শিরোনাম
শনিবার, ১১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
এক তামান্নার গল্প

পা দিয়ে লিখে জিপিএ ৫

সাইফুল ইসলাম, যশোর

পা দিয়ে লিখে জিপিএ ৫
২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যেদিন তার জন্ম হয়, শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানকে দেখে মন খারাপ হয়েছিল বাবা-মায়ের। কিন্তু হাল ছাড়েননি তারা। ৬ বছর বয়সেই পায়ের আঙ্গুলে পেনসিল, কলম দিয়ে তামান্নাকে লেখা শেখানোর চেষ্টা শুরু করেন তার মা। ভর্তি করান বাঁকড়ার আজমাইন এডাস স্কুলে। মাত্র দুই মাসে পা দিয়ে লিখতে শিখে ফেলে সে। এমনকি পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম দিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবিও আঁকতে শুরু করে তামান্না। যে কোনো পড়া খুব সহজেই আত্মস্থ হয়ে যায় তার। এসব দেখে আরও উৎসাহিত হয় পরিবারের লোকজন...

 

চার হাত-পায়ের মধ্যে তিনটিই নেই জন্ম থেকে। আছে কেবল একটি পা। সেই পা দিয়ে লিখেই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়ার মেয়ে তামান্না। শুধু এটুকু বললে তামান্নার কীর্তির খুব সামান্যই বলা হয়। বিধাতা হয়তো তামান্নাকে তিনটি হাত-পা দেননি। কিন্তু চার হাত-পায়ের যোগ্যতা শতগুণ বাড়িয়ে ঢেলে দিয়েছেন একটি পায়ে। যেন সোনার পা! সেই পা দিয়ে লিখেই ২০১৩ সালে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫, জেএসসিতেও জিপিএ-৫। এবার এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের মোড়লপাড়া গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীনের বড় সন্তান তামান্না। ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যেদিন তার জন্ম হয়, শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানকে দেখে মন খারাপ হয়েছিল বাবা-মায়ের। কিন্তু হাল ছাড়েননি তারা। ৬ বছর বয়সেই পায়ের আঙ্গুলে পেনসিল, কলম দিয়ে তামান্নাকে লেখা শেখানোর চেষ্টা শুরু করেন তারা মা। ভর্তি করান বাঁকড়ার আজমাইন এডাস স্কুলে। মাত্র দুই মাসে পা দিয়ে লিখতে শিখে ফেলে সে। এমনকি পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম দিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবিও আঁকতে শুরু করে তামান্না। যে কোনো পড়া খুব সহজেই আত্মস্থ হয়ে যায় তার। এসব দেখে আরও উৎসাহিত হয় পরিবারের লোকজন। বাবা-মাই তামান্নাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করতেন। এ স্কুল থেকেই ২০১৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) জিপিএ-৫ পায় তামান্না। বৃত্তিও পায়। এরপর তামান্নাকে ভর্তি করা হয় বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুল থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায় সে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দীন বলেন, চৌকিতে বসে সামনে খাতা রেখে বা পায়ের আঙ্গুলে ধরা কলম দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেয় সে। তার লেখা খুবই স্পষ্ট ও সুন্দর’।

তামান্নার বাবা রওশন আলী ছোটখাটো ব্যবসা করেন। তামান্নার ছোট বোন রশ্মি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ভাই তাজের বয়স চার। দরিদ্র এই পরিবারে ফোটা পদ্মফুল তামান্নাকে নিয়ে এখন চিন্তিত তার বাবা-মা। শরীরে একটি মশা বসলেও তা তাড়াতে পারে না সে। সবসময় তার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। আগামীতে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চায় সে। সেজন্য এখন শহরে গিয়ে ভালো একটা কলেজে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু এমন মেয়েকে শহরে রেখে পড়াতে গেলে তো অনেক খরচের ব্যাপার। তাই বলে কী থেমে যাবে তামান্নার এগিয়ে চলা?

সর্বশেষ খবর