শিরোনাম
শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

অনন্য নজির রিকশাচালকের

কলেজের জন্য ১০০ শতাংশ জমি দান

শনিবারের সকাল ডেস্ক

অনন্য নজির রিকশাচালকের

আমি পরিশ্রম করে ছোট থেকে বড় হয়েছি। কষ্টগুলো আমার এখনো মনে পড়ে। দৈনিক রিকশা চালিয়ে টাকা উপার্জন করে এ জমি ক্রয় করি।  এখানে কলেজ স্থাপনের পর সুশিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়বে সমাজে। আমি এ জমি দিতে পেরে খুবই খুশি।

 

কথায় আছে বিত্তের চেয়ে চিত্ত বড়।  মানুষের পরিচয় তার উদারতায়। যে মানুষ যত বেশি উদার, তিনি ততটাই মহৎ। সম্পদশালী হয়েও অনেকেই সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারেন না। এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নোয়াখালীর এক সাধারণ মানুষ। বড় হৃদয়ের অধিকারী এই অসাধারণ মানুষটির নাম ছৈয়দ আহম্মদ। একসময় তিনি রিকশা চালাতেন। পারিবারিক অবস্থার পরিবর্তন হওয়ায় কয়েক বছর আগে তিনি রিকশা চালানো বন্ধ করে দেন। এলাকায় কলেজ স্থাপনে জমি দানের ঘোষণা দিয়ে তিনি সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সম্প্রতি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে কলেজ স্থাপনের জন্য ১০০ শতাংশ জমি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ছৈয়দ আহম্মদ। তিনি উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের মৃত আলী আহম্মদের ছেলে এবং পেশায় একজন রিকশাচালক ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছৈয়দ আহম্মদ প্রায় ৩৮-৩৯ বছর ধরে প্যাডেল রিকশা চালাতেন। তাঁর তিন ছেলে ও চার মেয়ে। এক ছেলে প্রবাসে থাকেন। একজন ব্যবসা করেন। অন্যজন বর্তমানে বাড়িতে রয়েছেন। পরিবার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৫ বছর আগে তিনি রিকশা চালানো বন্ধ করে দেন।

জানা যায়, প্রায় ৪০ বছর ধরে উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামের একটি বাড়িতে থাকতেন। রিকশা চালানোর উপার্জন দিয়ে ক্রয় করেন জমি। অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করলেও বর্তমানে চর ওয়াপদা ইউনিয়নে স্থায়ীভাবে তাঁর ক্রয়কৃত জমিতে বসবাস করছেন তিনি। সেখানে একাধিক বিত্তবান পরিবার থাকলেও কলেজ স্থাপনের জন্য কেউ জমি দিতে রাজি হননি। তিনি স্বেচ্ছায় এ জমি দান করে সমাজে একটি বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি কলেজ স্থাপনের জন্য যে জমিটি দিয়েছেন তার বর্তমান মূল্য প্রায় ৪৫-৫০ লাখ টাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আরিজ খান জানান, গত মাসের ২৯ জুলাই বিকালে উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নে থানারহাট            বাজার এলাকার কিছু শিক্ষিত যুবকের উদ্যোগে এ এলাকায় কলেজ স্থাপনের জন্য একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।  কিন্তু সভায় জমি দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। ঠিক তখনই মাইকের আওয়াজ শুনে ছৈয়দ আহম্মদ মিয়া কলেজের জন্য জমি দিতে ছুটে আসেন। তিনি ওই আলোচনা সভার কোনো অতিথিও ছিলেন না। তাঁর এমন আগ্রহ দেখে সভার অতিথিসহ সবাই মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করতে থাকেন।

জমির দাতা ছৈয়দ আহম্মদ জানান, ‘আমি পরিশ্রম করে ছোট থেকে বড় হয়েছি। কষ্টগুলো আমার এখনো মনে পড়ে।

দৈনিক রিকশা চালিয়ে টাকা উপার্জন করে আমি এ জমি ক্রয় করি। এখানে কলেজ স্থাপনের পর সুশিক্ষার আলো ছড়িয়ে  পড়বে সমাজে। আমি এ জমি কলেজ স্থাপনের জন্য দিতে পেরে খুবই খুশি।’ তবে তিনি রিকশাচালক পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। পেশা যেই হোক মনের তৃপ্তিই বড় ধন বলে মনে করেন তিনি।

২৯ জুলাই বিকালে উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নে থানারহাট বাজার এলাকায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য মুজিব চত্বর সংলগ্ন এলাকায় এক মতবিনিময় সভা হয়। ওই সভায় ছৈয়দ আহম্মদ এ জমি দানের জন্য ঘোষণা দেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর