শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

শতবর্ষী বালুভরা আর. বি উচ্চ বিদ্যালয়ের সবিতা গ্রন্থাগার

গড়ে তোলা হয় সবিতা চক্রবর্তী স্মৃতি গ্রন্থাগার। এখানে মোট ৩ হাজার ৭২৬টি বই রয়েছে। আরও রয়েছে দুপ্রাপ্য ছবি গ্যালারি...

নিজস্ব প্রতিবেদক

শতবর্ষী বালুভরা আর. বি উচ্চ বিদ্যালয়ের সবিতা গ্রন্থাগার

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বালুভরা আর. বি উচ্চ বিদ্যালয়ের সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারটি একদিকে বিদ্যালয়ের খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণের সুযোগ প্রসারিত করেছে। ১০৪ বছর বয়সের প্রাচীন এই বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষবিস্তারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে জাতির নিরবচ্ছিন্ন সেবা করে যাচ্ছেন। লাইব্রেরিতে প্রদর্শিত বাংলাদেশসহ বিশ্বের বরেণ্য মনীষীদের ছবি এক অনন্য দৃষ্টান্ত। স্কুল পর্যায়ে এমন সমৃদ্ধ এবং দর্শনীয় লাইব্রেরি বিরল ঘটনা। এর পাশাপাশি নিজ বিদ্যালয়টির উন্নয়ন, জ্ঞান অর্জনের ত্র হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। তাদেরই একজন সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। বর্তমানে তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদে নিয়োজিত রয়েছেন। তারই প্রচেষ্টায় কেবল বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সক্রিয় উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে সবিতা চক্রবর্তী স্মৃতি গ্রন্থাগার।  কোনো মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ে এমন সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার কোথাও আছে বলে প্রতীয়মান হয়নি। এই গ্রন্থাগারে মোট ৩ হাজার ৭২৬টি বই রয়েছে। বইয়ের তালিকায় রয়েছে স্থানীয়, জাতীয় এবং বিশ্বখ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের জীবনী, শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, ক্রীড়াবিদ, রাজনীতিবিদ, চলচ্চিত্রকার, চলচ্চিত্র শিল্পী, ইতিহাসবিদদের জীবনী, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন লেখা, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, নোভেল, কাব্যগ্রন্থ, রবীন্দ্র রচনাবলী, নজরুল রচনাবলী, ধর্মীয় গ্রন্থসামগ্রী, গবেষণামূলক লেখা, শিশুতোষ লেখাসহ সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যম এই গ্রন্থাগারটিকে করেছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক মাসুদা আক্তার জানালেন, ছাত্রছাত্রীদের গ্রন্থাগারে এসে বই পড়ার আগ্রহ বেশ। সপ্তাহে পাঁচ দিন প্রতিদিন একটি করে পাঁচটি ক্লাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ক্লাস রুটিনে। রুটিন মাফিক ক্লাসে এসে তারা তাদের চাহিদামতো বই নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। এখানে বই পড়া শেষে পুনরায় বইটি ফেরত দিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বই এবং শিশুতোষ বই পড়তে বেশি আগ্রহী বলে মনে হয়। এই গ্রন্থাগারের উলেøখযোগ্য এবং বিরল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিদের ছবি টানিয়ে রাখা। সংগৃহীত বইগুলোর মতোই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ক্রীড়া, রাজনীতি, শিল্পী, দার্শনিক, চলচ্চিত্র শিল্পী, চলচ্চিত্রকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রনায়কদের দুষ্প্রাপ্য সব ছবি এখানে চারদিকের দেয়ালে সারিবদ্ধভাবে টানানো রয়েছে। এসব ছবির মধ্যে বঙ্গবন্ধু থেকে মাও সে তুং, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে সেকসপিয়র, হাছন রাজা থেকে লালন ফকির, কোনোটাই বাদ পড়েনি। দুষ্প্রাপ্য এই কালেকশন সত্যিই যে কোনো মানুষকে অভিভ‚ত করে। ছবির এই গ্যালারিতে মোট ৩ শতাধিক ছবি ঠাঁই পেয়েছে। ছবির তালিকা আরও বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র প্রীতম কুমার চক্রবর্তী ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী যুঁথি আক্তার তারা দুজনই এই লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক। তারা বেশির ভাগ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই পড়ে থাকে। তারা বলেছে এই গ্রন্থাগারে বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সঠিক এবং বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোত্তালেব হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জন থেকে শুরু করে সবদিকে আমরা সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। যাতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষিত ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

সর্বশেষ খবর