বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঊষাকে ঘিরে যত প্রশ্ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ঊষাকে ঘিরে যত প্রশ্ন

ঘরোয়া হকির সেরা আসর প্রিমিয়ার লিগ হচ্ছে। অথচ মাঠে ঊষা ক্রীড়াচক্রের মতো জনপ্রিয় ক্লাব নেই। আবাহনী, মোহামেডান, ঊষা ও মেরিনার্স। বাংলাদেশের হকির সেরা চার দল। সবাই আছে শুধু নেই ঊষা। যা শুধু বিস্মিত নয়, ক্রীড়ামোদীদের ব্যথিত করেছে। হকির আরেক পরাশক্তি দল ছিল পুরান ঢাকার মাহুতটুলি। যারা স্বাধীনতার পর প্রথম লিগে প্রথম চ্যাম্পিয়ন। আশি দশকে এই ক্লাব কিনে নেন হকির কিছু নিবেদিত সংগঠক। যার নাম হয় ঊষা ক্রীড়া চক্র। এই ক্লাব হকি ছাড়া অন্য খেলায় অংশ নেয় না। হকিকে ঘিরেই এ ক্লাবের সংগঠকরা গর্বিত।

আশি দশকে ঘরোয়া হকিতে আত্মপ্রকাশ ঊষার। শুরু থেকেই শক্তিশালী দল গড়ে ক্রীড়াঙ্গনে সু-পরিচিত হয়ে ওঠে ক্লাবটি। সাফল্য পেতে বেশি সময়ও লাগেনি। ২০০২ সালে লিগে মোহামেডান-আবাহনীর দাপট ভেঙে ঊষা শিরোপার ঊৎসব করে। চারবার লিগ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে তাদের। ক্লাব কাপও জিতেছে চারবার। কত খেলোয়াড় ঊষা থেকে তারকার খ্যাতি পেয়েছে তার হিসাব মেলানো মুশকিল। এখনো চোখে ভাসে সাদেক-কামালের জুটির স্ট্রিকের জাদু। ঊষার পক্ষে তারা গোল করে রেকর্ড ভেঙেছেন আর গড়েছেন। হকির সেই সু-পরিচিত ক্লাব ঊষা প্রিমিয়ার লিগে খেলছে না তা কি ভাবা যায়?

দলবদলে অংশ না নেওয়ায় পরিষ্কার হয়ে যায় ঊষা এবার ঘরোয়া আসরে খেলবে না। কথা হচ্ছে যে ক্লাব দেশের হকিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। তারা কেন লিগ খেলছে না? অনেকে বলেন, এখানে মূল কারণ ফেডারেশন নির্বাচন। ঊষার সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ শিকদার নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদকের প্রার্থী ছিলেন। অনেক আগে থেকেই তিনি প্রচার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিলেন। নির্বাচনের বদলে অ্যাডহক কমিটি গঠনেই ঊষার যত গোস্বা। তাহলে কি দলের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থটাই বড় হয়ে গেল? ঊষার মতো জনপ্রিয় দল একবারও হকির স্বার্থটা ভাবল না?

এ ব্যাপারে গতকাল কথা হয় দেশের সাবেক তারকা খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামালের সঙ্গে। অনেক দলে খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও হকিতে কামাল তারকার খ্যাতি পেয়েছে ঊষা থেকেই। বর্তমানে তিনি ক্লাবটির ক্রীড়া সম্পাদকের পাশাপাশি হকি দলের ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন।

কামালও স্বীকার করলেন, চার বড় দলের ঊষা একটি। লিগে তাদের অনুপস্থিতি হকিপ্রেমীদের ব্যথিত করেছে। কিন্তু ঊষা মনে-প্রাণে চেয়েছিল লিগ খেলতে। কামাল বলেন, ‘ঊষা মহল্লাভিত্তিক দল। এলাকার ব্যবসায়ীদের ডোনেশনে প্রতিবছরই দল গড়া হয়। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য ছিল তারা আমাদের সহযোগিতা করবে ঠিকই, একটু সময় লাগবে। তাই আমরা লিগ কমিটির সেক্রেটারি পিলা ভাইয়ের কাছে চিঠি দিই দলবদল এক মাস পিছিয়ে দিতে। এক মাস না হোক অন্তত ১৫ দিন পেছালেও আমরা খেলতে পারব। দেখেন অতীতেও ক্লাবগুলোর অনুরোধে দলবদল পেছানো হয়েছে। অথচ এবার যেদিন আমরা চিঠি দিলাম তার তিন ঘণ্টার মধ্যে লিগ কমিটির সেক্রেটারি পাল্টা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, দলবদল পেছানো সম্ভব নয়। ঊষা না খেললে বাইলজ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার বসার প্রয়োজন মনে করল না। তাহলে আমরা কি ধরে নেব? গতকাল অবশ্য মনিরুজ্জামান পিলা বলেন, ‘আমি শুধু এতটুকুই জানিয়েছি দলবদল পেছানো সম্ভব নয়। রেলিগেশনের কথা উল্লেখই করিনি।’

কামাল বলেন, ‘এখন একটা দল গড়তে কম করে হলেও ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা খরচ পড়ে। এমন ফান্ড না থাকার পরও আমরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করি। অসীম, নাইম ও ইমনকে কিছু টাকা পেমেন্ট করি। পরে তারা তা ফেরতও দিয়ে দেয়। ওমানে যারা খেলতে যায়, তাদের সঙ্গে আলোচনা করি। বলেছি কিছু টাকা লাগলে বলো ওখানে আমাদের লোক আছে তারা দিয়ে দেবে। আমাদের ভাবনা ছিল পড়ে তো ডোনেশন পাবোই। তার আগে ধরে রাখতে খেলোয়াড়দের অল্প টাকা অগ্রিম দিয়ে রাখি। ঊষার যদি খেলার ইচ্ছা নাই থাকত তাহলে কি এমন তৎপরতা দেখাতাম। আমাদের অনুরোধকে পাত্তাই দিল না। এ অবস্থায় না খেলা ছাড়া আমাদের বিকল্প কোনো পথ ছিল না।’

বাইলজে আছে লিগ বয়কট করলে দল রেলিগেটেড হবে। সেক্ষেত্রে ঊষা আগামী মৌসুমে প্রথম বিভাগে নেমে যাবে। এই প্রসঙ্গে কামাল বলেন, ‘অতীতে অনেক ক্লাব শুধু লিগ বয়কট করেনি। হকি স্বার্থবিরোধী কাজও করেছে। কই তাদের কি শাস্তি দেওয়া হয়েছে? ঊষার বিরুদ্ধে ফেডারেশন ব্যবস্থা নিতেই পারে। তখন আমরাও তো বসে থাকব না। অবস্থা বুঝে কি করা যায়, তা সিদ্ধান্ত নেব।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর