শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ফাইন লেগ দিয়ে বিশাল ছক্কা। একই ওভারের চতুর্থ বলে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে বল আঁচড়ে ফেললেন গ্যালারিতে। পঞ্চম বলে ডাবল রান নিয়ে মিরাজ পৌঁছে যান ৯৯ রানে। ইনিংসের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে সেলিব্রেশন করেন বাংলাদেশের এই ‘সারপ্রাইজ’ ব্যাটসম্যান।
ওয়ানডেতে মিরাজের প্রথম সেঞ্চুরি। সেটিও মাত্র ৮৩ বলে। তবে মেহেদী হাসানের মিরাজের এই ইনিংসটি যে কতটা ঝড়ো গতির ছিল তা স্কোর বোর্ডের শুরুর দিকে তাকালেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায়। গতকাল মাত্র ৬৯ রানেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। টাইগারদের ব্যাটিং তখন খাদের কিনারে। বলা যায় খাদেই পড়ে গেছে।
১৯ ওভারেই সাজঘরে ফিরেছেন ছয় তারকা সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, আফিফ হোসেন। এরপরই শুরু হয় মিরাজের ক্যারিশমা।
শেষ পর্যন্ত নাটকীয়তার পর ৫ রানে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়। এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করেন টাইগাররা। ক্যারিশম্যাটিক পারফরম্যান্স করে দুই দ্বিতীয় ম্যাচে সেরা মেহেদী হাসান মিরাজ।
ম্যাচ শেষে এই তারকা বলেন, ‘আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সেরা দুই ম্যাচ। সেরা দুই ইনিংস। এই সিরিজ জয়ের কথা আমি কখনো ভুলতে পারব না।’
জাতীয় দলে মিরাজের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল বোলার হিসেবে। টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার ঘূর্ণি জাদুতে প্রথম জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এখন সেই মিরাজ ব্যাট হাতে দেখাচ্ছেন দাপট। তার ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিংয়ের ছায়ার যেন বোলিং পারফরম্যান্স অনেকটাই ঢেকে গেছে।
কিভাবে বোলার মিরাজ হয়ে গেলেন পুরাদস্তুর ব্যাটসম্যান? ‘একটা সময় তো মনে হচ্ছিল আমি বুঝি ব্যাটিংই করতে পারি না। কিন্তু কিছুদিন আগে আমাকে ওপেনিংয়ে ট্রাই করা হচ্ছিল। ব্যাটসম্যান হিসেবে টিম ম্যানেজমেন্ট আমার ওপর আস্থা রেখেছিল, তখনই আমার আত্মবিশ্বাসটা আসে।’
প্রথম ম্যাচে ১৩৬ রানে ৯ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মুস্তাফিজকে নিয়ে ৪১ বলে ৫১ রানের ক্যারিশম্যাটিক জুটি করে ম্যাচ জিতেছেন। আর গতকাল ৬৯ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সপ্তম উইকেট জুটিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে গড়েন ১৪৮ রানের দারুণ এক জুটি। ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি। সপ্তম উইকেটে দ্বিতীয় সেরা জুটি। তবে সব মিলে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সপ্তম উইকেট জুটিতে এক চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ।
দুই ম্যাচের কোনোটিকেই এগিয়ে বা পিছিয়ে রাখতে চান না মিরাজ, ‘আমার দুই ইনিংস দুই রকম। দুটি দুই রকম সেরা। তবে বাংলাদেশের হয়ে ভালো কিছু করতে পারছি এটাই বড় কথা।’
মিরাজের কালকের হার না মানা ১০০ রানের ইনিংসে ছিল আটটি বাউন্ডারির সঙ্গে চারটি বিশাল ছক্কা। প্রথম ম্যাচেও ৩৮ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে দারুণ একটা জয় এনে দিয়েছিলেন।
কাল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৭৭ রানের ইনিংসটাও ছিল দারুণ কার্যকরী। ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তিনি ছিলেন বাইশগজে আস্থার প্রতীক হিসেবে। মিরাজকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইনিংসকে ধ্বংসস্তূপ থেকে যেন টেনে তুলেছেন।
এক ম্যাচ আগেই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলল বাংলাদেশ। তবে সিরিজ জয়ের পরও আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন না ক্রিকেটাররা। কারণ, এখনো সিরিজের আরেকটি ম্যাচ বাকি। টাইগারদের টার্গেট ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে ব্যবধান ৩-০ করা।
মিরাজের ভাষ্য, ‘এখনো সিরিজের আরেকটি ম্যাচ বাকি আছে। আমরা চাই শেষের ম্যাচটিও জিততে। সামনে বিশ্বকাপ। যদি তার আগে আমরা র্যাঙ্কিংয়ে চারে যেতে পারি তাহলে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি থাকবে। বিশ্বকাপে ভালো খেলতে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে।’
এই সিরিজ জয়ে অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করলেন লিটন দাস। নিয়মিত অধিনায়ক তামিমের অনুপুস্থিতিতে দায়িত্ব পেয়ে বাজিমাত করে দিলেন। লিটন বলেন, ‘আমার খুবই ভালো লাগছে। ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’