মেক্সিকোর ক্যাম্পেচে অঞ্চলের ঘন অরণ্যে দীর্ঘ ১,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাচীন মানব সভ্যতার ইতিহাস লুকিয়ে ছিল। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পেচে অঞ্চলকে মায়া সভ্যতার জন্য এক ‘অজানা অধ্যায়’ হিসেবে দেখে এসেছেন। এই অঞ্চলটি বেলিজ, এল সালভাদর, গুয়াতেমালা ও দক্ষিণ-পূর্ব মেক্সিকোতে বিস্তৃত মায়া লো-ল্যান্ডস অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত, যেখানে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সাল থেকে খ্রিস্টাব্দ ১৫০০ সাল পর্যন্ত মায়া জাতির বসবাস ছিল।
তবে সম্প্রতি ক্যাম্পেচের এই অজানা অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেখানে হাজারো নতুন মায়া স্থাপনা ও একটি বৃহৎ শহর আবিষ্কার করেছেন, যার নাম তারা ‘ভ্যালেরিয়ানা’ রেখেছেন। এই শহরটি একটি লেগুনের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা জার্নাল Antiquity-তে সোমবার প্রকাশিত হয়েছে।
এই আবিষ্কারের মূল কৌশল ছিল আধুনিক প্রযুক্তি - লিডার (LiDAR), যা ৩২০০ কিলোমিটার দূর থেকে ক্যাম্পেচের ঘন অরণ্য স্ক্যান করে ভূ-প্রকৃতির নিচে লুকানো প্রাচীন স্থাপনাগুলি চিহ্নিত করেছে। ২০১৩ সালে মেক্সিকোর নেচার কনজারভেন্সি সংস্থা অরণ্য জরিপের জন্য এই লিডার প্রযুক্তির সাহায্যে ক্যাম্পেচের ৪৭ বর্গ মাইল এলাকা স্ক্যান করেছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা ভ্যালেরিয়ানার বিশাল কাঠামো ও অন্যান্য নগর কেন্দ্রের নিদর্শন চিহ্নিত করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে একটি জলাধার, বল খেলার মাঠ, মন্দির পিরামিড এবং চওড়া রাস্তা যা বিভিন্ন চত্বরকে সংযুক্ত করেছে। গবেষণায় মোট ৬,৭৬৪টি স্থাপনা শনাক্ত করা হয়েছে, যা বিভিন্ন আকারের নগর ও গ্রামীণ অঞ্চলে বিস্তৃত। এই অঞ্চলের বসতির ঘনত্ব মায়া লো-ল্যান্ডসের অন্যান্য পরিচিত স্থানের সাথে মিল রয়েছে, এবং ১৯৪০ সাল থেকেই গবেষকরা ধারণা করছিলেন যে ক্যাম্পেচের গভীর অরণ্যে বহু মায়া নিদর্শন লুকিয়ে আছে।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং তুলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের গবেষক লুক অল্ড-থমাস বলেন, এটা একদিকে বিস্ময়কর ছিল, অন্যদিকে আমি যা আশা করেছিলাম তা-ই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তার ধারণা ছিল যে মায়া লো-ল্যান্ডসের এই অংশে যেকোনো স্থানে অনুসন্ধান চালালে নগর কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া সম্ভব।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল