রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাসই আমাদের বড় অনুপ্রেরণা

বিপ্লব কুমার রায়, সিইও, টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড

মানিক মুনতাসির

গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাসই আমাদের বড় অনুপ্রেরণা

টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার রায় বলেছেন, ২০০৭ সালে ছোট্ট পরিসরে বাংলাদেশ ও ভারতের দুই কোম্পানির যৌথ মালিকানায় এ দেশে ব্যবসা শুরু করে টিভিএস। আজ আমরা দেশের মোটরসাইকেল মার্কেটের ২২ থেকে ২৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছি। একক কোম্পানি হিসেবে মোটরসাইকেলের জগতে টিভিএসের অবস্থান দ্বিতীয়। এর জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন আমাদের গ্রাহকরা। কেননা গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাসই আমাদের এত দূর নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, রেগুলার মোটরসাইকেলের পাশাপাশি আমাদের দুটি স্কুটারও বাজারে চলে। স্কুটারের জগতে আমরাই নেতৃত্ব দিচ্ছি। আজকের এই যাত্রা গ্রাহকের সন্তুষ্টি, সময়োপযোগী মডেল এবং টেকনোলজির অ্যাডভান্সমেন্টকে সমন্বয়ের কারণে আমরা গ্রাহকদের আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। সারা দেশে আমাদের রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক। আমাদের রয়েছে ২৪০টি থ্রিএস ডিলারশিপ, ২০০ এর মতো পার্সের স্টক আউটলেট, ১০০০ সার্টিফাইড সার্ভিস পয়েন্ট (সিএসপি) রয়েছে। যেগুলো ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপিত। এসব পয়েন্টে কাজ করে প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠাই। আমাদের স্লোগান হচ্ছে “কম তেলে বেশি চলে”। আমরা আমাদের কমিটমেন্ট রক্ষার শতভাগ চেষ্টা করি। বিপ্লব কুমার বলেন, সময়ের ব্যবধানে গ্রাহকের কথা চিন্তা করে সেগমেন্টওয়াইজ আমরা প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন মডেল নিয়ে আসি। সেরা সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করি। আজকে বাংলাদেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি মডেল রয়েছে টিভিএসের। আন্তর্জাতিকভাবে যেসব ব্র্যান্ড এখানে আছে তারমধ্যে এন্ট্রি লেবেল মড থেকে এপাচি পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই আমাদের বিচরণ। বিপ্লব কুমার বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করছি। যেসব মডেল আমরা বিক্রি করি এর সবই আমাদের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। প্রত্যেক কোম্পানিরই উচিত স্থানীয় উৎপাদনকে প্রাধান্য দেওয়া। আমরা যদি আমদানিনির্ভরতা কমাতে পারি এবং ভ্যাট-ট্যাক্স সিস্টেম আরও ফ্লেক্সিবল করতে পারি তাহলে আরও সাশ্রয়ী মূল্যে মোটরবাইক দিতে পারতাম গ্রাহকদের।

২০০৭ সালে ছোট্ট পরিসরে বাংলাদেশ ও ভারতের দুই কোম্পানির যৌথ মালিকানায় এ দেশে ব্যবসা শুরু করে টিভিএস...
আপনি জানেন, মোটরসাইকেল শিল্প এখন একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। ভিয়েতনাম বা ইন্দোনেশিয়াতে প্রতি তিনজনে একজন মোটরবাইক ব্যবহার করেন। অথচ আমাদের এখানে প্রতি ৯৩ জনে একজন ব্যবহার করেন মোটরবাইক। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও প্রতি ২৫ জনে একজন মোটরবাইক ব্যবহার করেন। এই অপরচুনেটিটা আমরা মিস করেছি। গত বছর এপ্রিল-জুন প্রতি মাসে ৬০ হাজার পিস মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে অথচ এখন সেটা নেমে এসেছে ২৪ হাজারে। এর জন্য অনেক কারণ রয়েছে। যেমন- নীতিনির্ধারণী মহল মনে করেন মোটরসাইকেল মানেই দুর্ঘটনা। এটা একটা নেতিবাচক প্রচারণা। তাঁর মতে, মোটরসাইকেলের জন্য যেসব নীতিমালা করা হচ্ছে সেটা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। এমন তো নয় যে, মনে চাইল আর একটা পলিসি ঘোষণা করে দিলেন অথচ তা অ্যাডপ করা গেল না। ফলে নীতিমালা হতে হবে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত। আমরা খুব একটা ভালো অবস্থার মধ্যে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সেখানে ধস নেমেছে। নীতিমালাটি সংশোধন করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটাকে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। আমরা কখনো কখনো মোটরবাইকের দুর্ঘটনাকে ফলাওভাবে প্রচার করি। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণ কখনো অনুসন্ধান করি না। সেটা করলেও তো সচেতনতা বাড়ানো যেত। আরেকটা বিষয় হলো- এসব দুর্ঘটনা কিন্তু মোটরসাইকেল চালকরা ঘটাননি। বরং তাদের ধাক্কা মারা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, ওভার স্পিডে চালানোর জন্যও হয়তো কিছু কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটা দুঃখজনক।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনা কমাতে হলে সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এরপর আইনের সঠিক প্রয়োগ হতে হবে। আইনের প্রয়োগ ছাড়া কোনো সমাধান হবে না। ফাইনের কোনো বিকল্প নেই। এই মার্কেটে কোম্পানিগুলো অন্তত ৮/১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে। লাখো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

মোটরবাইকে বিপুলসংখ্যক রাইড শেয়ার হচ্ছে। এখানেও লাখো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৫ লাখ পরিবার তো রাইড শেয়ারিংয়ের ওপর টিকে আছে। মানুষ এটাতে ঝুঁকছে- কারণ আমাদের এখানে পাবলিক পরিবহনের কোনো মানই নেই। মানুষ পাবলিক পরিবহনে আস্থা রাখতে পারে না।

তিনি বলেন, এই শিল্পের সম্ভাবনাও আছে বিপুল। এ জন্য প্রয়োজন রিটেইল ফাইন্যান্স। এখানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে নীতিগত সহায়তা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে এই দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে ভ্যাট ট্যাক্সের জায়গাগুলো আরও ফ্লেক্সিবল (সহনশীল) করতে হবে।

সর্বশেষ খবর