এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রধান সমস্যা কোথায়?
সাকিব আল হাসানের বিশ্রাম, নাকি ‘মানসম্মত’ ক্রিকেটার তৈরি করতে না পারার ব্যর্থতা!
সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল কিংবা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এখন শেষের দিকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ‘পাইপলাইনে’ তাদের বিকল্প ক্রিকেটার নেই।
সিনিয়র ক্রিকেটাররা যদি কেউ মাঝেমধ্যে কোনো সিরিজে খেলতে না চান তাতে বোর্ডের খুশি হওয়ার কথা। কারণ, নতুন ক্রিকেটারদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেওয়ার দারুণ একটা সুযোগ সেটা। কিন্তু সেই সুযোগটা নিতে পারছে না বিসিবি।
কারণ, একটাই! বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দুর্বলতা। সব সময় কেবলমাত্র তাৎক্ষণিক ফলকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে চরম ঝামেলায় পড়ে গেছে।
এ কারণে হঠাৎ কোনো সিরিজে সিনিয়রদের কেউ খেলতে না চাইলে যেন বিসিবির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আর এই অধিক নির্ভরতার কারণে সিনিয়র ক্রিকেটাররাও যাচ্ছেতাই সিদ্ধান্ত বিসিবির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। বিসিবি যতই হম্বিতম্বি করুক না কেন তা মানতে বাধ্য হচ্ছে। পাইপলাইন শক্ত করতে না পারায় বিসিবি যে অসহায়!
ক্রিকেটের বড় দেশগুলোর দিকে তাকান, চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেউ এক ম্যাচ না খেললে পরের ম্যাচে তার সুযোগ পাওয়াই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গত অ্যাশেজ সিরিজে দেখা যায়, অসি তারকা ওপেনার ট্রেভিস হেড ব্রিসবেনে ১৫২ রানের ক্যারিশম্যাটিক ইনিংস খেলে দলকে জেতালেন। পরের টেস্টের আগে করোনা পজিটিভ হয়ে দল থেকে ছিটকে গেলেন। তারপর সিডনি টেস্টে সুযোগ পেয়ে ওসমান খাজা ইনিংসে দুর্দান্ত দুই সেঞ্চুরি করে নির্বাচকদের বিপদে ফেলে দিলেন। কারণ, হেড ফেরার পর তাকে দলে নেবেন কিভাবে? তার বদলি হিসেবে নামা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করা খাজাকে তো আর পরের টেস্টে বাদ দেওয়া যায় না!
ভারত, ইংল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা দলেও এমন ঘটনা অনেক আছে। একবার কেউ সুযোগ হারালে বদলি কেউ এসে এতো ভালো খেলছেন যে ওই ক্রিকেটারের ফেরাই দুষ্কর হয়ে পড়ছে। কারণ, তাদের পাইপলাইন এত শক্তিশালী যে সবাই কেবল সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন।
সেখানে বাংলাদেশ চলছে উল্টো পথে। নিয়মিত পারফর্মারদের কেউ কোনো কারণে খেলতে না চাইলে দলের কম্বিনেশনই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের পাইপলাইন যে ‘লেফাফা দুরস্ত’ তার পরিষ্কার একটা চিত্র ফুটে উঠেছে সব শেষ যুব বিশ্বকাপেই। আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন দলটি এবার অনেক কষ্টে হলো আট নম্বর। অথচ দলই নাকি জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ।
পাইপলাইনের দুর্বলতার কারণে সাকিবের বিশ্রাম নিয়ে এত হইচই। একের পর এক নাটকীয় ঘটনাও ঘটছে। সাকিব জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য মানসিক এবং শারীরিকভাবে প্রস্তুত নন। সিদ্ধান্তটি বিসিবির মনঃপূত হয়নি। তারপরও যেন অনেকটা বাধ্য হয়ে গতকাল বিসিবি তাকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিসিবি পরিচালনা কমিটির মিটিং শেষে ক্রিকেট অপারেশন্সের প্রধান জালাল ইউনুস বলেন, ‘আমরা চাই সাকিব সব সংস্করণের ক্রিকেটেই খেলুক। কিন্তু সে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে বিশ্রাম চেয়েছে। তাকে চাপ দেওয়া ঠিক হবে না। সে কথা বিবেচনা করেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’