রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

শততম টেস্টে জয়ের হাতছানি

মেজবাহ্-উল-হক

শততম টেস্টে জয়ের হাতছানি

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বলে লাকমলের বিপক্ষে আউটের জোরালো আবেদন মুশফিক, সাকিব, সাব্বিরের। আম্পায়ার আলিমদার সেই আবেদনে সাড়া দেননি। তবে দিন শেষে স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে টাইগাররা —এএফপি

কলম্বোর পি সারা ওভাল স্টেডিয়ামে গতকাল ইনিংসের শেষ বলে মঞ্চস্থ হলো এক নাটক! কেন্দ্রীয় চরিত্রে পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিমদার। যিনি ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিয়ে ভারতকে জিতিয়ে দিয়েছিলেন!

গতকাল মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বলে জোরালো আউটের আবেদন জানান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। আম্পায়ার মাথা ঝুঁকিয়ে জানিয়ে দিলেন ‘সবুজ সংকেত’! আলিমদারের দিকে তাকিয়ে ড্রেসিং রুমের পথে পা বাড়ালেন লঙ্কান ব্যাটসম্যান সুরঙ্গা লাকমল। সেকেন্ডের ব্যবধানে কী যেন ভেবে হাত ওঠাতে ধরেও আটকে গেলেন পাকিস্তানি আম্পায়ার। আলিমদারের এমন আচরণে হতাশ বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। রিভিউ চাইলেন মুশফিক। থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত— লাকমল নটআউট! সঙ্গে সঙ্গে দিনের খেলা শেষ। কিন্তু আলিমদারের রহস্যময় আচরণের কারণ কী?

লাকমলকে দেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান টিভি আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাসের ‘নটআউট’ সিদ্ধান্ত নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। কেননা বল লাকমলের থাইয়ে লাগার আগেই ব্যাটে স্পর্শ করেছিল! শব্দও হয়েছিল। এমন আউটের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে প্রয়োজন হয় ‘স্নিকো মিটার’ ও ‘হট স্পট’। কিন্তু কাল টিভি আম্পায়ার কোনো ব্যবহার না করেই যেন ‘মনগড়া’ সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন! তবে মাঠের আম্পায়ার আলিমদার শেষ মুহূর্তে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে ‘স্নিকো মিটার’ ও ‘হট স্পট’ ব্যবহার করতে বাধ্য হতেন ইরাসমাস!

সে যাই হোক তারপরও শততম টেস্টে জয় দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও ইতিমধ্যে ১৩৯ রানের লিড নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এখনো তাদের হাতে রয়েছে দুই উইকেট। আজ বাংলাদেশের একটাই কাজ দ্রুত আউট করে দেওয়া। তারপর সতর্কভাবে ব্যাটিং করা।

মুশফিকদের খেলতে হবে পঞ্চম দিনে। টেস্টে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কাজ হচ্ছে শেষ দিনে ব্যাটিং করা। কিন্তু সুখবর হচ্ছে, পি সারা ওভালের উইকেট এখনো খুব বেশি ভাঙেনি। তা ছাড়া এই ভেন্যুতে চতুর্থ ইনিংসে ৩৫২ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও আছে। ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ১ উইকেটে জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ২০১০ সালে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২৫৭ রান তাড়া করে জিতেছিল ভারত। তাই বাংলাদেশের অস্বস্তিতে ভোগার কারণ নেই।

গতকাল এক সময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ১২৯ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাটিং করতে নেমেও বড় লিড নেওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। কালকের প্রথম সেশনে দাপটের সঙ্গেই ব্যাটিং করেছেন তারা। কিন্তু দিনের দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের দুই বোলার মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসানের জাদুতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে লঙ্কানদের ইনিংস। স্কোর বোর্ডে ১৪৩/১ থেকে হয়ে যায় ২১৭/৭। সাকিব ও মুস্তাফিজ তিনটি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের পথে নিয়ে গেছেন।

তবে কাল সে াতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দারুণ ব্যাটিং করেছেন লঙ্কান ওপেনার দিমুথ করুণারত্নে। তিনি একাই খেলেছেন ১২৬ রানের ইনিংস। তা ছাড়া লঙ্কানদের ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ রান এসেছে মেন্ডিসের ব্যাট থেকে। দিন শেষে লঙ্কানদের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ২৬৮।

গতকাল উইকেটের পেছনে দারুণ তৎপর ছিলেন মুশফিকুর রহিম। যদিও আগের দিন একটি ক্যাচ মিস করেছেন। কিন্তু গতকাল লুফে নিয়েছেন চার চারটি অসাধারণ ক্যাচ। গতকাল ১০০ ডিমিশালের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন টাইগার দলপতি।

তবে সব মাইলফলকই ম্লান হয়ে যাবে যদি বাংলাদেশ শততম এই টেস্টে জিতে যায়! অধিনায়ক হিসেবে নতুন উচ্চতায় উঠে যাবেন মুশফিক। ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে লেখা হয়ে যাবে বাংলাদেশের নাম।

টেস্টের ইতিহাসে শততম টেস্টে জয়ের রেকর্ড বেশি নেই। ভারত, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশও নিজেদের শততম টেস্টে হেরে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কা তো এই কলম্বোতেই নিজেদের শততম টেস্টে পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হেরে গিয়েছিল। তবে শততম টেস্টে জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। আজ বাংলাদেশ জিতে গেলে চতুর্থ দল হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর