মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আলো ছড়ালেন লিটনই

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আলো ছড়ালেন লিটনই

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পাকিস্তান সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল এক দশক আগে, ২০১১ সালে। বর্তমান বাংলাদেশ স্কোয়াডে ওই টেস্টের একমাত্র প্রতিনিধি মুশফিকুর রহিম। এক দশক আগে সাবেক অধিনায়ক দেখেছিলেন দলের ইনিংস হার। এক দশক পর চট্টগ্রামে ফের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। চতুর্থদিন শেষে টেস্টের যে চিত্র, তাতে পরিষ্কারভাবে জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাবর আজমের পাকিস্তান। তবে অনিশ্চয়তা খেলা ক্রিকেট বলে এখনো স্বপ্ন দেখছে টাইগাররা। যদি কিছু হয়! এজন্য আজ শেষ দিন প্রথম ইনিংসের মতো জাদুকরি বোলিং করতে হবে তাইজুল ইসলামকে। বাঁ হাতি স্পিনার না পারলেও জ্বলে উঠতে হবে মেহেদী হাসান মিরাজকে। দুই স্পিনারের প্রতিপক্ষ গুঁড়িয়ে দেওয়ার বহু নজির আছে। চট্টগ্রামে অবিশ্বাস্য কিছুর দিকে তাকিয়ে টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় একাই আলো ছড়িয়েছেন লিটন দাস। 

শীতে খেলা বলে বাধা হচ্ছে আলো। প্রথম থেকে শুরু করে চতুর্থদিন-প্রতিদিনই আলোর স্বল্পতায় খেলা বন্ধ হয়েছে নির্ধারিত সময়ের আগে। গতকাল খেলা বন্ধ হয়েছে ৫৬ মিনিট আগে। বন্ধ হওয়ার আগেই টেস্টে চালকের আসনে বসে পড়েছে পাকিস্তান। ২০২ রানের টার্গেটে দুই ওপেনার অবিচ্ছিন্ন থেকে ১০৯ রান তুলে ফেলেছে। অবশিষ্ট ৯৩ রানের টার্গেটে আজ খেলতে নামবেন ৫৬ রানে অপরাজিত থাকা আবিদ আলি ও ৫৩ রানে অপরাজিত থাকা আবদুল্লাহ শফিক। গতকালের শেষ সেশন ছাড়া আগের ১১ সেশনে দুই দলের দিকে কখনো, না কখনো হেলেছিল টেস্ট। গতকাল পুরোটা দিন নিজেদের করে নিয়েছেন শাহীন আফ্রিদি, হাসান আলি, সাজিদ খানরা। তৃতীয় দিন স্কোর বোর্ডে ৩৯ রান তুলতে উপরের সারির চার ব্যাটার হারিয়ে পুরোপুরি কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল মুমিনুল বাহিনী। সেখান থেকে দলকে ফেরাতে লড়াই করেছেন লিটন ও অভিষিক্ত ইয়াসির রাব্বি। দলীয় ৯০ রানে আফ্রিদির বাউন্সারে হেলমেটে আঘাত পেয়ে আহত হন ইয়াসির। এরপর মাঠের বাইরে চলে যান অভিষিক্ত ক্রিকেটার। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর জানা যায় মাথার আঘাত গুরুতর নয়। তারপরও ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ইয়াসিরকে। আহত হওয়ার আগে ইয়াসির ব্যাট করছিলেন ৩৬ রানে। অভিষেক ইনিংসে আউট হয়েছিলেন ৪ রানে।

প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও পুরোপুরি ব্যর্থ উপরের চার ব্যাটার। বিশেষ করে দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও সাইফ হাসান স্কোর বোর্ডে যোগ করেন যথাক্রমে ১৯ ও ১৪ রানের জুটি। লাল বলে সুইংয়ের বিপক্ষে সাবলীল নন সাইফ। ৬ টেস্টের ১১ ইনিংসে সব মিলিয়ে রান করে ১৫৯। সর্বোচ্চ ৪৩। চট্টগ্রামে রান করেছেন ১৪ ও ১৮। আগের ৮ টেস্টে সেঞ্চুরি রয়েছে সাদমানের। কিন্তু চট্টগ্রামে চলতি টেস্টে রান করেছেন ১৪ ও ১। ব্যর্থ হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দুই ইনিংসে রান যথাক্রমে ১৪ ও ০। টাইগাররা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন অধিনায়ক মুমিুনলের ব্যর্থতায়। চট্টগ্রামে যার সেঞ্চুরি ৭টি, এবার দুই ইনিংসে একবারও দুই অংকের রান করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে ৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হয়েছেন ০ রানে। উপরের চার ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতার মাঝেও উজ্জ্বল লিটন। প্রথম ইনিংসে চাপের মুখে ২৬ টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন লিটন। ১১৪ রানের পর গতকাল খেলেন ৫৯ রানের লড়াকু ইনিংস। ৮৯ বলের ইনিংসেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে সংগ্রহ ১৫৭ রান।

প্রথম ইনিংসের এগিয়ে থাকা ৪৪ রান ও দ্বিতীয় ইনিংসের ১৫৭, সফরকারীদের টার্গেট দেওয়া হয় ২০২ রান। পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবিদ ও আবদুল্লাহ শফিক অবিচ্ছিন্ন থেকে যোগ করেন ১০৯ রান। দুজনেই দিন পার করেছেন হাফসেঞ্চুরি তুলে। অভিষিক্ত শফিক প্রথম ইনিংসে ৫২ রানের পর গতকাল অপরাজিত রয়েছেন ৫৩ রানে। প্রথম ইনিংসে ১৩৩ রানের ইনিংস খেলা আবিদ খেলছেন ৫৬ রানে। দুই ওপেনারের দৃঢ়তার পরও টাইগারদের মূল ভরসা এখন তাইজুল-মিরাজের ঘূর্ণি। প্রথম ইনিংসে বিনা উইকেটে ১৪৬ রান তোলার পর পাকিস্তান অলআউট হয়েছিল ২৮৬ রানে। তাইজুল নিয়ছিলেন ৭ উইকেট। আজ পঞ্চম দিন যদি আবারও ঘূর্ণি জাদু দেখাতে পারেন, তাহলেই অবিশ্বাস্যভাবে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের উৎসবে মাততে পারেন মমিনুলরা।

 

বাংলাদেশ : ৩৩০ ও ১৫৭ (লিটন ৫৯, ইয়াসির ৩৬;

শাহিন আফ্রিদি ৫/৩২, সাজিদ খান ৩/৩৩)।

পাকিস্তান : ২৮৬ ও ১০৯/০ (৩৩ ওভার)

(আবিদ আলি ৫৬*, আবদুল্লাহ শফিক ৫৩*)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর