ক্রিকেটে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই মানে বাড়তি উত্তেজনা। ফুটবলেও একই অবস্থা। ট্র্যাজেডি হচ্ছে, ফুটবলে দুই দেশের মান প্রায় সমান হলেও ভারতের বিপক্ষে পেরে উঠছে না। না জেতাটা বাংলাদেশের যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ১৯৭২ সালে ঢাকা একাদশ নাম দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দল ভারতের বিখ্যাত ক্লাব মোহনবাগানের মুখোমুখি হয়েছিল। ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে কাজী সালাউদ্দিনের গোলে মোহনবাগানকে পরাজিত করেছিল ঢাকা একাদশ। ভারতীয় জাতীয় দলের আট খেলোয়াড় নিয়ে গড়া দলের বিপক্ষে জয়টা বেশ আলোড়ন তুলেছিল। ভারতীয় পত্রপত্রিকায় ঢাকা একাদশ ও সালাউদ্দিনের প্রশংসা করা হয়েছিল। ভারতের বিখ্যাত ফুটবল বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, ‘ভারতের সঙ্গে এশিয়া ফুটবলে বাংলাদেশও শক্ত অবস্থান নিতে সক্ষম হবে।’বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ বাস্তবে রূপ নেয়নি। বাংলাদেশ তো বটেই, ভারতও এশিয়া ফুটবলে নজর কাড়তে ব্যর্থ। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, দুই দেশের জাতীয় দলের যে কোনো টুর্নামেন্টে ভারতের সামনে বাংলাদেশকে বড্ড অসহায় লাগে। অথচ দলীয় শক্তি ও খেলোয়াড় খ্যাতির দিক দিয়ে ভারত যে খুব এগিয়ে তা-ও বলা যাবে না। তার পরেও জয়ের দিক দিয়ে প্রতিবেশী দেশটি বেশ এগিয়ে। ১৮ নভেম্বর ঢাকায় এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারতের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত পর্বে খেলার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেলেও ম্যাচটি ঘিরে এখনই উত্তেজনা লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রথম পর্বে শিলিগুড়িতে গোলশূন্য ড্র ছিল ম্যাচ। ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা ঘরের মাঠে বাংলাদেশ হারাবে ভারতকে।
এত আশা হামজা, সামিত ও জায়ানকে ঘিরেই। আরেক প্রবাসী ফাহমিদুল কার্ডের কারণে ভারতের বিপক্ষে খেলতে পারবেন না। শিলিগুড়িতে হামজা খেলার পরও জেতা ম্যাচ ড্র করেছে বাংলাদেশ। ঢাকায় জিতবেই এ প্রত্যাশা সবারই। হামজা, সামিত ও জায়ানকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশের শক্তি এখন অন্য রকম। তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থানীয়রাও অপ্রতিরোধ্য। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশ দুই হার ও দুই ড্র করেছে। কিন্তু চারটি ম্যাচই জিততে পারত। হংকংয়ের সঙ্গে দুই ম্যাচ হাতছাড়া করেছে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে যেন বাংলাদেশ তাদের হাতে পুরো পয়েন্ট তুলে দিয়েছে। হংকংয়ের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে রাকিবরা যে নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন, তা গত ২০ বছরেও দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের এখন যে শক্তি তাতে যদি ভারতকে না হারাতে পারে তা হবে বড় ট্র্যাজেডি। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেও তপুদের ম্যাচ বাকি। আর তা হবে মার্চে। সত্যি বলতে কি, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতবে না হারবে-এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। সবার আগ্রহ ১৮ নভেম্বরের ম্যাচ নিয়ে। ভারতকে হারানো মানেই ফুটবলে নতুন প্রাণসঞ্চার। হামজা, সামিতরা কি জয় উপহার দিতে পারবেন না? সেই ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলে ভারতকে টাইব্রেকারে হারানোর পর আর হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ২২ বছরের আক্ষেপ কি এবার মোচন হবে না?