শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পথচলা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পথচলা

বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করে আলোচিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে রয়েছে শিশুদের এক  টাকায় আহার, বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম, এক টাকায় চিকিৎসাসহ নানা উদ্যোগ। সংগঠনটি চলতি বছর পেয়েছে একুশে পদক।

 

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করে আলোচনায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে রয়েছে শিশুদের এক টাকায় আহার, বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম, এক টাকায় চিকিৎসা, এক টাকায় আইনি সহায়তা ও অনাথ শিশুদের জন্য আশ্রম।

সম্প্রতি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সম্পত্তি, আয়-ব্যয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্মকান্ড নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনের চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস।

তিনি বলেন, ‘মানুষের পাশে থাকার জন্য, সেবা করার জন্য আমার ছোট একটা প্রতিষ্ঠান করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এত বড় প্রতিষ্ঠান হবে সেটা ভাবিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি শেয়ার করা হয় মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য। সেখানে ভুলবশত অলঙ্কারের কিছু ছবি শেয়ার করা হয়েছে। এটা দুর্ঘটনা এবং এটা স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশও করেছি। কিন্তু জায়গা-জমি, অডিট রিপোর্ট নিয়ে যে প্রোপাগান্ডা চলছে সেগুলো নিয়ে কষ্ট লাগে। অভিযোগ থাকলে আইনের আশ্রয় নিতে পারে, অভিযোগ তদন্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সত্য-মিথ্যার প্রমাণ দিতে পারে। কিন্তু এভাবে মিথ্যাচার সত্যি কষ্টদায়ক। আমার পক্ষে তো বারবার প্রমাণ দেওয়া সম্ভব নয়। আমি চাই একটা ভালো প্রতিষ্ঠান থাকুক। কিন্তু এটাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে তা আমি বিশ্বাস করি না। মানুষ না চাইলে ভালো কাজ থাকবে না।’

বিদ্যানন্দের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ২২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ‘পড়বো, খেলবো, শিখবো’ স্লোগানে যাত্রা করে বিদ্যানন্দ। এর প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু ভিত্তিক একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

শিক্ষা, পুষ্টি ও মানসিক ও শারীরিক সহায়তার মাধ্যমে দুস্থ-পীড়িত মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলে মানবকল্যাণমূলক কাজই এর লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠার পর দুস্থ মানুষের জন্য এক টাকায় আহার, এক টাকায় চিকিৎসা, বিনামূল্যে একাডেমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং, বৃত্তি কর্মসূচি, শিশুদের জন্য ফটোগ্রাফি, নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রশিক্ষণের মতো মানবসেবী নানা কর্মকান্ডের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে বিদ্যানন্দ। সমাজসেবা বিভাগে সংগঠনটি একুশে পদক পেয়েছে। বঙ্গবাজারের পোড়া কাপড় থেকে বানানো অলঙ্কারের ছবি হিসেবে ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ছবি ফেসবুকে শেয়ারের পর এ বছর একুশে পদক পাওয়া সংগঠনটিকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। ওই ঘটনার পর তাদের অন্যান্য কার্যক্রম, সম্পদ ও আয়-ব্যয় নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠছে নানা প্রশ্ন। এসব বিষয়ে কিশোর কুমার দাস বলেন, ‘বিদ্যানন্দে দেশ-বিদেশ থেকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ সহায়তা দেন। তাদের আস্থা অর্জনের জন্য আমি অডিট করেছিলাম। অথচ এই অডিট রিপোর্ট নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এগুলো নিয়ে মন খারাপ হয়।’

পাহাড়ের জমি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়টি তুলে ধরেছি। পাহাড়ের জমির মালিকানা প্রজেক্ট (শতভাগ আদিবাসী অনাথ শিশুর জন্য এতিমখানা) শেষে মূল মালিকের কাছে ফিরে যাবে। আমি চুক্তিপত্রের ছবি তুলে ধরেছি সেখানে শর্তগুলো দেখতে পাবেন। কক্সবাজারের রামুর জমিটি নগদ অর্থে তখনকার বাজার মূল্যে কেনা। যদি জমি বিক্রেতা আজও সে জমি ফেরত চান, তবে বিক্রীত মূল্য পরিশোধ করে (ডিপ্রিশিয়েশন অ্যাডজাস্ট করে) জমিটি ফেরত নিতে পারবেন। আমরা এটা নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বললে, তিনি ফেরত নিতে রাজি হননি। এ নিয়ে তার পরিবারের একজন মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছে, যেটাকে পরিবারের কর্তা এড়িয়ে যেতে বলেছিলেন। বিদ্যানন্দের জমিগুলোর মালিকানা বিদ্যানন্দের, আমার নামে নয়। বিদ্যানন্দের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সাইন করতে পারে। বিদ্যানন্দের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের টাকা একাধিক স্বাক্ষরে উঠে এবং দেশে না থাকার জন্য আমার সাইন ব্যবহার হয় না।’

মজিদ চাচা ও গরুর ছবি নিয়ে যে বিতর্ক সে সম্পর্কে কিশোর কুমার দাস বলেন, ‘মানুষকে উৎসাহিত করতে সাধারণত ছবি দেওয়া হয়। রূপক নাম ব্যবহার হয় পেজের পোস্টে। মজিদ চাচা নয়, আপনি সুলতান, রহিমা কিংবা কলিম চাচা নামেও অনেক পোস্ট পাবেন। গ্রামের নামগুলো সাধারণত কমন হয় এবং বিখ্যাত মানুষের নামেই থাকে। একই ইভেন্টের ছবি একাধিক পোস্টে দেওয়া হয়। যেমন- গরু কেনা হয়েছে, গরু প্রসেস করা হয়েছে, রান্না হচ্ছে, আহার করছেন ইত্যাদি। বিদ্যানন্দের কাছে দাতব্য কাজটি অভিযাত্রার মতো। শুধু লক্ষ্যটা মুখ্য নয়, যাত্রাপথে আপনাদের সঙ্গী করতে চাই। এগুলো নিয়ে যেসব কথাবার্তা চলছে তাদের জন্য ঘণ্টায় ঘণ্টায় আমার পক্ষে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। যারা এসব প্রচার করছে তাদের প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ কিংবা হিংসা নেই। তারা অজ্ঞতা থেকে কাজগুলো করছে। আমরা চাই মানুষের স্বাভাবিক গুণাবলি বিকশিত হোক।’

সর্বশেষ খবর