শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

অনুপযুক্ত ভেন্যু ঝুঁকিতে ফুটবল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

অনুপযুক্ত ভেন্যু ঝুঁকিতে ফুটবল

শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের বেহাল দশা

পেশাদার ফুটবল লিগে দলগুলোর নিজস্ব ভেন্যু ও অনুশীলন মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক। ফিফা বা এএফসির নির্দেশনায় তাই বলে। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় তা ব্যতীক্রম। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ মাঠে গড়িয়েছে। দেখতে দেখতে ১০টি আসর পার হয়ে গেছে। এবার মাঠে গড়িয়েছে লিগের এগারতম আসর। ২০০৭-২০১৯, এই এক যুগ একেবারে কম সময় নয়। তারপরও পেশাদার লিগে পেশাদারিত্বে দেখা মিলছে না। ফিফার নিয়মে পেশাদার লিগের দলগুলোর জিম ও সুইমিংপুলও রয়েছে। থাকতে হবে জুনিয়র দলও।

জিম কিংবা সুইমিংপুলতো বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর কাছে কাল্পনিক ব্যাপার। অনেক দলেরই নিজস্ব অনুশীলন ভেন্যু নেই। এ মাঠ ও মাঠে যাযাবরের মতো ঘুরতে হয়। শুরুর দিকে ঢাকা ছাড়াও পেশাদার লিগ হতো চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটে। পরবর্তী সময়ে গোপালগঞ্জ ও ময়মনসিংহে লিগের আয়োজন হয়। গেল দুই মৌসুম পেশাদার লিগ ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। অবশ্য এক্ষেত্রে বাফুফে বা লিগ কমিটি ছিল অসহায়। কেননা অব্যবস্থাপনার কারণে কোনো দলই ঢাকার বাইরে খেলতে চায়নি। বাফুফে তা নীরবভাবে মেনে নিলেও ফিফা এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।

তারা বাফুফেকে কড়া নির্দেশনা দেয় কোনোভাবেই এক ভেন্যুতে লিগ আয়োজন করা যাবে না। যদি তাদের নির্দেশনা না মানা হয় তাহলে শুধু ক্লাব নয় ফেডারেশনকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। এতেই নড়েচড়ে বসে বাফুফে। দুই বছর পর এবারে বেশ কটি ক্লাব হোম ভেন্যু হিসেবে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলাকে বেছে নেয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ছাড়াও আরও পাঁচ জেলায় পেশাদার লিগ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে করে ক্লাব বা বাফুফে প্রশংসা পেতেই পারে।

ঢাকার বাইরে ফুটবল প্রায় হারাতে বসেছিল। সেখানে দেশের ফুটবলের সেরা আসর চলছে। পেশাদার লিগ যেন ঢাকা লিগে পরিণত হয়েছিল। এতে করে ফুটবলপ্রেমীরাও বিরক্ত হয়ে উঠে। একসঙ্গে ছয় জেলায় লিগ আয়োজন করাটা চাট্টিখানি কথা নয়। কথা হচ্ছে ঢাকার বাইরে কিভাবে লিগ হচ্ছে সেই খবর ক্রীড়ামোদীরা নয়, স্বয়ং লিগ কমিটির কর্মকর্তারা খোঁজখবর রাখেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ঢাকার বাইরে যাওয়ার পেছনে বড় অবদান বসুন্ধরা কিংসেরই। গতবার চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই ক্লাবটির সভাপতি ইমরুল হাসান ঘোষণা দেন পেশাদার লিগে তাদের হোম ভেন্যু হবে নীলফামারী। সেই থেকে তারা শেখ কামাল স্টেডিয়ামের পরিচর্যা শুরু করে দেয়। গ্যালারি ও প্রেস বক্সও সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। ঢাকার বাইরে বাকি ভেন্যুগুলো কি খেলার জন্য উপযুক্ত?  বিশেষ করে নোয়াখালী ভেন্যু নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিজেএমসি ও নোফেলের হোম ভেন্যু হলেও দুই দল একেবারে মাঠের পরিচর্যা করেনি। মাঠে ঘাস নেই বললে চলে। পাথরের মতো শক্ত মাটিতে খেলা হচ্ছে। মাঝে আবার ক্রিকেট পিচ। মঙ্গলবার বসুন্ধরা কিংসের কোচ মাঠের বেহাল দশা দেখে ভীষণ বিরক্ত। অস্কারে কথা এমন বাজে মাঠে কিভাবে পেশাদার লিগ হয় ভাবতেই পারছি না। দুই পোস্টে বাঁশ দিয়ে জাল লাগানো হয়েছে। কোনমতে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে মাঠে খেলোয়াড় ও কোচের বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে গতকাল কথা হয় বাফুফে গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান অভিজ্ঞ সংগঠক ফজলুর রহমান বাবুলের সঙ্গে। তিনি আবার ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য।

বাবুল বলেন, খুশি করার মতো সংবাদ দিতে পারছি না। এ ব্যাপারে আমি নিজেও হতাশ। কেননা দেশের ১ নম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামই লিগ আয়োজনে পুরোপুরি উপযুক্ত নয়। সেখানে ঢাকার বাইরের কথা আর কি বা বলবো। তবে নীলফামারী, সিলেট ও ময়মনসিংহের মাঠ তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো। বসুন্ধরা কিংস আগে থেকেই পরিচর্যা নিয়েছে বলে মাঠকে সেভাবে তৈরি করতে পেরেছে। গোপালগঞ্জও চলে। যত কথা নোয়াখালি নিয়েই।

ঢাকার বাইরে মাঠ নিয়ে অনেকে অভিযোগ তুলছে। অনুশীলনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নাকি নেই। এই দায়িত্ব কি গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যানের ওপর পড়ে না? বাবুল বলেন, ‘অবশ্যই আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কেননা মাঠ কমিটির প্রধান হিসেবে আমার দায়িত্ব অনেক।

মাঠ পরিচর্যার দায়িত্ব কার? বাবুল বলেন, অবশ্যই যাদের হোম ভেন্যু তাদের। অর্থাৎ ক্লাবগুলোর। স্থানীয় জেলা ক্রীড়াসংস্থা কিংবা জেলা ফুটবল সংস্থার দায়িত্ব ক্ষীণ। যদি নিজ থেকে কিছু করে তাহলে ভিন্ন কথা। ক্লাবগুলোর দায়িত্ব নিয়েও কিছু কথা আছে। তারা যে হোম ভেন্যু চাইলো তা লিগ আয়োজনের জন্য উপযুক্ত কিনা তা তদারকির দায়িত্ব লিগ কমিটির। তারা কি কোনো ভেন্যু পরিদর্শনে গেছেন? তাদের কাজ কি শুধু ঢাকায় বসে বৈঠক করা? গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হলেও আমাকে কি সহযোগিতা করা হচ্ছে? মাঠের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস চেয়েও পাওয়া যায় না।’

যার ভেন্যু তারই মাঠ প্রস্তুত করার কথা। কিন্তু ক্লাবগুলোও পাল্টা বলেছে মেনে নিচ্ছি হোস্ট হিসেবে দায়িত্ব অনেক। আমাদের সীমাবদ্ধতার কথাও তো ভাবতে হবে। দল গড়তেই হিমশিম খাচ্ছি। বাকি টাকা পাব কোথায়। বাফুফে তো বকেয়া অর্থও শোধ করছে না। সত্যি বলতে কি যে অবস্থা মাঠ নিয়ে একে অপরের পাল্টা অভিযোগই শোনা যাচ্ছে। এর কি কোনো সমাধান নেই।

যে মাঠ বুট পড়ে হাঁটায় যায় না। সেখানে ঝুকি নিয়ে খেলছে ফুটবলাররা। বড় ধরনের ইনজুরির শিকার হলে দায়িত্ব নেবে কে?

 

সর্বশেষ খবর