শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পিঁয়াজ বীজের রাজকন্যা

এখন আমি দেশসেরা একজন পিঁয়াজ আবাদকারী। এ জন্য আমি গর্বিত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন আমার কাছে। তারা পিঁয়াজ বীজ কিনে নিয়ে যান, পরামর্শ চান।

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

পিঁয়াজ বীজের রাজকন্যা

‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিত পিঁয়াজ বীজ চাষে কয়েক বছর ধরে অসামান্য সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছেন ফরিদপুরের বর্ধিত পৌরসভার  গোবিন্দপুর এলাকার কৃষানি সাহেদা বেগম। সারা দেশের মধ্যে পিঁয়াজ বীজ আবাদে তার ধারেকাছেও নেই কেউ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পিঁয়াজ বীজ কিনতে সাহিদা বেগমের বাড়িতে ছুটে আসছেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। শুধু পিঁয়াজ বীজ ব্যবসায়ী কিংবা চাষিরাই নন, সাহিদা বেগমের পিঁয়াজ বীজ খেত দেখতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছুটে আসছেন। অনেকেই সাহিদা বেগমের কাছে আসছেন পিঁয়াজ বীজ আবাদের কলাকৌশল জানতে। দেশে পিঁয়াজ বীজ চাষে অসামান্য অবদান রাখায় সাহিদা বেগম এখন ‘পিঁয়াজ বীজের রাজকন্যা’ হিসেবে অভিহিত হচ্ছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন দেশসেরা নারী কৃষকের সম্মান। চ্যানেল আই কর্তৃক পাঁচ লাখ টাকার পুরস্কারও পান এ বছর। একসময় গৃহস্থালি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা সাহিদা বেগম এখন কৃষক-কৃষানিদের রোলমডেল। ঘর সামলিয়ে কৃষিকাজ করে কোটি টাকা আয়ের যে পথ তিনি তৈরি করেছেন তা এককথায় অবিশ্বাস্য হলেও মোটেও সিনেমার কোনো কল্পকাহিনী নয়। যদিও সাহিদা বেগমের এ সাফল্যের যাত্রাটি খুব একটা সুখকর ছিল না।

দীর্ঘ আলাপে সাহিদা বেগম তার সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, ’৮৭ সালে যখন বিয়ে হয়, স্বামীর সংসারে আসি তখন কৃষিকাজ করতে পারিনি। কেননা বাবার বাড়িতে কখনই কৃষিকাজ করিনি। তবে স্বামীর বাড়িতে আসার পর কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই। নিজের বাড়ির উঠানে লাউ, শিমসহ বিভিন্ন শাকসবজির চাষ শুরু করি। শ্বশুরবাড়ির লোকজন পিঁয়াজ বীজের আবাদ করতেন। আমার স্বামী বক্তার খান একজন ব্যাংকার। ফলে অনেক সময় সে মাঠে গিয়ে কামলাদের সঙ্গে কাজ করতে পারতেন না। আমি মাঝেমধ্যে খেত তৈরির সময় মাঠে গিয়ে দেখভাল করতাম। সেই থেকেই শুরু কৃষির প্রতি আলাদা ভালোবাসা। ১৮ বছর ধরে পিঁয়াজ বীজের আবাদ করে আসছি। শুরু থেকে বেশ কয়েক বছর তেমন কোনো লাভ হয়নি। অনেক টাকা ক্ষতি হয় পিঁয়াজ বীজের আবাদ করে। তবু হাল ছাড়িনি। স্বামীর উৎসাহ আর কৃষির প্রতি আলাদা টান থাকায় পড়ে ছিলাম পিঁয়াজ বীজ আবাদে। আমার ধারণা ছিল আমি একদিন সফল হবই। আমার সে আশা পূরণ হয়েছে। এখন আমি দেশসেরা একজন পিঁয়াজ আবাদকারী। এ জন্য আমি গর্বিত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন আমার কাছে। তারা পিঁয়াজ বীজ কিনে নিয়ে যান, পরামর্শ চান। আমি আমার সাধ্যমতো তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। সাহিদা বেগম জানালেন, কয়েক বছর ধরে পিঁয়াজের দাম ভালো থাকায় তিনি লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন। ফলে আগে যেখানে আবাদ করতেন ৫-৬ একর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ একরে। দিন দিন বাড়াচ্ছেন পিঁয়াজ বীজ আবাদ। এ বছর তিনি রেকর্ড সংখ্যক ২০০ মণ পিঁয়াজ বীজ বিক্রি করেছেন। প্রতি মণ বিক্রি করেছেন ২ লাখ টাকা করে।  সেই হিসাবে ৪ কোটি টাকার বীজ বিক্রি করেছেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর