাবিত করেছেন মিস্ট্রেস সবিতা সেন, যিনি ছিলেন রেণু আপার প্রায় সমবয়সি। কবিতায় অনেকের নাম এলেও কিন্তু কখনই রেণু আপাকে আনেননি কবি, খুব সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছেন এই অবমিশ্র প্রেম। এড়িয়ে গিয়েছেন আরও একটি নাম, অসম প্রেমের সেই নাম- মধুবালা। অষ্টাদশী মধুবালাকে নিয়ে সংসারের স্বপ্ন বুনেছিলেন। সেই স্বপ্নে কিছুকাল বুঁদ হয়ে ছিলেন দুজনা। হঠাৎ একদিন কবি তাঁর তরুণী প্রেয়সীর অত্যাসন্ন অকাল বৈধব্যের শঙ্কায় স্বেচ্ছায় নিজের স্বপ্ন আকাশে উড়িয়ে দেন বাদল মেঘের সাথে। মধুবালা অতঃপর মেঘবালিকা হয়ে যান। কবি জীবনের বাঁকে বাঁকে খুঁজেছেন স্বপ্নের মলাটে মোড়ানো তারুণ্যময় সোনালি অতীতকে। সেখানে কত স্মৃতি কত আনন্দ-বেদনা। নারীকে তিনি স্নেহ মায়া মমতা ও ভক্তির পূর্ণতায় ভালোবেসেছেন। তারপরও তরুণ ভক্তদের প্রায় বলতেন, নারীকে অন্ধ বিশ্বাস করো না, আবার অবিশ্বাসও করো না।
প্রেম ও বিরহের বয়স নেই, তেমনি কবির কাব্য ভাবনারও। মানুষ বুড়ো হলেও মানুষের মন তো বুড়ো হয় না কখনো। আর কবি তো রক্ত-মাংসেরই মানুষ। তাই তো বৃদ্ধবেলায়ও হেলাল হাফিজের আঙুল ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভালোবাসা ছড়িয়েছে। সেই ভালোবাসায় কবি আবিষ্কার করেছেন যৌবনের নিজেকে, নিজের না-পাওয়াকে। হেলাল-হেলেনের ধ্রুপদী প্রেম, পাওয়া-না-পাওয়ার কাব্য, আনন্দ ছাপিয়ে বেদনার প্রগাঢ় অনুভূতি তো জীবনেরই গল্প। এসব গল্পের ক্যানভাসে আঁকা কবিতার ভেতর কেবলই গভীর শূন্যতা। হেলাল হাফিজ ছিলেন আগাগোড়া ধ্রুপদী অস্পষ্টতায় মোড়া এক প্রাণ। তাঁর যাপিতজীবন একটি বেদনার গল্প, যেখানে না পাওয়ার দুঃখ ও নিঃসঙ্গতা হাত ধরাধরি করে থাকে। সারাটা জীবন একাকিত্বের বোঝা বয়ে বেড়িয়েছেন শখের বৈরাগ্যে। কষ্টের মোড়কে লুকিয়ে রেখেছেন ব্যক্তিজীবনের গল্প। যে গল্পের উঠানে হেলেন-সবিতারা সংগোপনে অশ্রু ঝরায় শ্রাবণের মেঘ হয়ে। নিঝুম রাতে যখন বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতেন কবি, তখন অ্যান্ড্রয়েডের স্ক্রিন থেকে বেরিয়ে এসে কেউ কী তাঁর চুলে বিলি কেটে বলেছে- এই তো আমি! কবি কী তখন কল্পনায় কারোকে হেলেন-সবিতাদি কিংবা হালের মধুবালা ভেবে বলেছিলেন- তোমাকে দূর থেকে ভালোবাসার আনন্দ অন্যরকম এক বেদনা!
চিরস্থায়ী সংসারবিমুখ হেলাল হাফিজ জীবন সায়াহ্ণে এসে আক্ষেপ করে বলেছিলেন- ‘আমার আর ঘর হলো না, সংসার হলো না, অর্থকড়ি হলো না, প্রতিষ্ঠা হলো না।’ কবি ‘জীবনের প্রায় শেষপ্রান্তে’ দাঁড়িয়ে নিজেকে মূল্যায়ন করেছেন এভাবে- ‘এখন কেবলই আমার মনে হয়, জীবনের সময়গুলো বৃথাই অপচয় করেছি। কত সুন্দর সুন্দর কবিতার পঙ্ক্তি এসেছে মাথায়, আমি টেবিলে বসিনি, লিখিনি। জীবনটা অপচয়ই করেছি বলা যায়। এ জন্য আমি এখন ভীষণভাবে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী।’
অনেক দেরিতে হেলাল হাফিজের ভাগ্যে জোটে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০১৩)। একুশে পদক জীবদ্দশায় মেলেনি। পেয়েছেন মরণোত্তর, চলতি বছর (২০২৫)। পুরস্কারের ঝুড়িতে একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদকের মতো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার উঠল কি উঠল না এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ-অনুযোগ ছিল না তাঁর। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে জীবনের সলতে নিভে যেতে পারতো, ভাগ্যক্রমে সেই জীবনই উদ্যাপন করেছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। স্বাধীনতার উদ্দীপনাময় কবিতার রচয়িতা হেলাল হাফিজ প্রায়ই বলতেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সাক্ষী হতে পারা তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ আনন্দ।
আত্মীয়স্বজন থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসিত জীবনযাপন করেছেন তোপখানা রোডের একটি আবাসিক হোটেলের এক চিলতে কক্ষে। এরপর পরিবাগের সুইট হোম নামের হোস্টেলে। নানা রঙের দিন পেরিয়ে শেষ জীবনের দিনগুলো তাঁর কেটেছে এখানে। নিঃসঙ্গ কবি একাকিত্বের দহন নিয়ে সবার অগোচরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই সুইট হোমে। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় একটি বেদনার গল্প।
হেলাল হাফিজের কবিজীবনের বড় সৌন্দর্য ছিল শূন্যতা। শূন্যতার ভেতর তিনি খুঁজেছেন নিজেকে। আমৃত্যু ‘এখন যৌবন যার’, সেই নবীনের সঙ্গ নিয়ে উজ্জীবিত থাকার চেষ্টা করেছেন। একাকিত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করেছেন বৈ কি। তবে স্বেচ্ছা-নিঃসঙ্গতা, একা থাকার আনন্দ-বেদনা, নিজের প্রতি নিজের অবহেলা, সব মিলিয়ে সমগ্র হেলাল হাফিজের জীবন রসায়ন ছিল, মানুষ প্রকৃতই একা।