শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

জ্যোতি বসুর পৈতৃক বাড়ি এখন পর্যটন কেন্দ্র

নির্বাচনে তাঁর দল বারবার বিজয়ী হয়েছিল। এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে অভূতপূর্ব। ২৪ বছর মুখ্যমন্ত্রিত্ব করার পর তিনি দায়িত্বটি তুলে দেন তাঁরই দলের কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর হাতে

সোনারগাঁ প্রতিনিধি

জ্যোতি বসুর পৈতৃক বাড়ি এখন পর্যটন কেন্দ্র

ইতিহাসের এক মহানায়কের নাম কমরেড জ্যোতি বসু। বাংলাদেশের প্রতি যার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও দুর্বলতা ছিল সবসময়। এ কিংবদন্তির শৈশব কেটেছে বাংলাদেশে। তাঁর পৈতৃক ভিটা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদীতে। নাড়ির টানে ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টন বিষয়ে ঢাকায় আসেন জ্যোতি বসু। সম্প্রতি জ্যোতি বসুর পৈতৃক বাড়িটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। পর্যটন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন।

১৯১৪ সালের ৮ জুলাই কলকাতায় জন্ম নেওয়া এই মানুষটি শৈশবে সোনারগাঁয়ে অনেক দিন কাটিয়েছেন। ১৯৮৭ সালের ৩০ জানুয়ারি এবং সর্বশেষ ১৯৯৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি পৈতৃক বাড়িতে আসেন। তাঁর ডাকনাম ছিল গনা। পিতা নিশিকান্ত ছিলেন এক প্রথিতযশা ডাক্তার এবং মা হেমলতা ছিলেন গৃহবধূ। ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন জ্যোতি বসুর বাড়িতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২২ সালে। প্রকল্পের জন্য ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হলেও এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

জানা যায়, জ্যোতি বসুর হাতেখড়ি শুরু হয় ধর্মতলার লরেটো ডে স্কুল দিয়ে ১৯২০ সালে। এরপর ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে বিএ পাস করেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। তাঁর পরিবারের মধ্যে স্বদেশী ও ব্রিটিশবিরোধী চেতনাবোধ ছিল, যা স্বাভাবিক কারণেই বালক ও তরুণ জ্যোতি বসুর মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল। তাঁর পিতার সঙ্গে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কলকাতায় সুভাষ চন্দ্র বসুর সভায় গিয়েও তিনি পুলিশি হামলার শিকার হন। কলকাতার পড়াশোনা শেষে তিনি লন্ডন যান ব্যারিস্টারি পড়তে। বিলাত থেকে ব্যারিস্টার হয়ে দেশে এলেও তিনি এই পেশায় যুক্ত হননি। হয়ে ওঠেন কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী। বিলাতে থাকাকালীন তিনি ব্যারিস্টারি পাস করার পাশাপাশি মার্কসবাদে দীক্ষাগ্রহণ করেন। ব্যারিস্টার জ্যোতি বসু দেশে ফিরে আসেন কমিউনিস্ট হয়ে। কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ তাঁকে কমিউনিস্ট হিসেবে কাজ করার পথ দেখান। ১৯৭৭ সাল থেকে টানা ২৪ বছর জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। নির্বাচনে তাঁর দল বারবার বিজয়ী হয়েছিল। এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে অভূতপূর্ব। ২৪ বছর মুখ্যমন্ত্রিত্ব করার পর তিনি এই দায়িত্বটি তুলে দেন তাঁরই দলের কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর হাতে। ২০১০ সালে জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে পৈতৃক বাড়ি সোনারগাঁয়ের বারদীতে একটি গ্রন্থাগার করার ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১ সালের ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে গ্রন্থাগারের নির্মাণকাজ শুরু করে।  যার প্রথম তলায় রয়েছে পাঠাগার কক্ষ, মহাফেজখানা ও শৌচাগার। দ্বিতীয় তলায় জাদুঘর ও সেমিনার হলো। ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্যোতি বসু স্মৃতি পাঠাগার ও জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

সর্বশেষ খবর