শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ পিরোজপুরের আবুল খান

জামশেদ আলম রনি

যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ পিরোজপুরের আবুল খান

আবুল বি. খান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ব্যবসায় সাফল্য পান। ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন দেশটির মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে। নির্বাচিত হয়েছেন নিউহ্যাম্পশায়ারের স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ। সহজ ভাষায়- তিনি লোকাল এমপি। গুরুত্বপূর্ণ এই পদে রিপাবলিকান দলের হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে তিনি প্রবাসী ও স্থানীয়দের বিপুল সমর্থন লাভ করেছেন। কদিন আগে এসেছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে। বলেছেন তাঁর অভাবনীয় এ সাফল্যের গল্প-

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী আবুল বাশার খান। শিক্ষার্থী হিসেবে যিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে দেশটির রাজনীতিতে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন কঠোর পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তার ফলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে তিন বছর অধ্যয়নের পর ১৯৮১ সালের ১০ জানুয়ারি স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যান আবুল বি. খান এবং সেখানেই স্থায়ী হন। ধীরে ধীরে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। মার্কিন রাজনীতিতে নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্য বরাবরই রিপাবলিকান পার্টির দখলে। দলটির সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি তাদের জন্য কাজ করা শুরু করেন। নিউ হ্যাম্পশায়ার স্টেটে তাঁর নির্বাচনী এলাকা রকিংহাম-২০ ডিস্ট্রিক্টে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। মার্কিন রাজনীতিতে তাঁর এই অবিস্মরণীয় উত্থান নতুন প্রজন্মের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা বলে মনে করছেন সেখানকার স্থানীয় কমিউনিটির বাংলাদেশি মানুষেরা। ২০০৬ সালে রিপালিকান দলের সমর্থন নিয়ে ছোট্ট একটি পদে তিনি নির্বাচিত হন। তারপর থেকে আবুল বি. খানকে মানুষ চিনতে শুরু করেন। ২০০৮ সালে সেখানকার সিলেক্টম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত পঞ্চমবারের মতো ওই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া রিপাবলিকান দলের সমর্থন নিয়ে শেতাঙ্গদের বিপুল ভোটে তিনি রকিংহাম-২০ নির্বাচনী এলাকা থেকে নিউ হ্যাম্পশায়ার হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য হিসেবে চারবারের মতো দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিন অফিসে এক আলাপচারিতায় তার এই সফলতার গল্প শোনান। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার এই পথচলা দীর্ঘদিনের। কিন্তু আমার মধ্যে দৃঢ়তা ছিল নিজ কমিউনিটির মানুষকে আমি সেবা দিব। আশপাশের লোকদের আমি যেন সাহায্য করতে পারি। তাদের জন্য আমি যেন কিছু করতে পারি, আমার স্টেটের জন্য, আমার দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা সব সময় আমার ছিল এবং আছে। তারপর থেকে চতুর্থবারের মতো স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে কাজ করছি।’

মার্কিন রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা বাংলাদেশ থেকে যাই তারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা প্রোপার্টি নিয়ে কাজ করে থাকি। কিন্তু আমরা কখনো লজ্জা কিংবা ভয়ে সেখানকার রাজনীতিতে জড়িত হতে চাই না। এটা গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া। ছোট্ট একটি জায়গায় প্রবেশ করে তারপর ধীরে ধীরে একটা অবস্থানে যাওয়া- এটা আমাদের বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি যে আমরা যারা বিদেশে আছি কেবল আমেরিকার জন্য নয়; বিশ্বের যে কোনো জায়গার ক্ষেত্রে এটি হতে পারে। এসব কারণে আমিও ঠিক ছোট্ট জায়গা থেকে শুরু করি, তারপর আমার পরিচিতি বাড়তে থাকে যেখানে আমি থাকি। আমার ফ্যামিলিকে চেনা শুরু করে সবাই। আমাকে চেনা শুরু করে, আমি কী চাই। যেহেতু সেখানে কোনো বাঙালি ছিল না এক কথায় আমেরিকানদের আধিপত্য, সেখানে মার্কিনিদের সন্তুষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। নির্বাচনের আগে, ক্যাম্পেইনের সময়, নির্বাচনের দিন একটু একটু এগোনো ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমি বলব, বাংলাদেশিরা যেখানে যে অবস্থায় আছেন আমরা কিছু না কিছু বড় বড় ট্যাক্স প্রদান করি ওই শহরে। ওই স্টেটের স্থানীয় রাজনীতি কিংবা মার্কিন রাজনীতিতে আমাদের জড়িত হওয়া উচিত যাতে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে পারি।’ বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করে মার্কিন এই রাজনীতিবিদ বলেন, সম্প্রতি আমি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। বিশেষ করে বরিশাল এবং পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় গিয়েছি। সেখানে যেভাবে দেখেছি যাতায়াত ব্যবস্থা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হয়েছে তা এক কথায় অভাবনীয়। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের পলিসির কারণে এসব অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।’ জানা যায়, আবুল খান যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। পরবর্তীতে ২০০০ সালে তিনি নিউ হ্যাম্পশায়ারের সিব্রুক শহরে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্রয় করেন। সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য বিক্রয়ের পাশাপাশি একটি গ্যাস স্টেশনও ছিল। বাশার প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন ২০০৫ সালে। সে বছর সিব্রুকের প্ল্যানিং বোর্ডের সদস্য নির্বাচনে চার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন তিনি। এরপর ২০০৬ সালে তিনি সিব্রুকের বাজেট কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ এবং ২০১১ সালে তিনি সিব্রুক বোর্ড অব সিলেক্টম্যান পদে নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি শহরটিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পানি পরিশোধন কেন্দ্র নির্মাণে ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি রিপাবলিকান পার্টির হয়ে অংশ নেন এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩ নভেম্বরের নির্বাচনেও তিনি এ পদে চতুর্থ বারের মতো নির্বাচিত হন।

আমেরিকা প্রবাসী আবুল বি. খান পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া শহরের সম্ভ্রান্ত খান পরিবারের সন্তান। জন্ম ১৯৬০ সালের ১ মার্চ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সহকারী সচিব মাহাবুব উদ্দিন খান কাঞ্চন এবং শাহানারা বেগমের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বাশারই সবার বড়। ছোট বোন রোজী খান অস্ট্রেলিয়ায় এবং পরিবারের বাকি সদস্যগণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

আবুল ১৯৭৬ সালে ঢাকার মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৭৮ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে তিন বছর অধ্যয়নের পর ১৯৮১ সালের ১০ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেখানেই স্থায়ী হন। ১৯৮৪ সালে আবুল বাশার পিরোজপুরের মেয়ে মর্জিয়া হুদা খানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে এ দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ছেলের নাম আতিক খান ও মেয়ের নাম নুসরাত জাহান।

সর্বশেষ খবর