ভারতের গুজরাট রাজ্যের ভাবনগর জেলার মাহুবা শহরে ১৯২৫ সালে এক জৈন পরিবারে জন্ম বলবন্ত পারেখের। তার দাদা ছিলেন নামকরা আইনজীবী। নিজের ইচ্ছা ভিন্ন হলেও পরিবারের ইচ্ছায় আইন পাস করতে হয় বলবন্তকে। কিন্তু জেনে বুঝে মিথ্যা বলার ব্যাপারটা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না তিনি। ফলে পেশা ছেড়ে বেকার হয়ে পড়লেন। তখনই বিয়ে করলেন কান্তাবেন নামে এক মহিলাকে। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, খাওয়া ছিল না তখন। উপায় না পেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন এক বন্ধুর গুদামঘরে। শুরু করেন পিয়নের কাজ। কিছু দিন যাওয়ার পর পিয়নের চাকরি ছেড়ে আরেক বন্ধুর সাহায্যে বিদেশ থেকে সাইকেল, পেপার ডাই- এসব জিনিস আমদানি করে ব্যবসায়ীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া শুরু করেন। ব্যবসায় বেশ ভালো লাভ হলো। কয়েক মাসের মধ্যেই স্ত্রীকে নিয়ে মুম্বাইয়ের নিজস্ব ফ্ল্যাটে উঠে গেলেন।
১৯৫৪ সালে ভাই সুশীলের সঙ্গে মুম্বাইয়ের জেকব সার্কল-এ পারেখ ডাইকেম ইন্ডাস্ট্রিজের যাত্রা শুরু। সেখানে কাপড় রঙের জিনিসপত্র তৈরি হলেও মাথায় তখনো নতুন ব্যবসার আইডিয়া। কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে পিয়নের কাজ করার সময় দেখেছেন, কাঠ জোড়া লাগানোতে অনেক কষ্ট। আর সেখানে যে আঠা ব্যবহার করা হতো তা থেকে প্রচ- দুর্গন্ধ বের হয়। তখন পারেখ সুগন্ধি আঠা তৈরির পরিকল্পনা করেন। কে জানত এই ছোট্ট আইডিয়াটি বদলে দেবে পারেখের জীবন? জন্ম হবে ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সফল কোম্পানির? ১৯৫৯ সালের দিকে পারেখ সিনথেটিক রাসায়নিক ব্যবহার করে আঠা তৈরির উপায় আবিষ্কার করলেন। এরপর ভাইয়ের সঙ্গে পিডিলাইট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেখান থেকে বাজারজাত হয় সুগন্ধি আঠা ‘ফেভিকল’। বাজারে আসার পর ফেভিকল ভারত তথা আশপাশের দেশগুলোয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ফেভিকল দিয়ে যাত্রা শুরু করা বলবন্তের কোম্পানি পিডিলাইট এখন ২০০-এর বেশি ধরনের জিনিস তৈরি করে। আমেরিকা, থাইল্যান্ড, মিসর এবং বাংলাদেশেও কারখানা খুলেছে পিডিলাইট। সিঙ্গাপুরে গড়ে উঠেছে গবেষণা কেন্দ্র। এখন কোম্পানি চালাচ্ছেন বলবন্ত পারেখের ছেলে মধুকর পারেখ। রিপোর্ট বলছে, তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩.১ বিলিয়ন ডলার।