শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

দুই হাত ছাড়াই সফল সেই ফাল্গুনি...

শনিবার সকাল ডেস্ক

দুই হাত ছাড়াই সফল সেই ফাল্গুনি...

আট-দশটি শিশুর মতোই হেসেখেলে বেড়ে উঠছিলেন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার জগদিশচন্দ্র সাহার মেয়ে ফাল্গুনি সাহা। তখন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী তিনি। হঠাৎ একটি দুর্ঘটনায় তার স্বাভাবিক জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। ঘটনাটি ২০০২ সালের। পাশের বাড়ির ছাদে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সময় হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎবাহী তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার দুই হাতের কনুই পর্যন্ত পুড়ে যায়। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ফাল্গুনিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। দেশে চিকিৎসায় ভালো না হওয়ায় একসময় কলকাতাও নেওয়া হয় তাকে। প্রথমে কলকাতায় বেসরকারি হাসপাতালে তাকে ভর্তি নিতে চায়নি। পরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ততদিনে তার হাতে পচন শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে কলকাতার ডাক্তার বলেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে। এভাবে পচতে থাকলে একসময় ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে। তাই হাতের কনুই আর রাখা যাবে না। কনুই থেকে কেটে ফেলা হলো দুই হাত। হাতের ঘা শুকাতে চার মাসের মতো সময় লাগল। এরপর কেটে গেছে কয়েক বছর। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনি এখন সফল নারী। অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা। দুই হাত ছাড়াই পেরিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ-ি। পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে। অনার্সে তিনি সিজিপিএ-৩.৫০ অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কয়েকদিন পর হারান বাবাকে। তবে তার জীবনযুদ্ধ থেমে থাকেনি। ফাল্গুনি এখন দেশের একটি বেসরকারি কোম্পানির হিউম্যান রিসোর্স অফিসার। তার হাত দুটি নেই বললেই চলে। এতে দমে যাননি ফাল্গুনি। কাগজ-কলম দেখলে মন খারাপ হতো তার। সহপাঠীদের স্কুলে যেতে দেখলে চোখের কোণে জল আসত। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে কিছুই অসম্ভব নয়। তবে আমি কেন পারব না।’ সাহস করে একদিন কলম নিয়ে খাতায় লিখতে চেষ্টা করলেন। এভাবে প্রায়ই দুই হাতের কনুইয়ের মাঝখানে কলম রেখে লেখার কৌশল আয়ত্ত করতেন। এতে সফল হয়েছেন তিনি। দীর্ঘ পথচলায় পাশে থাকার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ফাল্গুনি।       

 

সর্বশেষ খবর