বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা ব্যাটসম্যান কে?
এ প্রশ্নে কেউ বলতে পারেন সাকিব আল হাসান, কেউ বা বলবেন হয়তো ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ খ্যাত মুশফিকুর রহিমের কথা! কিন্তু তামিম ইকবাল? হ্যাঁ, অবশ্যই পরিসংখ্যান কথা বলবে ড্যাসিং ওপেনারের পক্ষে!
২০৪ ওয়ানডে ম্যাচে ৩৫ দশমিক ৫২ গড়ে করেছেন ৬৮৯২ রান। ১১টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৪৭টি হাফসেঞ্চুরি।যে সাদা পোশাকে বাংলাদেশ দল এখনো হাবুডুবু খাচ্ছে সেখানেও দারুণ পারফর্ম করে চলেছেন ড্যাসিং ওপেনার। ৫৮ টেস্টে ৩৮ দশমিক ৯৮ গড়ে করেছেন ৪৩২৭ রান। ৯ সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ২৭টি হাফ সেঞ্চুরি। পাশাপাশি একটি ডাবল সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ২০৬ রানের ইনিংসটি ছিল দেখার মতো।
আন্তর্জাতিক টি-২০তে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ন এই তামিম। আর ঘরোয়া টি-২০র কথা চিন্তা করলে, সবার আগে সামনে চলে আসবে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগের গত আসরের ফাইনালে ঢাকার বিরুদ্ধে কুমিল্লার হয়ে খেলা হার না মানা ১৪১ রানের ইনিংসটি।
সেই তামিম ছন্দ হারিয়ে দিন দিন হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছেন! ২০১৯ সালটা ড্যাসিং ওপেনারের কাছে বড় ‘অপয়া’! এই বছরে তার বলার মতো কোনো পারফরম্যান্স নেই। ছন্দপতনের শুরু ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে।
ড্যাসিং ওপেনার নিজেই বলেছিলেন, বাংলাদেশের পরই খেলতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ইংল্যান্ডে। তার কথায় যথেষ্ট যুক্তিও ছিল। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখান। পরের ম্যাচে ম্যানচেস্টারেও আরেক সেঞ্চুরি করেছিলেন। তারপর ২০১৭ সালের ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওভালে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেন। একই আসরের পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও খেলেছিলেন ৯৫ রানের আরেকটি অনবদ্য ইনিংস।
সেই তামিমই কিনা এবার বিশ্বকাপে গিয়ে সুপার-ফ্লপ! সেঞ্চুরি তো দূরের কথা পুরো সিরিজে হাফ সেঞ্চুরি মাত্র একটি, নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।
হতাশা থেকে কাটিয়ে উঠতে বিশ্বকাপের পর পরই শ্রীলঙ্কা সফরে গেলেন তামিম। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি ছিলেন না। সহঅধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বিশ্রামে। তাই নেতৃত্বের গুরু দায়িত্ব তামিমের কাঁধে চেপে যায়। আর এই সফরেই কিনা তিনি ব্যর্থতার ষোলোকলাপূর্ণ করে দেশে ফেরেন।
তামিমের নেতৃত্বে তিন ম্যাচ ওয়ানডের সিরিজে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ। আর ড্যাসিং ওপেনারও ব্যর্থ তিন ম্যাচেই। তিন ইনিংসে তার স্কোর ০, ১৯, ২।
ইংল্যান্ড থেকে ফিরে চেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায় দাপুটে পারফর্ম করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে। কিন্তু ঘটে গেল উল্টো ঘটনা। তামিম যেন একেবারে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়ে গেলেন শ্রীলঙ্কায় গিয়ে।
তারপর ইনজুরির কথা বলে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন। ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজেও ছিলেন না তামিম। এমনকি ভারত সফর থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিলেন দেশসেরা এই ওপেনার।
গত জুলাইয়ের পর যদিও জাতীয় লিগের একটি ম্যাচ খেলেছিলেন। আহামরি কিছু করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে দারুণভাবে শুরু করেও ৪৬ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ৩০ রান।
তবে ম্যাচ না খেললেও ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেননি তামিম। ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন। আগের চেয়েও ওজন কমিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগে খেলতে নেমেছেন যেন অন্য এক তামিম! যে তামিম আগের চেয়েও অনেক বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী।
কিন্তু ফলাফল কি? ঢাকা প্লাটুনের হয়ে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচে তো দুই অঙ্কের কোটাই ছুঁতে পারলেন না। মাত্র ৫ রানেই তাকে ফিরে যেতে হয়েছে ড্রেসিংরুমে। আউট হয়েছেন আবু জায়েদ রাহীর বলে।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই তামিমের উইকেট হারিয়ে গতকাল বড় ইনিংসই গড়তে পারেনি ঢাকা প্লাটুন। মাত্র ১৩৪ রানেই গুটিয়ে যাচ্ছে তাদের ইনিংস। তারপর ম্যাচে কোনো লড়াই-ই চোখে পড়েনি। ঢাকার বিরুদ্ধে রাজশাহী রয়্যালস জিতে যায় ১০ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
হারের জন্য অধিনায়ক মাশরাফি ব্যাটসম্যানদেরই দায় দেখছেন। দ্রুত উইকেট না পড়লে নাকি এমন উইকেটে ১৬০-১৭০ রান অনায়াসেই হয়ে যেত।
যেহেতু ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি তাই তামিমও দায় থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। যতই দিন যাচ্ছে তামিমের ব্যর্থতার তালিকাটাও দীর্ঘ হচ্ছে! আন্তর্জাতিক-ঘরোয়া কিংবা প্রস্তুতি ম্যাচ- সব মিলে শেষ ১০ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরি নেই ড্যাসিং ওপেনারের। তাহলে কি তামিম ইকবাল ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন?
ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্ক মাশরাফি বিন মর্তুজা গতকাল একবাক্যেই সব কিছু পরিষ্কার করে দিলেন, ‘তামিমকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ঢাকা প্লাটুন : ১৩৪/৯ (২০ ওভার) (এনামুল ৩৮। আবু জায়েদ ২/৪৩)।
রাজশাহী রয়্যালস : ১৩৬/১ (১৮.২ ওভার) (হযরতউল্লাহ জাজাই ৫৬*)।
ফল : রাজশাহী ৯ উইকেটে জয়ী।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ১৪৪/৬ (২০ ওভার) (মুক্তার আলী ২৯। ফ্রাইলিঙ্ক ১/২১)।
খুলনা টাইগার্স : ১৪৬/২ (১৩.৫ ওভার) (রহমতউল্লাহ ৫০, রুশো ৬৪*)।
ফল : খুলনা ৮ উইকেটে জয়ী।